বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জেতা, অ্যাশেজ ধরে রাখার পরও কামিন্সের অধিনায়কত্বের পাশে একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল তার ওয়ানডেতে স্বল্প অভিজ্ঞতার কারণে। বিশ্বকাপের আগে এ সংস্করণে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র চার ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া কামিন্সই দলকে এনে দিয়েছেন রেকর্ড বাড়িয়ে নেয়া ষষ্ঠ শিরোপা।
‘ক্যাপ্টেন কামিন্স’ ছিলেন দুর্দান্ত, যেটির প্রতিফলন ছিল স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও। স্বাভাবিকভাবেই তার অধিনায়কত্ব প্রশংসা পেয়েছে। এবার কামিন্সকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল।
তিনি বলেছেন, কামিন্সের কাছ থেকে কেউ প্রেরণা নিতে না পারলে তিনি ‘ভুল করছেন’। যত দিন ইচ্ছা অধিনায়ক থাকবেন, এমন অধিকার কামিন্স অর্জন করেছেন বলেও মনে করেন চ্যাপেল।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক কলামে অস্ট্রেলিয়াকে ৩০টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া চ্যাপেল লিখেছেন, ‘কামিন্স শুধু টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেনি, তার নেতৃত্বের ব্যাপ্তি বেড়েছে এবং সে এখন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে একজন সফল অধিনায়ক। সে ভালো একজন অধিনায়ক হবে, সেটি ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে সে।’
দলে সবাইকে প্রেরণা জোগানোর সামর্থ্য কামিন্সের ভালোভাবেই আছে, মনে করেন চ্যাপেল, ‘কামিন্সের সব সময়ই ভালো একজন অধিনায়ক হওয়ার কথা ছিল। ফাস্ট বোলিং অধিনায়ক হওয়ার ব্যাপারটি একটু দূরে সরিয়ে রাখলেও দেখা যাবে, অস্ট্রেলিয়ান দলে সে-ই ছিল সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী খেলোয়াড়, যে ক্রিকেটীয় জ্ঞানে পরিপূর্ণ। কেউ যদি কামিন্সকে দেখে অনুপ্রাণিত না হয়, তাহলে সে আসলে ভুল করছে।’
এমনিতে বিশেষায়িত পেস বোলারদের অধিনায়ক হওয়াটা ঠিক নিয়মিত ঘটনা নয় ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ায় সেটি তো দুর্লভই। পেস বোলার হয়েও অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য পাওয়া ক্রিকেটারদের তালিকাও খুব একটা লম্বা নয়।
চ্যাপেলের মতে, সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় নিজেকে নিয়ে আনছেন কামিন্স, ‘আরেকটি যে ব্যাপার বিবেচনায় আনতে হবে, দুর্লভ প্রজাতির বোলিং অধিনায়কদের যে গুণ। বোলাররাও ভালো অধিনায়ক, এমন সেরা উদাহরণ হচ্ছে পাকিস্তানের ইমরান খান, অস্ট্রেলিয়ার রিচি বেনো এবং ইংল্যান্ডের রে ইলিংওয়ার্থ। বিভিন্ন দেশে ও সংস্করণে, বৈচিত্র্যময় কন্ডিশনে দারুণ পারফর্ম করে কামিন্স নিজেকে সেই কাতারে তুলে আনছে। তবে ওই তিনজনের মধ্যে শুধু ইমরানই, যে কিনা নিজের উপস্থিতির কারণে অসাধারণ একজন নেতা—সীমিত ওভারের ব্যাপক প্রসারের মধ্যে খেলেছে।’
সর্বশেষ অ্যাশেজে বেন স্টোকসের সঙ্গে দ্বৈরথও কামিন্সকে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন চ্যাপেল, ‘অধিনায়ক হিসেবে যে সে বাধার মুখে পড়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। অসাধারণ আরেকজন অধিনায়ক বেন স্টোকসের সঙ্গে তার লড়াই এমন একটা ঘটনা। স্টোকসের সঙ্গে কঠিন সে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কামিন্সের অধিনায়কত্বের উন্নতি হবে। কোনো একজন জ্ঞানী লিখেছিলেন, ‘ভালো অধিনায়কত্ব হচ্ছে পর্নোগ্রাফির মতো; এটাকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন কিন্তু আপনি দেখলেই বুঝবেন ব্যাপারটি।’
মাঠে যেমন কামিন্স প্রেরণাদায়ী, তেমনি মাঠের বাইরে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ব্যাপারেও তিনি সরব। এ নিয়ে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় তাকে ঘিরে সমালোচনাও আছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে তার অরাজনৈতিক থাকা উচিত, এমন মনে করেন অনেকে।
এ ব্যাপারেও কামিন্সের পাশেই আছেন চ্যাপেল, ‘মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে কথা বলার কারণেও কামিন্সকে কৃতিত্ব দিতে হয়। অন্যের ক্ষতি করে নিজের আখের গোছানোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই পরিবেশে একজন বর্তমান খেলোয়াড়ের কোনো একটা অবস্থান নেয়া সহজ নয়। কিন্তু নিজে যেসব ব্যাপারে খুবই নিবেদিত, সেগুলোতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস কামিন্সের আছে।’
সব মিলিয়ে কামিন্সই অস্ট্রেলিয়ার যোগ্য অধিনায়ক, চ্যাপেল বলেছেন সেটি, ‘অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক হিসেবে কামিন্সই সঠিক পছন্দ ছিল এবং সে অসাধারণ কাজও করেছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে অনেক বেশি চাহিদার এই যুগেও সে যত দিন ইচ্ছা অধিনায়ক থাকার অধিকারটা অর্জন করেছে।’
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :