- দখল ও দূষণে দেশের বেশিরভাগ নদী স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে
- এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ৪৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাংলাদেশের নদীর পানি
- সবচেয়ে দূষিত নদী গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং
- পরিশোধন যন্ত্র থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না
- সুন্দরবনের আশপাশের নদীতেও পাওয়া গেছে দূষণ
নদীমাতৃক পলিমাটির দেশ বাংলাদেশ। হাজার বছর ধরে যোগাযোগ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার এই দেশের নদনদী ও খাল। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত বাংলায় প্রাচীনকালে বাণিজ্য ও যোগাযোগের প্রধানমাধ্যম ছিল নৌপথ। তখন মৎস সম্পদে ভরা ছিল নদনদী -খালবিল। দেশে বর্তমানে এক হাজার ৮টি নদী ও ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ রয়েছে জানা গেছে বাংলাদেশ নদী কমিশনের জরিপে। দখল-দূষণে সেই নদী, নালা, খাল-বিলের অস্তিত্ব এখন মারাত্বক হুমকির মুখে।
দখল-দূষণে দেশের বেশিরভাগ নদী স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে নদী দখলের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। বস্তুত সারা দেশের নদী ও খালগুলোর তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা বিভিন্ন ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। নদী দূষণ বিষয়ে এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক এর তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ৪৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত বাংলাদেশের নদীর পানি। দূষণের ভয়াবহ শিকার শহরের পার্শ্ববর্তী নদীগুলো।
সুপ্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের পরিচয় ছিল নদীমাতৃক দেশ হিসেবে। সে পরিচয় ছাপিয়ে এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে ‘দূষিত নদীর দেশ হিসেবে’। বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর প্রায় সবগুলোতেই শিল্পবর্জ্য ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। দেশের ৫৬টি প্রধান নদ-নদীর ওপর সাম্প্রতিক করা এক গবেষণায় দেখা গেছে,
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত নদী গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর হাঁড়িধোয়া ও হবিগঞ্জের সুতাং। এ গবেষণায় ৫৬টি নদ-নদীতেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণের অস্তিত্ব মিলেছে, তবে তুলনামূলক বেশি দূষিত নদী ওই তিনটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, বুড়িগঙ্গা নদীর ২৫৮টি পয়েন্ট দিয়ে গৃহস্থালি পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। তুরাগ নদের ২৬৯টি এবং বালু নদের ১০৪টি ও টঙ্গী খালের ৬২টি পয়েন্ট দিয়ে কঠিনবর্জ্য এবং পয়োবর্জ্য নিঃসরিত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও অনেক দূষণ পয়েন্ট রয়েছে।
নদী দূষণের পাশাপাশি দখল ও ভরাটের কারণে অনেক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন সরু খাল ও মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সারা দেশে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও লক্ষ করা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানের পর আবারও শুরু হয় দখলের প্রতিযোগিতা। অনেক ক্ষেত্রে দখলদাররা তীরের সীমানা পিলার পর্যন্ত তুলে নিয়ে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারগোষ্ঠী ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদী রক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোনো সময় উদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
দেশে বিভিন্ন নদীর পানি কতটা দূষণের শিকার তা রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। শিল্প-কারখানার বর্জ্য যাতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হলেও এসব ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়মের চিত্র দেখা যায়। অভিযোগ রয়েছে,
পরিশোধন যন্ত্র থাকলেও কোনো কোনো কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন না করে সরাসরি তা ফেলে দেয়া হয়। এতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করার সুযোগ তৈরি হয়। কোনো কোনো রাসায়নিক পদার্থ মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেসব রাসায়নিক পদার্থের সামান্য অংশও যাতে আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া সারা বছরই এখন দেশের বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা সংকট লক্ষ করা যায়। এ অবস্থায় সারা দেশের নদী দূষণ রোধে বাড়তি কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
ট্যানারি শিল্প রাজধানী থেকে সাভারে স্থানান্তরের পর এটি থেকে নির্গত বর্জ্যে ধলেশ্বরীর পানিতে দূষণ ছড়াচ্ছে। চামড়া শিল্পনগরীর প্রধান বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র চালু থাকার পরও ধলেশ্বরীতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় বোঝা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম বিদ্যমান। সারা দেশের শিল্প-কারখানায় এসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনিয়মগুলো খুঁজে বের করতে দেরি করা হলে দেশের বিভিন্ন নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় দূষণ ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,
নদীদূষণে দেশে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ২৮৩ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতি নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ না নেওয়া হলে, এই ক্ষতির পরিমাণ আগামী ২০ বছরে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
মাঠপর্যায়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি হলো স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা নদীর দূষণ ও দখলরোধ করে নদীর পরিবেশ রক্ষা করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেন। পরিবেশবিদরা বলছেন, শিল্পবর্জ্যের দূষণের সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি পৌরবর্জ্য নদী দূষণে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এমন দূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর অবস্থানে না গেলে জনস্বাস্থ্যসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ।
আরডিআরসির গবেষণা তথ্যে উঠে এসেছে নতুন তথ্য।
‘পুরো এক বছর নদীর পানির স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে তারা জানায়, একটা সময় উদ্বেগের কারণ ছিল শহর ও নগরের পার্শ্ববর্তী নদীগুলো। কারণ এসব জায়গায় শিল্প-কারখানা বেশি। কিন্তু এবারের গবেষণায় দেখা যায়, এমন কোনো নদী নেই যেখানে দূষণ নেই। এর কারণ হলো প্রত্যন্ত এলাকায় শিল্প-কারখানা ছড়িয়ে পড়া। ফলে দেখা গেছে, সুন্দরবনের আশপাশের নদীতেও দূষণ পাওয়া গেছে। নদীর স্রোত বয়ে চলে, তাই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতেও দূষণ ঘটছে। এছাড়া সব নদীতেই বিভিন্ন উৎস থেকে প্লাস্টিক দূষণও পাওয়া গেছে প্রচুর।’
গবেষণার তথ্যমতে, সবচেয়ে দূষিত তিন নদীর পানির গুণাগুণ প্রায় সমান। লবণদহ, হাঁড়িধোয়া ও সুতাংয়ে পানির ক্ষারতার পরিমাণ যথাক্রমে ৫, ৪ দশমিক ১ ও ৪। পানিবিজ্ঞানীদের মতে, বিশুদ্ধ পানির পিএইচ বা ক্ষারের পরিমাণ ছয় থেকে সাতের মধ্যে থাকতে হয়। এর কম হলে পানিকে আম্লিক এবং বেশি হলে ক্ষারীয় বলা হয়। পিএইচের মানমাত্রা বেশি ও কম দুটোই মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।
তিন নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মানমাত্রা ভয়াবহ রকম কম। লবণদহে অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ২১, হাঁড়িধোয়ায় শূন্য দশমিক ৬ ও সুতাংয়ে শূন্য দশমিক ৪। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানিবিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ অবশ্যই ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রায় থাকতে হবে। নয়ত জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
নদীতে অক্সিজেনের মানমাত্রা কম হওয়ার বিষয়ে এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলেন,
‘এত কম মাত্রার অক্সিজেনে জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তবে আমাদের নদ-নদীগুলোতে যে মারাত্মক আকারে দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। জলজ প্রাণী ও ইকোসিস্টেম রক্ষার জন্য অবশ্যই নদী দূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বেশি দূষিত তিনটি নদীর পানির জৈব অক্সিজেনের চাহিদা (বিওডি) এবং রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা (সিওডি) পরিমাপ করে দেখা গেছে বিশুদ্ধ পানিতে যে পরিমাণ এসব উপাদান থাকা প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এসব নদ-নদীর দূষিত পানি প্রাণ-পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। উৎপত্তি ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,
এ তিনটি নদীই সমৃদ্ধ জনপদ গড়তে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। জনশ্রুতি আছে লবণদহ একসময় লবলং সাগর ছিল। একসময় এ নদ বা সাগর দিয়ে চলত পালতোলা নৌকা, মাঝরাতে শোনা যেত মাঝির আকুল করা ভাটিয়ালী গান। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ক্ষীরু নদীর সংযোগস্থল থেকে উত্পত্তি লবণদহের। এরপর আঁকাবাঁকা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মির্জাপুরের কাছে তুরাগ নদে এসে মিশেছে। একসময়ের প্রমত্তা নদ এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে খাল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। লবণদহ দখল ও ভরাট করে নদের ওপরে বা গতিপথ পরিবর্তন করে গড়ে উঠেছে অনেক কলকারখানা। বর্তমানে এ খালের শ্রীপুর অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়ে চলছে দখল-দূষণ।
নরসিংদী জেলা শহর ঘেঁষে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা হাঁড়িধোয়া নদীটি। একসময় এ জেলাবাসীর জন্য আশীর্বাদ ছিল এটি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এ নদীপথের ভূমিকা ছিল ব্যাপক। পাশাপাশি নদীপারের মানুষের কৃষিজমি যেমন ছিল ফসলে ভরা, তেমনি নদীর পানিতে ছিল প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ। দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত দখল আর শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে এ নদী এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম ও শিবপুর উপজেলার পশ্চিম-উত্তর শীতলক্ষ্যা নদীর কোণ থেকে প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা হয়ে নদীটি জেলা শহরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে এসে মেঘনা নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে। এখন আর মাছ পাওয়া যায় না, এমনকি পশুপাখির জন্যও সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে হাঁড়িধোয়া নদীর পানি।
সুতাং বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জে নদীটির দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। পাহাড়ের কোলঘেঁষা সুতাং নদী এককালে ছিল খরস্রোতা। কালের আবর্তনে নদীর এ ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে।
গবেষণার অন্য নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গীখাল, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, ইছামতী, মেঘনা, খিরু, শিলা, লোয়ার বানার, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, পশুর, তিতাস, বংশী, চিলাই, কর্ণফুলী, খোয়াই, বাঁকখালী, ভৈরব, মাতামুহুরী, সুরমা, আত্রাই, ময়ূর, চিংড়ি, হালদা, নাফ, করতোয়া, যাদুকাটা, চিত্রা, রূপসা, কীর্তনখোলা, সন্ধ্যা, পায়রা, বিশখালী, মাথাভাঙ্গা উল্লেখযোগ্য।
একজন পরিবেশ আইনবিদের বরাতে জানা গেছে, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী নদী একটি জীবন্ত সত্তা। দেশের সংবিধান অনুযায়ী নদী হচ্ছে জনগণের সম্পত্তি। অথচ নদীগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমরা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্চে না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়,ওয়াসা,পৌরসভা সিটি করপোরেশন বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে নদী হচ্ছে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। যা দেশের দেশের আইন-আদালত ও সংবিধানের পরিপন্থি।
একুশে সংবাদ/জ.ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :