চলতি বিশ্বকাপে শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওপরে উঠা শুরু হয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের। নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে নতুন ইতিহাস গড়ল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব আসরে এর আগে বড় জয়টি ছিল ২৭৫ রানের। সে রেকর্ডটিও ছিল অজিদেরই।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে রান তাড়ায় অ্যাডাম জাম্পার বোলিং তোপে মাত্র ৯০ রানেই গুঁটিয়ে যায় ডাচরা। এতে নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জিতল অস্ট্রেলিয়া।
এদিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস উদ্বোধন নামেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। মাঠে নেমে অজি এই দুই ওপেনার সাবধানী ব্যাটিং শুরু করেন।
দলীয় ৩.৫ ওভারে ভুল করে বসেন মার্শ। লোগান ফন বিকের বলে কলিন অ্যাকারম্যানের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেন মিচেল মার্শ। এ সময় তিনি করেন ১৫ বলে ৯ রান। এরপর মাঠে নামেন স্টিভেন স্মিথ। তিনি সঙ্গ দেন ডেভিড ওয়ার্নারের। দুইজনের মিলে সাবধানী ব্যাটিংয়ে অর্ধশত রানের জুটিতে দলীয় শতক পার করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর দেখে-শুনে খেলে ক্যারিয়ারের ৩২তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন ডেভিড ওয়ার্নার।
দলীয় ১৭.২ ওভারে বিক্রম সিংয়ের বলে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। এই অর্ধশতকের হওয়ার পথে তিনি খরচ করেন ৪০ বল।ওয়ার্নারে ফিফটির কিছুক্ষণ পরে ক্যারিয়ারে ৩১তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন স্টিভেন স্মিথও। ফিফটির করার কিছুক্ষণ পরেই ভুল করেন তিনি।
দলীয় ২৩.৩ ওভারের আরিয়ান দত্তের বলে ফন ডার মারউইয়ে হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন স্মিথ। এসময় তিনি করেন ৬৮ বলে ৭১ রান। স্মিথ আউট হওয়ার পর মাঠে নামা মার্নাস লাবুশেনও দেখে শুনে খেলতে থাকেন। তাকে ভালো সঙ্গ দেন ওপেনিং নামা ওয়ার্নার।দলীয় ৩৪.৪ ওভারের বাস ডি লিডের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। ফিফটির পথে লাবুশেন খরচ করেন ৪১ বল।
ফিফটির পর স্মিথের মতো পিচে থিতু হতে পারেননি লাবুশেন। দলীয় ৩৬.১ ওভারের ঘটে বিপত্তি। বাস ডি লিডের বলে আরিয়ান দত্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরেন তিনি। তাতে ভেঙে যায় ৭৬ বলে ৮৪ রানের জুটি। যাওয়ার আগে লাবুশেন খেলেন ৪৭ বলে ৬২ রানের ইনিংস। লাবুশেন আউট হওয়ার পর মাঠা নামা জশ ইংলিসও বেশিক্ষণ পিচে থিতু হতে পারেননি। ১৪ বলে ১২ রান করে বাস ডি লিড বলে ক্যাচ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন জশ।
এরপর মাঠে নামা ক্যামেরন গ্রিনও দুই অংকের সংখ্যা পার করতে পারেননি। নিয়মিত উইকেট হারাতে দেখে অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একাই দলকে বড় লক্ষ্যে দিকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব নেন। দেখে-শুনে ডাচ বোলারদের মোকাবেলা করতে থাকে। প্রথম দিকে কয়েকটি বল মোকাবেলা করে ডাচ বোলার উপর চড়াও হন। ঝড়ো ইনিংস খেলতে থাকেন। এরই মধ্যে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ৪০ বলে ম্যাজিক ফিগার শতক স্পর্শ করেন ম্যাক্সওয়েল। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি। শতক পূণ করার পর পরই ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরেন তিনি। যাওয়ার আগে তিনি ৪৪ বলে ১০৬ রানে ইনিংস খেলেন।
ম্যাক্সওয়েল আউট হওয়ার শেষ দিকে দলের হাল ধরেন প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক,অ্যাডাম জাম্পা। তাদের ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলা শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ফলে নেদারল্যান্ডসের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০০ রান।
নেদারল্যান্ডসের হয়ে চার উইকেট নেন লোগান ফন বিক। জোড়া উইকেট নেন বাস ডি লিড এবং একটি উইকেট নেন আরিয়ান দত্ত।
অজিদের দেয়া ৪০০ রানের টার্গেটে নেদারল্যান্ডসের হয়ে ইনিংস উদ্বোধন করেন ম্যাক্স ও’দাউদ ও বিক্রম সিং। ডাচ এই দুই ওপেনার দেখে-শুনে খেলতে থাকেন। দলীয় ৪.৫ ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন ম্যাক্স ও’দাউদ। এ সময় তিনি করেন ৯ বলে ৬ রান। এরপর মাঠে নামেন কলিন অ্যাকারম্যান।
দলীয় ৫.৫ ওভারে রান আউটের শিকার হয়েছেন বিক্রম সিং। যাওয়ার আগে তিনি করেন ২৫ বলে ২৫ রান। বিক্রম সিং আউট হয়ে যাওয়ার দেখে-শুনে খেলতে গিয়ে ভুল করে বসেন কলিন অ্যাকারম্যান। দলীয় ৯.২ ওভারের জশ হ্যাজলউড এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরেন অ্যাকারম্যান। যাওয়ার আগে তিনি করেন ১১বলে ১০ রান। এরপর মাঠে নামা বাস ডি লিডও এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরেন বাস ডি লিড। যাওয়ার আগে তিনি করেন ৭ বলে ৪ রান।
নিয়মিত উইকেট যাওয়ায় আরো চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডস। চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য দেখে-শুনে খেলা শুরু করেন সিব্র্যান্ড। কিন্তু তিনি তা পারেননি। উল্টো দলীয় ১৩.২ ওভারের মিচেল মার্শের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেন সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখ। যাওয়ার আগে তিনি করেন ২১ বলে ১১ রান। এরপর মাঠে নামেন তেজা নিদামানুরু। তিনিও বেশিক্ষণ পিচে টিকে থাকতে পারেনি। ১৮ বলে ১৪ রান করেন ফিরেন।
এরপর লোগান ফন বিক, আরিয়ান দত্ত, পল ফন মিকেরেন ও রুলফ ফন ডার মারউই কেউ দুই অংকের সংখ্যা পার করতে পারেননি। ফলে মাত্র ২০.৫ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ৯০ রানে গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ফলে রেকর্ড সংখ্যক ৩০৯ রানের জয় পায় টিম অস্ট্রেলিয়া।
অস্টেলিয়ার হয়ে এদিন চার উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা। জোড়া উইকেট নেন মিচেল মার্শ। একটি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড ও মিচেল স্টার্ক।
একুশে সংবাদ/ম.ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :