বিশ্বকাপে আগামীকাল ধর্মশালায় দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচের আগে যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হবে তখন ডাচ শিবিরের দিকে লক্ষ্য করলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে দুই দেশের সঙ্গীতের সাথেই গলা মেলাতে দেখলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
বিশ্বকাপে খেলতে আসা ডাচ জাতীয় দলে পাঁচজন খেলোয়াড় রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান। ভারতের মাটিতে নেদারল্যান্ডসকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে তারা প্রত্যেকেই দারুন খুশী।
টপ অর্ডারে লিস্টারশায়ারের ব্যাটার কলিন এ্যাকারম্যান ও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ, মিডল অর্ডারে সমারসেটের স্পিনিং অল-রাউন্ডার রোয়েলফ ফন ডার মারু, ফাস্ট মিডিয়াম বোলার রায়ান ক্লেইন ও ৩৯ বছর বয়সী অভিজ্ঞ ওয়েসলি বারেসি প্রত্যেকেই দক্ষিণ আফ্রিকান , পরবর্তীতে যারা ডাচ নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।। ২০১১ সালেও বারেসি বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। দুইবারই তিনি নেদারল্যান্ডসকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পাঁচজনের মধ্যে সবচেয় কম বয়সী ২৬ বছরের ক্লেইন।
ডাচ দলের সাবেক ওপনার স্টিফান মিবার্গও জন্মসূত্রে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান। কিন্তু তিনি প্রোটিয়া দলে কখনই খেলার সুযোগ পাননি। মিবার্গ বলেছেন, ‘এ্যাকারম্যান ইতোমধ্যেই তার দক্ষতার প্রমান দিয়েছেন। বারেসি ও ফন ডার মারু অত্যন্ত অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় এবং দলের সাফল্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এঙ্গেলব্রেখ ও ক্লেইনের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল কিছু দেখার অপেক্ষায় আছি। এই দুজনই দারুন প্রতিভাবান ক্রিকেটার।’
প্রিটোরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করা ৩৯ বছর বয়সী মিবার্গ গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর অবসরে যাওয়ার আগে নেদারল্যান্ডসের হয়ে ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করে গেছেন। ডাচ জার্সিতে তার চারটি ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ১৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। গত বছর সংক্ষিপ্ত ভার্সনের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মিবার্গের এই ইনিংসে নেদারল্যান্ডস প্রোটিয়াদের আশাভঙ্গ করেছিল। রটারডামে নিজ বাড়িতে বসেই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচগুলো উপভোগ করছেন মিবার্গ।
গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচটির কথা স্মরণ করে মিবার্গ বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের হয়ে আমি দারুন গর্বিত। কিন্তু একইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দু:খ প্রকাশ করছি। আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ঐ ম্যাচটি।’
জন্মভূমির বিপরীতে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মিবার্গ বলেন, বিশেষ করে এই ধরনের ম্যাচে প্রত্যাশার মাত্রাটা একটু বেশী থাকে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি অনেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তারা জানে কখনই প্রোটিয়া জাতীয় দলে তাদের সুযোগ হবে না। আমার অবশ্য এমন অনুভূতি কখনই হয়নি। কিন্তু তাদের বিপক্ষে খেলাটা আমি সবসময়ই উপভোগ করেছি। অবশ্যই সব সময় জয়ের জন্যই মাঠে নেমেছি।’
মঙ্গলবারের ম্যাচ সম্পর্কে মিবার্গ বলেছেন, ‘আমি চাই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের শিরোপা জিতুক। কিন্তু কালকের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের জয়ের জন্যই আমার শুভকামনা থাকবে। এই ম্যাচে আগে আমি ডাচ দলের পাঁচ শতাংশ সুযোগ দেখছি। এই মুহূর্তে প্রোটিয়াদের বেশ শক্তিশালী মনে হচ্ছে।’
জাতীয় সঙ্গীতের সময় তিনি কি করতেন এমন প্রশ্নের উত্তরে মিবার্গ বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই নেদারল্যান্ডসকে প্রতিনিধিত্ব করতে অত্যন্ত গর্ব অনুভব করি। কিন্তু একইসাথে আমি আমার জন্মভূমিকেও ভালবাসি। সে কারনে যে দেশেরই জাতীয় সঙ্গীতা বাজুক না কেন মনের মধ্যে অন্য ধরনের একটি অনুভূতি হয়। আমি সবসময় দুটোতেই কণ্ঠ মিলিয়েছি।’
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :