যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে যাচ্ছেন নাজমুল হাসান পাপন এমপি। ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ৬টি ফেডারেশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিত ফেডারেশনগুলো হলো- ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন, বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশন, রোলার স্কেটিং ফেডারেশন, বাংলাদেশ শরীরগঠন ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিলিয়ার্ড ও স্নুকার ফেডারেশন।
এ ছয় ফেডারেশনের সমস্যা, সম্ভাবনা, তাদের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চান নাজমুল হাসান পাপন। সভায় আমন্ত্রণ পাওয়া ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি, বাংলাদেশ) মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান জানান, ‘মন্ত্রী মহোদয় গতকাল ছয় ফেডারেশনকে ডেকেছিলেন। সভায় আমরা আমাদের ফেডারেশনের যাবতীয় কার্যক্রম, আমাদের সমস্যা, সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার কথা মন্ত্রী মহোদয়কে অভিহিত করেছি। ওনি আমাদের চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়ার কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন।’
ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি দারুণ কাজ করছে। জাতীয়ভাবে সাফল্যের ছোঁয়া তো পাচ্ছেই, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও নিয়মিত পদক বয়ে আনছে। এক সময়কার কোর্ট কাঁপানো শাটলার এবং প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যা খানের নেতৃত্বাধীন প্যারা ব্যাডমিন্টন, রাজিব উদ্দিন চপল-ফয়সাল আহসান উল্লাহদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্যারা আরচারির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্যারা আরচারি অবশ্য ইতোমধ্যে অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতি পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। স্বতন্ত্রভাবে কাজের ফলও পেয়েছে হাতে-নাতে। প্যারা আরচারিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আরচার ঝুমা আক্তার। চলতি বছরের প্রান্তে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হবে প্যারা অলিম্পিক। সেখানে সরাসরি খেলার টিকিট পেয়েছে ঝুমা। এ মাসের শুরুতে আরব আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত ফাজ্জা আন্তর্জাতিক আরচারির কম্পাউন্ড একক ইভেন্টে ঝুমা ১৩৮-১৩৪ স্কোরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল্লাসি তেরেসাকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতে প্যারা অলিম্পিকের টিকিট পান। এর আগে তিনি এশিয়ান প্যারা আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
প্যারা আরচারির চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই প্যারা ব্যাডমিন্টন। এখনো স্বতন্ত্র ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতি না পেলেও একক উদ্যোগে প্যারা শাটলারদের এগিয়ে নেয়ার কাজ দীর্ঘদিন করে যাচ্ছেন জাতীয় কোচ, জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠক এনায়েত উল্যা খান। ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট থেকে এনায়েতের শিষ্য ইমাম হোসেন, জয়তু ধর এবং ইয়ামিন হোসেন ব্রোঞ্জ পদক দেশের জন্য বয়ে এনেছেন। ফেডারেশনের স্বীকৃতি না পেয়ে দারুণ কাজ করছে প্যারা ব্যাডমিন্টন। স্বীকৃতি পেলে তাদের কাজের গতি আরো বাড়বে বলে মন্তব্য ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ। বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়কে গতকালের সভায় বলেছি যে প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাফল্যে কথা। আমাদের তারকা শাটলার এনায়েত উল্যা খানের নেতৃত্বে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে প্যারা শাটলাররা সেই কথা। এনায়েত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্যারা ব্যাডমিন্টনকে দেখভাল করছেন এবং তার মাধ্যমে এই সাফল্য আসছে।’ সুতরাং আমরা যদি পূর্ণ কমিটি করে দিতে পারতাম, তাহলে স্পন্সরের সমস্যা হতো না। এই সমস্যার সমাধান হলে আরো বেশি সাফল্য আসত মন্তব্য এনপিসির মহাসচিব মাকসুদের। সরকারকে প্রাইমারি পর্যায়ে ৮টি প্যারা ফেডারেশনের প্রস্তাব দিয়েছে এনপিসি। এর মধ্যে আরচারি শুধুমাত্র অ্যাসোসিয়েশনের মর্যাদা পেয়েছে। বাকি ৭টি প্যারা ফেডারেশনকে এখনো আনুষ্ঠানিত স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে ক্রীড়ামন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদের।বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, ঠিক একইভাবে প্যারালিম্পিক কমিটিও তাদের কাজকে এগিয়ে নিচ্ছে। একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন এনপিসি। নিজ সংস্থার কার্যক্রম প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ জানান, আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি প্যারালিম্পিক হচ্ছে একটা স্বাধীন সংস্থা। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মতোই। অলিম্পিক যেমন সব ফেডারেশনকে একত্রিত করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা, টুর্নামেন্ট-ইভেন্টগুলো আয়োজন করে, মনিটর করে এবং এশিয়ান গেমস, সাউথ এশিয়ান গেমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে দল পাঠায় প্যারালিম্পিকও সেসব কাজ করে। ট্যালেন্ট হান্ট থেকে ট্রেনিং কার্যক্রম সবই প্যারালিম্পিকের অধীনে পরিচালিত হয়। ফেডারেশনগুলো হলো প্যরালিম্পিকের স্টেক হোল্ডার। আমরা প্যারা ফেডারেশনগুলোর মাধ্যমেই প্যারা অ্যাথলেদের উন্নয়ন-উন্নতির কাজগুলো করছি। প্রাকটিস থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে প্যারা ফেডারেশনগুলো মাধ্যমে ওদের ট্রেনিং দিয়ে জাতীয় দলে অন্তর্ভূক্ত থেকে আন্তর্জাতিক গেমসে পাঠানোর ব্যবস্থা আমরা করছি। সেসব কথাই মন্ত্রীকে জানিয়েছি।’
গতকালের সভায় উপস্থিত প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক সাবেক তারকা শাটলার এনায়েত উল্যা খান বলেন, ‘আমার প্যারা শাটলাররা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে অনেক সাফল্য-পদক বয়ে এনেছেন। ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ স্যারসহ যারা প্যারালিম্পিক কমিটিতে আছেন সকলের সহযোগিতায় প্যারা অ্যাথলেটরা যার যার ইভেন্টে ভালো করছেন। আরচারির মতো আমরাও যদি ফেডারেশন কিংবা অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে স্বীকৃতি পেতাম তাহলে কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পেত, স্পন্সররা এগিয়ে আসত। এতে করে সাফল্য নিয়ে আসাটা আরো সহজ হতো। এখন তো গাঁটের পয়সা খরচ করে সব কিছু পরিচালনা করতে হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে আমরা অনেকদিন পর পূর্ণ মন্ত্রী পেয়েছি। আশাকরি নতুন মন্ত্রী মহোদয় স্যার আমাদের দিকে নজর দেবেন। ওনার সহযোগিতায় ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা অনেক সাফল্য বয়ে আনব।’
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :