নাপোলিকে শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বার্সেলোনা।ফারমিন লোপেজ ও হুয়াও ক্যান্সেলোর গোলে শুরুটা দাপটের সাথে করেছিল জাভি হার্নান্দেজের দল বার্সেলোনা। কিন্তু আমির রাহমানি ৩০ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করলে কাতালন শিবিরে অস্বস্তি দেখা দেয়। প্রথম লেগে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন নাপোলির সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বার্সা। শেষ পর্যন্ত রবার্ট লিওয়ানদোস্কির গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
২০২০ সালের পর এই প্রথমবারের মত পাঁচবারের বিজয়ী বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো। ইনজুরিতে থাকা তিন মিডফিল্ডার পেড্রি, গাভি ও ফ্রেংকি ডি জংকে ছাড়াই কাল দল সাজাতে বাধ্য হয়েছিলেন জাভি।
ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ জাভি বলেছেন, ‘আমরা চার বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে যাচ্ছি। এই মুহূর্তটা উপভোগ করার। আমরা দারুন একটি ম্যাচ খেলেছি। দলের সবাই শতভাগ দিয়েছে। বেশ কিছু মুহূর্ত আমরা আধিপত্য দেখিয়েছি। আমি সত্যিই দারুন গর্বিত।’
জানুয়ারিতে জাভি মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছেন। কোচের ঐ সিদ্ধান্তের পর এ পর্যন্ত টানা নয় ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে কাতালান জায়ান্টরা। টিনএজার লামিন ইয়ামাল ও পও কুবারসি বার্সেলোনার ভরসার জায়গায় নিজেদের প্রমান করে চলেছেন। নাপোলির বিপক্ষে এই দুজনই নিজেদের সাধ্যমত দলকে কিছু দেবার চেষ্টা করেছেন। তরুণ এই খেলোয়াড়দের দিকে তাকিয়ে বার্সেলোনা ভবিষ্যতের জন্য স্বস্তি ফিরে পেতেই পারে।
১৭ বছর বয়সী সেন্টার-ব্যাক কুবারসি নাপোলির ইন-ফর্ম তারকা ফরোয়ার্ড ভিক্টর ওশিমেনকে দারুনভাবে প্রতিহত করেছেন। বার্সা অধিনায়ক সার্জি রবার্তো বলেছেন, ‘কুবারসি দুর্দান্ত খেলেছেন। আজ সে-ই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। তার এই পারফরমেন্সে আমরা মোটেই বিস্মিত নই। এই বয়সে এভাবে খেলতে থাকলে কোথায় গিয়ে যে সে থামবে তা সময়ই বলে দিবে। এমন খেলোয়াড়কে বার্সেলোনা আজীবন দলে ধরে রাখতে চায়।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে মূল দলে ১৭ বছর কিংবা তার থেকেও কম বয়সী দুজন খেলোয়াড় অন্তর্ভূক্ত করে বার্সেলোনা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এবারের মৌসুমে অস্থায়ী অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গতকাল সবচেয়ে বেশী ৫০ হাজার বার্সা সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। ফ্রান্সেসকো কালজোনার নাপোলির কোনদিক থেকেই কাতালানদের সাথে পেরে উঠেনি।
ডানদিক থেকে ১৬ বছর বয়সী ইয়ামাল একটু বেশী অপ্রতিরোধ্য ছিল। ১৫ মিনিটে গোলের দেখা পান লোপেজ। ক্যান্সেলোর কাছ বল পেয়ে রাফিনহা কাট-ব্যাক করে দেন লোপেজের দিকে। প্রথম সুযোগেই লোপেজ বল জালে জড়িয়ে স্বাগতিক সমর্থকদের উচ্ছাসে ভাসান। দুই মিনিট পর কাউন্টার এ্যাটাকে নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে ইয়ামাল রাফিনহার দিকে বাড়িয়ে দেন। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের শট পোস্টে লেগে ফেরত আসলে ফিরতি বলে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ক্যান্সেলো। ৩০ মিনিটে ডানদিক থেকে মাত্তেও পলিটানোর ক্রসে রাহমানি গোল করলে নাপোলি ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয়। এরপরপরই নাপোলি প্রায় সমতা ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু গিওভান্নি ডি লোরেঞ্জোর হেড দারুন দক্ষতায় রুখেন দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান।
দ্বিতীয়ার্ধে নাপোলির শুরুটা ভালই হয়েছিল। যে কারনে বার্সেলোনাকে তাদের নিজেদের অর্ধ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মধ্যমাঠ শক্তিশালী ও দলকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এ সময় লোপেজ ও আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনের পরিবর্তে মাঠে নামান সার্জি রবার্তো ও ওরিয়ল রোমেউকে মাঠে নামান জাভি। রাফিনহা ও লিওয়ানদোস্কির শট রুখে দেন নাপোলি গোলরক্ষক এ্যালেক্স মেরেত। ইয়ামাল পোস্টের খুব কাছে থেকে বল জালে জড়ালেও অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। ড্যানিশ উইঙ্গার জাসপর লিন্ডস্ট্রমের হেড অল্পের জন্য গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ৮৩ মিনিটে ইকে গুনডোগান ও সার্জি রবার্তোর যৌথ প্রচেষ্টায় লিওয়ানদোস্কি শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনাকে স্বস্তির গোল উপহার দেন।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :