AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেড় যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের অভাবনীয় সাফল্য


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৯:৪৩ পিএম, ৭ জুলাই, ২০২৪
দেড় যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের অভাবনীয় সাফল্য

  • প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে যাতায়াত যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ ও হয়রানিমুক্ত
  • সারা দেশে সমানতালে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ

বর্তমান সরকারের সময়ে সাফল্য পেয়েছে এমন খাতের অন্যতম হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব সাফল্যে দেশের সর্বত্রই। ফ্লাইওভার-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-সেতু-কালভার্ট, মেট্রোরেলসহ নানামুখী ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। গত দেড় যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, গুরুত্বপূর্ণ শহর, বন্দর, বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেশের যেকোনো প্রান্তে অনায়াসে যাওয়া যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতেও যাতায়াত যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ ও হয়রানিমুক্ত।

দেড় যুগ ধরে সরকারের অদম্য অগ্রযাত্রায় সাফল্যের খাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। যোগাযোগ ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী, রেলপথ সম্প্রসারণ করে সমগ্র বাংলাদেশকে রেলের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে। রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরকরণ, নতুন ও বন্ধ রেলস্টেশন চালু, নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের সংস্কার-আধুনিকীকরণ, কম্পিউটার বেইজড সিগন্যালিং ব্যবস্থার প্রবর্তন সহ ট্রেনের নতুন কোচ সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক রেলযোগাযোগ বিশেষ করে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্ক, সার্করেল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা চলমান। নতুন সড়ক নির্মাণ, প্রশস্তকরণের ফলে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান। সরকারের প্রতিটি উন্নয়নের সুফল মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সারা দেশে সমানতালে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামীণ জীবন পাল্টে যাওয়ার মূল ক্রীড়নক হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত দেড় যুগে সারা দেশে প্রতিটি গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। সওজের আওতায় বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার ৩৬২ দশমিক ৮২১ কিলোমিটার সড়ক, তিন হাজার ৫৪৮টি ব্রিজ, ৮৫৬টি বেইলি ব্রিজ, ১৪ হাজার ৮১৪টি কালভার্ট রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে টেকসই ও মজবুত এবং দীর্ঘমেয়াদি সড়ক নির্মাণসহ সার্বিক কার্যক্রমেও গতি পাবে সওজ— বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বর্তমানে জনগণ নির্বিঘ্নে ও স্বল্প সময়ে যেমন যাতায়াত করতে পারছেন গন্তব্যে, তেমনি পণ্য পরিবহনও করতে পারছেন সহজেই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দেশের সর্বত্রই নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব সড়ক-মহাসড়কসহ সওজের মাধ্যমে বর্তমানেও চলমান রয়েছে জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ কাজ।

সম্প্রতি ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের যোগাযোগ উন্নয়নসহ পর্যটনশিল্পে যুগান্তকারী মাইলফলক রচিত হয়েছে। প্রতিবছর কক্সবাজারে আসা প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক বাসে এবং বিমানে যাতায়াত করলেও এখন বেশিরভাগ পর্যটক ট্রেন ভ্রমণ পছন্দ করছেন। বাংলাদেশ জাতীয় অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুসারে, বর্তমানে ৩ হাজার ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের নেটওয়ার্ক দেশের ৪৩টি জেলাসহ প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে সংযুক্ত করেছে। ১১ নভেম্বর ২০২৩ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের ৪৮তম জেলা হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার রেল যোগাযোগে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে, কক্সবাজারে পর্যটকের উপস্থিতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বল্প সময়-খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন সহজতর হবে এবং পর্যটন শিল্পসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এটি মিয়ানমার-চীনসহ এতদ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে বিস্তৃত করবে। তৈরি হবে নতুন নতুন বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানের। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা থেকে শুরু করে নয়নাভিরাম সবুজ বনাঞ্চল অতিক্রম করে পৌঁছেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। এই রেলপথের যাত্রীরা চুনতি-ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় পার্কের প্রায় ২৭ কিলোমিটার সংরক্ষিত বনভূমির অপরূপ বৃক্ষরাজির দৃশ্য অবলোকনসহ বন্যহাতির পালের সৌন্দর্য উপভোগ করে কক্সবাজারে ভ্রমণ করতে পারবেন।

যাত্রাপথে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের অপূর্ব মেলবন্ধন যাত্রীদের মুগ্ধ করবে। বৈচিত্র্যময় এই রেলপথ পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। কক্সবাজারের সঙ্গে রেলসংযোগের ফলে পর্যটনশিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এই রেল সংযোগ নির্মিত হওয়ার সুবাদে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সবসময় পর্যটকরা ইচ্ছা করলে সরাসরি কক্সবাজারে এসে কোনো ধরনের হোটেল ব্যবহার না করেও সমুদ্রসৈকতের আনন্দ উপভোগ করে পুনরায় ফিরতে পারবেন। 
রেলপথ চালু হওয়ায় কক্সবাজারের আপামর জনসাধারণসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ গভীর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। 

কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্তব্য, বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিবছর অগণিত দেশী-বিদেশী পর্যটক কক্সবাজারে ছুটে আসেন। পর্যটকদের জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সমাহারে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন-বিলাসবহুল বিপুল সংখ্যক হোটেল-মোটেল। দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজরের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক ও আকাশপথে যোগাযোগ থাকলেও ছিল না রেলসংযোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা-চেতনার অনুপম ফসল হিসেবে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ সম্পন্ন হলেই ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের পথে একধাপ এগিয়ে যাবে। তাছাড়া কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত মহাসড়ক সম্প্রসারণ করে এর আরও বিস্তৃতি ঘটবে, যা মিয়ানমার হয়ে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং সিটির সঙ্গে আন্তঃদেশীয় মহাসড়কে সংযুক্ত করবে বাংলাদেশকে। ফলে, পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে পূর্বে চীন অবধি ঐতিহাসিক সেই ‘সিল্ক রুট’ হবে পুনরুজ্জীবিত। জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যকার পূর্বমুখী অর্থনৈতিক দুয়ার হবে উন্মুক্ত। বিনিয়োগ-শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক বন্ধন সহজতর হয়ে উঠবে। কৃষি-খামার ও শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর বাজারজাত এবং রপ্তানি সুবিধার প্রসার ঘটবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনসাধারণের কর্মচাঞ্চল্য ও সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।

ক্লান্তিকর সড়ক যাত্রার বিকল্প হিসেবে নিয়মিত যাতায়াতকারী এবং দূর-দূরান্তের পর্যটকদের কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কক্সবাজার এক্সপ্রেস জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কক্সবাজারকে ঘিরে দেশের পর্যটন খাতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে ট্যুরিস্ট ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন শহরের আদলে এ বিশেষ ট্রেনে যাত্রাপথে থাকবে নানামাত্রিক সুবিধা। উন্নত বিশ্বের যে কোনো আধুনিক রেলসংযোগ-স্টেশনের প্রয়োজনীয় নান্দনিক সব সুবিধাদি শোভিত কক্সবাজার এক্সপ্রেস বাংলাদেশ শুধু নয়; অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগ উন্নয়নের অধিকতর উচ্চতায় পৌঁছে দিবে।

 

একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা

Link copied!