বাংলাদেশের হকিতে যে কজন তরুণ বর্তমানে আলো ছড়াচ্ছেন, পারফরম্যান্সের দ্রুতি ছড়িয়ে সকলের নজর কেড়েছেন-কাড়ছেন নিয়মিত তাদের অন্যতম পুরনো ঢাকার ছেলে আবেদ উদ্দিন। বয়সে তরুণ হলেও হকিতে আবেদের পথচলা নতুন নয়। প্রায় এক দশক ধরেই খেলছেন এ মিডফিল্ডার। জাতীয় দলের বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে অপরিহার্য সদস্য হিসেবে নিজের যোগ্যতার-দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বয়ে এনেছেন ঢের সাফল্য। যদিও জাতীয় দলের জার্সিটা এখনো গায়ে না জড়াতে পারেননি। তবে বেশ কয়েকবার মূল জাতীয় দলে স্ট্যান্ড বাই ছিলেন। দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত (২০২২ সালে) ফ্রাঞ্চাইজি লিগে ওয়ালটন ঢাকার হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আবেদের। এ সবই পুরনো কথা। আবেদের নতুন গল্প হলো তিনি আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে মেরিনার্স ক্লাবের জার্সিতে খেলবেন। নতুন মৌসুমে মেরিনার্সে নাম লিখিয়েছেন বিকেএসপির এ সাবেক শিক্ষার্থী।
ক্যারিয়ারের এক দশকে চতুর্থবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ খেলতে যাচ্ছেন আবেদ। ঘরোয়া লিগের মর্যাদার আসরে তার পথচলা ২০১৬ সালে। ওই বছর প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে নাম লেখান। খেলেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের জার্সিতে। এরপর ২০১৮ সালে মোহামেডান, ২০২১ সালে আবাহনী হয়ে এবার নাম লিখিয়েছেন মেরিনার্সে। প্রিমিয়ার হকির স্বল্প দিনের জার্নিতে একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও অভিজ্ঞতা রয়েছে এই মিডফিল্ডারের। সেটা মোহামেডানের হয়ে। তবে চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জনের গল্পটা আরেকবার লিখতে চান তিনি এবং সেটা এবারই মেরিনার্সের হয়ে। এ ব্যাপারে আবেদ বলেন, ‘ঢাকার হকিতে মেরিনার্স অনেক বড় নাম। চ্যাম্পিয়ন দল। আবাহনী, মোহামেডান, ঊষা যেমন বাংলাদেশের হকিতে বড় নাম; তেমনি মেরিনার্সও। এটা আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। মেরিনার্স সব সময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ে। এবারো তাই করেছে। মোহামেডানের জার্সিতে আমি একবার প্রিমিয়ার লিগ জেতার স্বাদ পেয়েছি। এবার মেরিনার্সকে চ্যাম্পিয়ন করতে চাই। মেরিনার্সের ঘরে লিগ শিরোপাটা এনে দিতে চাই।’
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে হকির নতুন মৌসুম। প্রায় তিন বছর পর হকি খেলোয়াড়দের, ক্লাব কর্তাদের পদচারণায় এখন মুখরিত মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম প্রাঙ্গন। লিগ শুরু হওয়াতে দারুণ খুশি আবেদ। দল নিয়েও আশাবাদী। নিজেদের দল প্রসঙ্গে এ মিডফিল্ডার বলেন, ‘আমাদের দল এবার বেশ শক্তিশালী। অনেক তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় যেমন আছেন; তেমনি কৌশিক ভাই, মিলন ভাই, রাব্বি ভাই, সবুজ ভাই, শাওন ভাইয়ের মতো জাতীয় খেলোয়াড়ও আছেন। কোচ হিসেবে মামুনুর রশিদ স্যার আছেন। তিনি হকির অনেক বড় নাম। এছাড়া জাতীয় দলের এক সময়ের আলোচিত খেলোয়াড় মামুনুর রহমান চয়ন ভাই রয়েছেন সহকারী কোচ হিসেবে। সব মিলে আমাদের দলটা বেশ গোছানো এবং ভারসাম্যপূর্ণ। আশাকরি আমরা এবার লিগ নয়; ক্লাব কাপও জিতব।’
আবেদ নিজে একজন সুদক্ষ হকি খেলোয়াড়। এর বাইরে হকিতে তার একটা পারিবারিক পরিচয়ও রয়েছে। তার আপন বড় ভাই আফসার উদ্দিন প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ আসরে আবাহনীতে খেলেছেন। আবেদের আরেক ভাই জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ নাঈম উদ্দিন এবার খেলবেন আবাহনীর জার্সিতে। গত লিগেও নাঈম আবাহনীতে খেলেছেন। আবেদের ভাইরা শুধু নন; বাবাও একজন হকি লাভার। পুরনো ঢাকার মানুষদের হকি প্রীতির কথা কারোর অজানা নয়। আরমানিটোলা স্কুল থেকে হকিতে শুরু আবেদের। তৃণমূল হকির জনপ্রিয় কোচ ওস্তাদ ফজলুর হাত ধরে। এরপর সেখান থেকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) যোগদান আবেদের।
আবেদ শুধু খেলাধুলাতেই নয়; লেখাপড়াতেও বেশ মনোযোগী। খেলোয়াড় কোটায় এবার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বাংলা বিভাগের এ ছাত্র হকি খেলার পাশাপাশি নিয়মিত ক্লাসও করছেন রুটিন মেনে। সব কিছু ছাপিয়ে আবেদের ভাবনায় এখন মেরিনার্স ক্লাব। যে কোনো মূল্যে নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে শিরোপা এনে দিতে চান আবেদ।
একুশে সংবাদ/এস.কে.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :