আজ সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ দিয়ে ১৩ বছরের বর্ণাঢ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজবেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্টে পথচলা শুরু করেছিলেন ওয়ার্নার। সেই পথের আজ সমাপ্তি ঘটলো। বিদায় বেলায় আবেগপ্রবণ ছিলেন ওয়ার্নার। পরিবার-বন্ধু ও সতীর্থদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করেননি তিনি। দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে দলের জন্য অবদান রাখার পাশাপাশি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন বলে বিশ্বাস করেন ওয়ার্নার।
সিডনি টেস্ট শেষে আবেগময় কন্ঠে ওয়ার্নার বলেণ, টেস্ট ক্যারিয়ারে যেভাবে খেলেছি তাতে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, ভক্তদের আনন্দ দিতে পেরেছি বলে বিশ্বাস করি।
২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ওয়ার্নারের। প্রায় তিন বছর পর টেস্ট জার্সি গায়ে চাপেন তিনি। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজবেনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন ওয়ার্নার। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে ৩ ও অপরাজিত ১২ রান করেছিলেন ওয়ার্নার।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ওয়ার্নারকে। অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অবিচ্ছদ্য অংশ হয়ে যান এই বাঁ-হাতি ওপেনার। এক দশক দাপটের সাথে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুর দায়িত্বের সাথে পালন করেছেন ওয়ার্নার।
বিদায় বেলায় অসাধারন সব অর্জনকে সঙ্গী করেছেন ওয়ার্নার। ১১২ টেস্টের ২০৫ ইনিংসে ৪৪ দশমিক ৫৯ গড়ে করেছেন ৮৭৮৬ রান। ২৬টি সেঞ্চুরি ও ৩৭টি হাফ-সেঞ্চুরি ছিলো তার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে পঞ্চম সর্বোচ্চ ইতিহাসে রানের মালিক ওয়ার্নার। তবে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনিই।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৪ রানে আউট হলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৭ রানে আউট হন ওয়ার্নার। দলের ৮ উইকেটের জয়ে অবদান রাখতে পারেন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষটা জয় দিয়ে করতে পারায় খুশি ওয়ার্নার। কিন্তু দলের হয়ে আর খেলতে না পারার কষ্ট তাড়া দিবে ওয়ার্নারকে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি যখন দলকে মাঠে নামতে দেখবো কিন্তু আমি খেলবো না, তখন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বো। তবে যা বলেছি, এই দলে দারুন সব ক্রিকেটার আছে। আমাদের বেশির ভাগের বয়সই ত্রিশের বেশি। সময়ের সাথে সাথে আমরা আরও তরুণ না হলেও এই দলটা বিশ্বমানের এবং অসাধারণ হয়ে উঠবে।’
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু দলের জয় থেকে ১১ রান দূরে থাকতে লেগ বিফোর আউট হন তিনি। ওয়ার্নারের আউট হয়ে ফেরার পথে আবেগপ্রবণ ছিল সিডনির পুরো গ্যালারি। স্টেডিয়াম জুড়ে করতালি ও দাঁড়িয়ে ওয়ার্নারকে বিদায় সম্ভাসন জানিয়েছেন দর্শকরা। সম্মান জানিয়েছেন ওয়ার্নারের সতীর্থ ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়রাও। ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় নিজের শেষ টেস্টের গøাভস এবং হেলমেট এক খুদে ভক্তের হাতে তুলে দেন তিনি।
সিডনির গ্যালারি জুড়ে ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া এমন বিদায়ের কারনেই হয়তো ওয়ার্নার বলেছেন, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ার রোমাঞ্চকর ও বিনোদনময়। যেভাবে খেলেছি, তাতে লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি বলে বিশ্বাস করি এবং আশা করি তরুণরা আমাকে অনুসরণ করবে। সাদা বল থেকে টেস্ট ক্রিকেট, এটাই আমাদের খেলার শীর্ষবিন্দু। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং লাল বলের ক্রিকেট খেলতে হবে। কারণ, এটাই সবচেয়ে মজার।’
বিদায়বেলায় পরিবার, বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি ওয়ার্নার। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারটা দারুণ, তাদের সাথে প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করি। মা-বাবার অবদানও অনেক। আমাকে বড় করতে অবদান রেখেছেন। তাদের আমৃত্যু ভালোবাসি এবং এটা নিয়ে বেশি কথা বলবো না। আবেগী হয়ে পড়বো। ভাই স্টিভ, আমি তার পথ অনুসরণ করেছি। এরপর ক্যানডিস এল আমার জীবনে। ক্যানডিসকে ধন্যবাদ, সে আমার জন্য যা করেছে। তুমিই আমার জগৎ এবং আমি এটির প্রশংসা করি।’
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :