ডেভিড রায়ার নৈপুন্যে মঙ্গলবার পোর্তোকে শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পরাজিত করে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্সেনাল।
এমিরেটস স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে লিনড্রো ট্রোসার্ডের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্সেনাল। এরপর ফলাফল নিষ্পত্তিতে টাইব্রেকারের প্রয়োজন হয়। গানার্স গোলরক্ষক রায়া দুটি শ্যুটআউট রক্ষা করে আর্সেনালের শেষ আট নিশ্চিত করেন। আর এতে স্বপ্নভঙ্গ হয় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন পোর্তোর। দারুন এক ডাইভিং সেভে প্রথমে রায়া ওয়েনডেলকে হতাশ করেন। এরপর আবারো একই দক্ষতায় গালেনোর শট রুখে দেন। বিপরীতে স্বাগতিক আর্সেনাল তাদের চারটি শ্যুটই জালে প্রবেশ করিয়েছেন।
২০১৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোন ম্যাচ টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হলো।
ম্যাচ শেষে আর্সেনাল ম্যানেজার মিকেল আর্তেতা টিএনটি স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘সবাই নার্ভাস ছিল, সবাই নিজের সেরাটা দেবার জন্য মুখিয়েছিল। অথচ সবাই বুঝতে পারছিল শ্যুটআউট একটি লটারির মত। আমরা দারুন খুশী। কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে আমাদের ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর্সেনালের মত ক্লাবের জন্য যা লম্বা একটি সময়। এই পথটা অনেক কঠিন ছিল। দিনের শেষে যাদুকরী মুহূর্ত উপহার পাবার জন্য আমাদের গভীরে যেতে হয়েছে। এজন্য আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হয়েছে। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। কিছু মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কঠিন মুহূর্তে সাহস দেখাতে হয়েছে। আর এসবের কারনেই আজ আমরা এখানে।’
ব্রেন্টফোর্ড থেকে ধারে আর্সেনালে খেলতে আসা রায়া বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে তো অবশ্যই একইসাথে দলীয় ভাবেও এটি একটি গর্বিত মুহূর্ত। এটা আমার কাছে বিশেষ কিছু। ফুটবল খেলি এ ধরনের কিছু অর্জনের জন্য। আর্সেনালের হয়ে খেলতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা মোটেই সহজ কাজ নয়।’
প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারের পর প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাব আর্সেনালের এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিলনা। শেষ আট লিগ ম্যাচে গানার্সরা ৩৩ গোল করেছে। কাল গোছানো পোর্তোর বিপক্ষে শুরু থেকেই খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারছিল না আর্সেনাল। বিরতির ঠিক আগে ট্রোসার্ডের গোলে আর্সেনাল সমতা ফেরায়। এই গোলের আগ পর্যন্ত অবশ্য আধিপত্য দেখিয়েছে সার্জিও কনকেইসাওর পোর্তো। যদিও ¯্রােতের বিপরীতে গিয়ে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ম্যাচের গতি মন্থর করতে পোর্তো নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। এর ফলে স্বাগতিক সমর্থকদের প্রায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। চার মিনিটে আর্সেনাল ডিফেন্ডার বেন হোয়াইটের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ১০ মিনিট পর অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ডের শট সাইড নেটে লাগে।
২০০৪ সালে হোসে মরিনহোর অধীনে সর্বশেষ ইউরোপীয়ান শিরোপা জয়ী পোর্তো বেশ কিছু সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। এভানিলসনের দুরপাল্লার একটি শট গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। এরপর তার আরো একটি শট কোনমতে রক্ষা করেন রায়া। ডিক্লান রাইসের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ৪১ মিনিটে ডেডলক ভাঙ্গে আর্সেনাল। ওডেগার্ডের দারুন এক লো পসে ট্রোসার্ড ঠান্ডা মাথায় গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তাকে পাশ কাটিয়ে দলকে এেিগয়ে দেন।
এর আগে ইংল্যান্ডে খেলা ২২টি ম্যাচের কোনটিতেই জিততে পারেনি সফরকারী পোর্তো। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে আসতে মরিয়া পোর্তো শুরুটা ভালই করেছিল। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে ওডেগার্ড খালি জালে বল জড়ালেও তার আগে পেপেকে হাভার্টজ ফাউল করলে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। পরের মিনিটেই ফ্রান্সিসকো কনকেইসাওর শট রুখে দেন রায়া। ৮৩ মিনিটে বদলী বেঞ্চ থেকে গাব্রিয়েল জেসুসকে মাঠে নামান আর্তেতা। প্রথম টাচেই ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক এই উইঙ্গার গোল পেয়ে গিয়ছিলেন। বুকায়ো সাকার কার্লিং শট ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। ওডেগার্ডের ফিরতি বলের শটও আর্সেনালকে এগিয়ে দিতে পারেনি।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমভাগে আর্সেনাল কিছুটা আগ্রাসী হয়ে ওঠে। কিন্তু পোর্তোর ছেড়ে কথা বলেনি। দ্বিতীয়ার্ধে আর্তেতা এডি এনকেইটা ও ওলেকসান্দার জিনচেনকোকে মাঠে নামান। কিন্তু কোন দলই শেষ পর্যন্ত আর কোন গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচের ফলাফল নির্ধারনের জন্য টাইব্রেকারের প্রয়োজন হয়।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :