সাগর, পাহাড়, আর নদী যখন নীল আকাশের সাথে মিতালী পাতায় ঠিক তখনই বাংলা মায়ের আঁচলে ঢাকা সবুজ বন-বনানী আপন নীড়ে তাদের আলিঙ্গন জানায়। পলিমাটির এই বদ্বিপ অঞ্চল। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করে রেখেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত দুয়ার খুলে। এই খাতের উন্নয়নে বর্তমান সরকার যুগান্তকারী আয়োজনে সাজিয়েছে পর্যটন শিল্পকে। একুশ শতকের চাহিদার সাথে সমান্তরাল এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটন খাত। আবহমান কাল থেকে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লীলাভূমি এই বাংলা। নয়নাভিরাম দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি এখানে উদার। বাংলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এইদেশ এ-ই মাট বৈচিত্র্যময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপাখ্যান কে লালন করে আসছে।
বর্তমান সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক উন্নয়ন প্রভাব ফেলছে পর্যটনের বিকাশে। দেশের নানা প্রান্ত জুড়ে পর্যটনের বিকাশ ঘটছে। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এই শিল্পে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাঙালির ভাষা লোকজ সংস্কৃতি, পাহাড়-পর্বত, ঝর্ণা, গিরিখাত, মেঠোপথ, জনপদ, গহীণ অরণ্য, জীব-বৈচিত্র্য, সমুদ্র-সৈকত, নদ-নদী, বৈচিত্রময় জাতি, ধর্ম,বর্ণ, আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ও গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য,ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, পার্বণ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ, অতিথিপরায়ণ মানুষ। বিশ্বের যে কোন প্রান্তের যে কোন পর্যটককে আকৃষ্ট করার মত সকল উপাদানই এই দেশে বিদ্যমান। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে স্থানীয় জনসাধারণকে পর্যটন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে টেকসই পর্যটন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন,
জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ও আকর্ষণীয় এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুধু কক্সবাজারেই সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়া এই তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পার্ক তিনটির কাজ সমাপ্তির পর প্রতি বছরে এতে বাড়তি ২শ’ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কক্সবাজারের খুরুশকুলে শেখ হাসিনা টাওয়ার ও এথনিক ভিলেজ নির্মাণ কাজ চলছে । পর্যটকদের সহজ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিতে দেশের সব বিমান বন্দর উন্নয়নসহ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মানের কাজ চলছে। দেশের পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ দ্রুত অগ্রসরমান।
সরকারি পরিসংখ্যান :
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২০ সালে যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি, ২০২৩ সালে তা আড়াই কোটিরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। অথচ পাঁচ বছর আগেও এ সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ লাখ ছিল। আর ২০০০ সালের দিকে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত ১৫ লাখ মানুষ। আর পরোক্ষভাবে আরও ২৩ লাখ লোক এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে এ খাত। আর্থিক মূল্যে দেশীয় পর্যটন খাতের আকার দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকার।
পর্যটন শিল্পএখন পৃথিবী জুড়ে অগ্রাধিকার খাত:
সারা দুনিয়া জুড়ে বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত পর্যটন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম অগ্রাধিকার খাত। পর্যটনের সার্বজনীন গুরুত্ব রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন; যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবী ভ্রমণ করবেন। অর্থাৎ বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে। ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজমের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ, যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে। এছাড়া ২০১৭ সালে পর্যটকদের ভ্রমণখাতে ব্যয় হয়েছে ১৮৯৪.২ বিলিয়ন ডলার। আর একই বছর পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২.৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের ভুমিকা এই চিত্র থেকে অনেকটাই স্পষ্ট।
পর্যটন স্পটের সংখ্যা চিত্র :
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী জানা যায় , দেশে ২০১৭ সালে বিদেশি নাগরিক আগমন করেছেন ৫ লাখ ৬৬৫ জন। এছাড়া ২০১৮ সালে বিদেশি নাগরিক এসেছেন ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ জন। ২০১৯ সালে বিগত ১০ বছরে সর্বোচ্চ বিদেশি নাগরিক দেশে এসেছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ১৩১ জন। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সাল নাগাদ বিদেশি এসেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন। আর ২০২১ সালে বিদেশি নাগরিক এসেছেন শুধু ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন।
দেশে মোট ১ হাজার ৫১টি ট্যুরিস্ট স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। আকর্ষণীয় পর্যটন খাতে যেসব উপাদান থাকা দরকার যেমন-সমুদ্র, নদী, বন, পাহাড়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঋতুবৈচিত্র্য সবই বিদ্যমান রয়েছে বাংলাদেশে। সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা রয়েছে ৩১০টি। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য হাওড়-বাঁওড়-বিল। আছে সুবিশাল সমুদ্রতট। দেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
পর্যটন খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী,
পর্যটকদের পছন্দের বেড়ানোর তালিকায় এক নম্বরে আছে কক্সবাজার। পরের অবস্থানে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে সিলেট। হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারত ছাড়াও সিলেটের চা-বাগানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গাগুলোতে বেড়াতে যান পর্যটকেরা। এছাড়াও পছন্দের ভ্রমণ তালিকায় রয়েছে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, সেন্ট মার্টিন, পাহাড়পুর প্রভৃতি। ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঢাকার খুব কাছে গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টও এখন বেশ জনপ্রিয়। ভাওয়ালের সবুজ শ্যামল শাল গজারি বন ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা বুনোফুলের মৌ মৌ সৌরভ ভ্রমণ বিলাসীদের মন আকুল করে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের গারো পাহাড়, লখিন্দরের মন্দির, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী, রামসাগর, কান্তজীর মন্দির, সুকসাগর, পাহাড় পুর,উত্তরা ভবন, কুমিল্লার শালবনবিহার, রূপবানের মোড়া, এমন হাজারো লোকগাথার পর্যটন স্পট রয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর একমাত্র দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, যা আর পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১২০ কিমি. দীর্ঘ সৈকতটিতে কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বর্তমানে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতি বছর এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।
সমুদ্র ও পাহাড় একসঙ্গে দেখার সুযোগ থাকায় কক্সবাজার দেশীয় পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। আগে শীতের মৌসুমে বেশি ভিড় থাকলেও এখন প্রায় সারা বছরই কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনায় মূখর থাকে। পর্যটকদের আবাসন সুবিধার জন্য কক্সবাজারজুড়ে এখন ৫০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে পাঁচতারকা মানের হোটেল যেমন রয়েছে, তেমনই আছে কম খরচে থাকার ব্যবস্থা।
যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে :
সড়ক পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এখন চারলেনের মহাসড়ক নির্মাণ হওয়ায় পর্যটকরা যানজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আকাশ পথে বিমান চলাচল সহজলভ্য হওয়ায় সময় সাশ্রয় হয় কর্মজীবী মানুষদের। সবচেয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ট্রেন লাইন স্থাপন করেছে বর্তমান সরকার। যাতে করে অর্থ সাশ্রয় সহ নিরাপদ ভ্রমণের পরিবেশ তৈরি হয়েছে পর্যটকদের। আগে সড়ক পথে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ এবং সেখান থেকে নৌপথে সেন্টমার্টিন যেতে হত। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটারের যাত্রা পথে ছিল নানা ঝক্কি ঝামেলা সহ বিপদের হাতছানি। ২৩৬ কিলোমিটারের সাগর পথে সেন্টমার্টিন যেতে এখন নেই কোন ঝামেলা। বাড়তি পাওনা হিসেবে নদী সাগরের বিচিত্র রূপকে মুগ্ধতায় আলিঙ্গন করা যায় । রাতে সাগর পাড়ি দিয়ে ভোরে প্রবালদ্বীপে সমুদ্রে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সেন্টমার্টিন জেটির অদূরে নোঙ্গর করে ফেলবে এমভি বে-ওয়ান। জাহাজটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাসটার্মিনাল থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ছেড়ে যায়। শুক্রবার ভোরে সেন্টমার্টিন পৌঁছে আবার পরদিন শনিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
৭তলা বিলাসবহুল এই প্রমোদ তরিটি সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন ও লিফট সুবিধা সম্বলিত। ১হাজর ৮০০ আসনের জাহাজটিতে সাধারণ চেয়ার থেকে বিলাসবহুল কেবিন, সিভিউ ও রুফটপ বুফেট রেস্তোঁরাসহ একাধিক ট্রেডিশনাল রেস্তোঁরা, আইসক্রিম ও কফিবার, ব্রান্ড শপ সবই আছে। জাহাজ পরিচালনা ও পর্যটক সেবায় এই প্রমোদ তরিতে রয়েছে ১৬৭ জন নাবিক। এই কোম্পানীর সেন্টমার্টিন ক্রুজে করে সাগরবক্ষ থেকে গোটা প্রবালদ্বীপ, ছেড়াদ্বীপ, ঘোড়াদ্বীপ এবং নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে হয় বলে আন্তর্জাতিক মানের নৌনিরাপত্তা সম্বলিত এই জাহাজে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য রয়েছে লাইফ জ্যাকেট ও জীবনতরীসহ যাবতীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। বিশেষ করে সাগরে ঢেউ হলে জাহাজের তলদেশে থাকা দুইপাশে দুটিপাখা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে ঢেউয়ের মুখেও জাহাজ দুলতে পারে না। জানা গেছে, কক্সবাজারের মত বন্দরনগরী চট্টগ্রামকেও সরাসরি প্রবাল বেষ্টিত সেন্টমার্টিনের সঙ্গে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে আরো সম্প্রসারিত হল দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা। ২০২০ পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনের মধ্যে চালু হয় এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং চট্টগাম-সেন্টমার্টিন পাঁচতারকা মানের বিলাসবহুল জাহাজ এমভি বে ওয়ান। নদীর নাব্যতাসহ বিভিন্ন সংকট মোকাবেলা করে দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিঃ ২০২০ সালে ‘কর্ণফুলী ক্রুজলাইনের অধীনে শুরু করে অতি কাঙ্খিত ও স্বপ্নের এসব নৌরুটে জাহাজ চলাচল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ,
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ‘সি-প্লেন’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা সারা বছর যেতে পারবেন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে। তবে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সীমিত পর্যটক সেখানে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ জন্য সব পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
কমিউনিটি ট্যুরিজমসহ আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট :
পর্যটনের অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল যা পার্বত্য চট্টগ্রাম নামে অধিক পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম মূলত তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হল পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয়।
কমিউনিটি ট্যুরিজম- পথ দেখাচ্ছে দার্জিলিং পাড়া। বান্দরবানের রুমা উপজেলার বম জনগোষ্ঠীর এলাকা দার্জিলিং পাড়া ক্রমশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তুলনামূলক কম মূল্যে থাকা-খাওয়া যায় সেখানে। পর্যটকদের থাকার জন্য বাঁশ ও কাঠের তৈরি কটেজ ও ছোট ছোট টংঘর গড়ে তোলা হয়েছে। এসব পাড়ায় থাকলে একদিকে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পারেন, অন্যদিকে পাহাড়ে গ্রামীণ পরিবেশে প্রাণ-প্রকৃতিকে উপভোগ করার সুযোগ হয় তাদের।সেখানে সব মিলে প্রায় ৩০০ জন পর্যটকের থাকার সুবিধা রয়েছে। বাংলা ইংরেজি নববর্ষ ও ২ ঈদের সময় আবাসন সংকট তৈরি হয়। সে সময় খোলা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে পর্যটকদের রাত কাটাতে দেখা যায়। কেওক্রাডং পাহাড়ের পাদদেশেই রয়েছে দার্জিলিং পাড়া। অধিকাংশ পর্যটক কেওক্রাডং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে এই দার্জিলিং পাড়ার বিভিন্ন কটেজেই রাতযাপন করে থাকে।
পর্যটকদের হাওর বিলাস:
বাংলাদেশের হাওর অঞ্চল পর্যটনের আরেক সম্ভাবনার নাম। বাংলাদেশের জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এ সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। হাওর অঞ্চলের সাগরসদৃশ বিস্তীর্ণ জলরাশির এক অপরূপ মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় বসে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মায়ায় ভেসে বেড়াতে পারেন। হাওরের কোলঘেঁষে থাকা সীমান্ত নদী, পাহাড়, পাহাড়ি ঝরনা, হাওর-বাঁওড়ের হিজল, করচ, নল, খাগড়া বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানা প্রজাতির বনজ, জলজপ্রাণী আর হাওর পারের বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার মতো খোরাক মিলবে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের।
কয়েক বছর আগেও এই হাওরে ভ্রমণ, থাকা সবকিছুই ছিল বেশ কষ্টকর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে হাওর ভ্রমণের জন্য এখন মিলছে নানা সুযোগ-সুবিধা। আর এটি ভ্রমণকে করেছে সহজ ও আরামদায়ক। পর্যটকদের জন্য এখন সেখানে মেলে বিভিন্ন মানের হাউসবোট। সেই বোটগুলোতে থাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
ঢাকা শহরের মানুষদের সহজে বিশ্রাম আর আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করে দিতে শহরের কাছে কিন্তু কোলাহল থেকে দূরে বহু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। গাজীপুর, পূর্বাচলে মূলত এই রিসোর্ট গুলোর অবস্থান। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন বহু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন :
ভ্রমণ বিলাসী মানুষদের আকর্ষণ করে গহীন অরণ্য, স্রোতস্বিনী নদী, বিপদসংকুল জলাভূমি। এসব আকর্ষণের কারণে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র । সুন্দরবনে বাড়ছে পর্যটন নতুন নতুন পর্যটন স্পট। পুরোনো পর্যটন স্পটগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং নতুন আরো চারটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন এই চারটি পর্যটন স্পটের নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বিগত অর্থ বছরে সুন্দরবনের এই সাতটি পর্যটন স্পটে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন বিদেশি পর্যটক ছিলেন। ঐ অর্থ বছরে সরকার সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় করেছে।
পাঁচ তারকা হোটেল :
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগে দেশে পাঁচ তারকা হোটেল ছিলো মাত্র ২ টি। বর্তমানে এর সংখ্যা উন্নিত হয়েছে ১৭ তে। আরও হোটেল চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে। জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশের অনেক হোটেল মালিকরা নিজেদের হোটেলকে ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা হোটেল বলে দাবি করে থাকেন। অনেকে আবার ‘ফাইভ স্টার সমমানের সেবা’ শব্দটিও ব্যবহার করেন। এ নিয়ে অনেক সময় গ্রাহকরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। গড়ে পরতায় তাদের হোটেল গুলো বেশির ভাগই তিন তারকা মানের। সেবার মানও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নয়।
তৈরি হতে যাওয়া পাঁচ তারকা হোটেল গুলো পর্যটনের মানোন্নয়নে সহায়ক হবে :
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আগামী তিন বছরে ঢাকায় পাঁচ তারকা মানের নতুন ৪টি হোটেল হতে যাচ্ছে। নগরীর গুলশানে দ্বারোদঘাটন করতে চলেছে সুইসোটেল, তাজ, ভিভান্ত ও হিলটন ব্র্যান্ডের এসব হোটেল। এতে করে বেড়াতে ও কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় আসা বিদেশি ও স্থানীয় ভ্রমণকারীদের সুবিধা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :