- বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ডিজিটালের ছোঁয়া
- চাহিদা বিশ্লেষণ করে আবাসন নির্মাণ করলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়- মো.শহীদুল ইসলাম ভুঞা পরিচালক, আবাসন পরিদপ্তর
বিভিন্ন দপ্তরের চাকরিজীবীদের ঢাকা শহরে সরকারি আবাসন বরাদ্দ পেতে ভোগান্তি-দুর্নীতির অভিযোগ বহু পুরানো। প্রত্যাশার তুলনায় আবাসনের সংখ্যা অতি নগণ্য। ফলে বাসা বরাদ্দ নিয়ে গড়ে উঠেছিল দালাল সিন্ডিকেট। তাদের তৈরি করা ঘুষ বাণিজ্যের প্রক্রিয়ার পথে না হাটলে মিলতো না সরকারি আবাসন। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। একদিকে, বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ডিজিটালের ছোঁয়া, অন্যদিকে আবাসন পরিদপ্তরের বর্তমান পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম ভুঞার স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দৃঢ় মানসিকতায় লাগাম পড়েছে অসাধু সিন্ডিকেটের শক্তিতে।
সূত্র মতে, সরকারি বাসা, অফিস কিংবা গ্যারেজ বরাদ্দ দিয়ে থাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘সরকারি আবাসন পরিদপ্তর’। বর্তমান সরকার গত মেয়াদে আজিমপুর, জিগাতলা, মিরপুর, তেজগাওসহ কয়েকটি সরকারি আবাসিক এলাকার কম উচ্চতার ভবন ভেঙে ২০ তলা ও ১২ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। তবুও সংকট পুরোপুরি কাটেনি।
আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে সরকারি ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেতে হাতে লেখা ফরমে আবেদন করতে হত। প্রায় বছর তিনেক আগে থেকে উঠে গেছে ম্যানুয়াল প্রক্রিয়া। এখন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেয়া হয়। আর চাকরির বয়স, বেতনসহ বিভিন্ন মান বিবেচনায় ওয়েবসাইট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম। নতুন ও পুরাতন বাসা, উভয় ক্ষেত্রেই অনলাইন পদ্ধতিতে বরাদ্দ হচ্ছে।
সূত্র বলছে, এতে করে ঘুষ লেনদেন কিংবা দালাল সিন্ডিকেটের কাছে ধর্ণা দেয়া থেকে মুক্তি পেয়েছেন সরকারি আবাসন প্রত্যাশিরা। পাশাপাশি- কে বরাদ্দ পাবেন, তা অনলাইন লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হওয়ায় এ নিয়ে কোনো ধরনের দ্বিধা কিংবা অস্বচ্ছতা থাকছে না। তবে শোনা যাচ্ছে ওই দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ বাণিজ্যে এখনো সক্রিয়। যে কারণে সরকারি বাসা পাওয়ার নতুন প্রক্রিয়া অবহিত করা এবং দালালমুক্ত থাকার সতর্ক বার্তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রচারণা দরকার।
ওই সূত্রের দাবি, আবাসন পরিদপ্তরের দীর্ঘ দিনের দুর্নাম ঘোচাতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভুঞা। তিনি পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পরই আবাসন বরাদ্দ পেতে ঘুষ বাণিজ্য, হয়রানির শিকারসহ অনেক অভিযোগের জনশ্রুতি রয়েছে বলে জানতে পারেন। এরপর তিনি পরিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সুনাম ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করলে অনেকেই তাতে সাড়া দেন। আবার দালাল সিন্ডিকেটে জড়িত অনেকে নাখোশও হন। তাতে নজর না দিয়ে স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী সহকর্মীদের নিয়ে শুদ্ধি অভিযানে নামেন শহীদুল ইসলাম। এরপর দালাল সিন্ডিকেটে জড়িতদের হুশিয়ার করেন।
আবাসন প্রত্যাশি পরিচয়ে পরিদপ্তরের একজন অফিস সহকারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, এখন আর আগের মত অবস্থা নেই। একটা সিন্ডিকেট আছে যারা কাজ করে দেবে বলে টাকা নেয়। আগে কাজ করতে পারতো তারা। দেখা যায় ১০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫ বা ৭ জনকে বরাদ্দ এনে দিতে পারতো। বাকিদের টাকা আত্মসাৎ করতো। কিন্তু এখন কোনো সুযোগই নেই। যদি কেউ বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে তাদের ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেন পরিচালক।
পরিদপ্তরের একজন পদস্ত কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, পরিচালক মহোদয় যোগদানের পর থেকেই এখানে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। শহীদুল ইসলাম যোগদানের পর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে চিহ্নিতরা অনেকটা নীরব হয়ে গেছেন। অনেকেই তার কাজে খুশি নয়।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) এ. এস. এম. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মন্ত্রী স্যারের ভাবনা হচ্ছে দপ্তরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা।’ স্যারের ভাবনা বুঝতে পেরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতি বেড়েছে। তাই সবাই ফিরছে স্বচ্ছতায়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক মো.শহীদুল ইসলাম ভুঞা বলেন, আবাসনের চাহিদা বিশ্লেষণ করে নির্মাণ করা হলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। যেমন- আলিগঞ্জে নির্মিত স্টাফ পর্যায়ে বাসার চাহিদা নেই, আবার আজিমপুরে ব্যাপক চাহিদা। নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেয়া দরকার।
একুশে সংবাদ/ব.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :