বড় অঘটনের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রোববার সেমিফাইনালে কভেন্ট্রির সাথে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৪-২ গোলে জয়ী হয়ে এফএ কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে এরিক টেন হাগের দল।ওয়েম্বলিতে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচটিও ৩-৩ গোলে অমিমাংসিত ছিল। রাসমাস হোলান্ডের গোলে শেষ পর্যন্ত টাই ব্রেকারে ইউনাইটেডের ৪-২ গোলের জয় নিশ্চিত হয়। টেন হাগের দলের জন্য মৌসুমের শেষে এসে এই জয়টা খুব জরুরী ছিল।
দ্বিতীয় টায়ারের দল কভেন্ট্রির বিপক্ষে সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামা ইউনাইটেড ৫৮ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গোলের লিড নেবার পর ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। স্কট ম্যাকটোমিনে, হ্যারি ম্যাগুয়েরে ও ব্রুনো ফার্নান্দেসের গোলে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা ইউনাইটেড যে শেষ পর্যন্ত তিন গোল হজম করে বসবে তা কল্পনাতীত ছিল। সাম্প্রতি সময়ে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচকে কঠিন করা তোলা যেন অভ্যাষে পরিনত হয়েছে রেড ডেভিলসদের। দ্বিতীয়ার্ধে এলিস সিমস ও ক্যালুম ও’হারের গোলে ১৯৮৭ সালের এফএ কাপ বিজয়ী কভেন্ট্রি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। প্রথমার্ধেও যোগ হওয়া সময়ে পেনাল্টি স্পট থেকে হায়ি রাইটের গোলে সমতায় ফিরে কভেন্ট্রি।
ঐ সময় কভেন্ট্রির সমর্থকরা টেন হাগকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আগামীকাল সকালেই তোমাকে ছাঁটাই করা হচ্ছে।’
অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই বেশ চাপের মধ্যে ছিল। দুই দলই পোস্টে বল লাগিয়েছে। এরপর পেনাল্টি শ্যুট আউটে আর পেরে উঠেনি কভেন্ট্রি।ম্যাচ শেষে টেন হাগ বলেছেন, ‘এটা একটি দুর্দান্ত ম্যাচ ছিল, আমার কাছে যা বিস্ময়করও বটে। লম্বা সময় ধরে আমরা ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রন ধরে রেখেছিলাম। এরপর ম্যাচের শেষ ভাগে সব প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। পেনাল্টি শ্যুট আউটে আমরা নিজেদের সক্ষমতার প্রমান দিয়েছি। আমাদের আরো অনেক উন্নতি করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা প্রচুর কথা বলেছি। প্রথমে তোমাকে নিজেকে উইনিং পজিশনে নিয়ে যেতে হবে, এরপর সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।’
কভেন্ট্রি ম্যানেজার মার্ক রবিন্স ১৯৯০ এফএ কাপ বিজয়ী ইউনাইটেডের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন। এই শিরোপাই সাবেক ম্যানেজার এ্যালেক্স ফার্গুসনকে দুই দশকের সাফল্যের ভিত গড়ে দিয়েছিল। কভেন্ট্রি সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাম্পিয়নশীপ প্লে-অফে খেলার স্বপ্নে ধাক্কা খেয়েছে। ওয়েম্বলিতে তারা আন্ডারডগ হিসেবেই খেলতে নেমেছিল। ১২ বারের বিজয়ী ইউনাইটেড ২৩ মিনিটে ডানদিক দিয়ে ম্যাকটোমিনের দারুন ফিনিশিংয়ে এগিয়ে যায়। মার্কাস রাশফোর্ডের একটি শট দারুন দক্ষতায় রুখে দেন কভেন্ট্রি গোলরক্ষক ব্র্যাডলি কলিন্স। ফার্নান্দেসের ক্রস থেকে ম্যাগুয়েরের হেডে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে ব্যবধান দ্বিগুন করে ইউনাইটেড।
কোয়ার্টার ফাইনালে স্টপেজ টাইমের দুই গোলে প্রিমিয়ার লিগের দল উল্ফসকে পরাজি করেছিল কভেন্ট্রি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিছিয়ে থেকেও তাদের বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে। কিন্তু ৫৮ মিনিটে ফার্নান্দেসের ডিফ্লেকটেড শট কলিন্সকে পরাস্ত করলে কভেন্ট্রির ফিরে আসার স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়। যদিও ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। ৭১ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় ফ্যাবিও টাভেরাসের ক্রসে দলের শীর্ষ গোলদাতা সিমস গোল করলে স্বস্তি ফিরে আসে কভেন্ট্রি শিবিরে। আট মিনিট পর আরো এক শোধ করেন ও’হারে। একের পর এক আক্রমনে তারা ইউনাইটেড রক্ষনভাগকে ব্যস্ত করে তুলে। এ সময় ওয়েম্বলিতে শুধুই কভেন্ট্রির সমর্থকদের চিৎকার শোনা গেছে। ৯৫ মিনিটে এ্যারন ফন-বিসাকার হ্যান্ডবলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে রাইট গোল করে দলকে সমতায় ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে ফার্নান্দেসের শট ক্রসবারে লেগ ফেরত আসে। এরপর সিমসের শটও ক্রসবারে লাগলে হতাশ হতে হয় কভেন্ট্রিকে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ভিক্টর টর্প ইউনাইটেড গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে পরাস্ত করলেও ভিএআর প্রযুক্তিতে দেখা গেছে গোলের আগে রাইট অফসাইড পজিশনে ছিল।
কাসেমিরোর প্রথম শটটি সেভ করেন কলিন্স। কিন্তু কভেন্ট্রির হয়ে ও’হারে ও অধিানয়ক বেন শিয়াফ গোল করতে ব্যর্থ হন। আর এতেই হোলান্ডের গোলে ইউনাইটেডের জয় নিশ্চিত হয়।
ফাইনালে ইউনাইটেডের প্রতিপক্ষ নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি। সেমিফাইনালে চেলসিকে ১-০ গোলে পরাজিত ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সিটি। এনিয়ে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মত টানা দুই ফাইনালে একই প্রতিদ্ব›দ্বী মাঠে নামছে। গত বছরের ফাইনালে ইউনাইটেডকে পরাজিত করে শিরোপা জয় করেছিল সিটি।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :