মিলান ডার্বিতে দারুন এক জয় দিয়ে সিরি আ শিরোপা নিশ্চিত করেছে ইন্টার মিলান। পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখে ইন্টারের এই শিরোপা জয়ের নেপথ্য কারিগর সিমোনে ইনজাগির জন্য এটি প্রথম কোন লিগ শিরোপা। সে কারনে ফুটবলীয় কোচিং ক্যারিয়ারে নিজেকে এখন এলিট গ্রুপের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে ইনজাগি দাবী করতেই পারেন।
২৪ বছর আগে ল্যাজিওর খেলোয়াড় হিসেবে সিরি-এ শিরোপা জয় করেছিলেন ইনজাগি। ইন্টারকে এই শিরোপা উপহার দিতে মাঠ ও মাঠের বাইরে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে ইনজাগিতে। কোভিড পরবর্তী চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়া দলটিকে এভাবে টেনে তোলাও সহজ ছিলনা।
বড় ভাই ফিলিপোর তুলনায় ৪৮ বছর বয়সী ইনজাগি খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ারে ততটা সমৃদ্ধ ছিলেন না। এসি মিলান ও জুভেন্টাসের হয়ে তারকা স্ট্রাইকার হিসেবে ফিলিপো দুইবার ইউরোপীয়া চ্যাম্পিয়ন ইতালি বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন। ছোট ভাই ইনজাগিও স্ট্রাইকার ছিলেন। ক্যারিয়ারের বেশীরভাগ সময় খেলেছেন ল্যাজিওতে। একটি লিগ শিরোপা জয়ী ইনজাগিকে ল্যাজিও সমর্থকরা বেশ পছন্দ করতেন।
তবে কোচিং ক্যারিয়ারে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সিমোনে ইনজাগি। ফিলিপো অবশ্য এখানে নিজেকে খুব বেশী প্রমান করতে পারেননি। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে অল্পের জন্য ম্যানচেস্টার সিটির কাছে পরাজয়ের পর খোদ পেপ গার্দিওলা ইনজাগির প্রশংসা করেছিলেন। ইতোমধ্যেই কোচ হিসেবে সিমোনে ইনজাগি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হয়েছেন।
এই শিরোপার আগে ইনজাগি কাপ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশী পরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে ল্যাজিওর হয়ে সিনিয়র দলের কোচের দায়িত্ব শুরু করার পর জিতেছেন তিনটি ইতালিয়ান ও পাঁচটি ইতালিয়ান সুপার কাপ।
সোমবার রাতে সিরি-এ শিরোপা জয়ের পর উচ্ছসিত ইনজাগি বলেছেন, ‘তিন বছরে ছয়টি শিরোপা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল কল্পনা করাও কঠিন। এই পুরো যাত্রার দিকে তাকাতে হবে। এ বছর পুরোটাই আমরা ভাল খেলেছি। কিন্তু আজকের এই জয়ের জন্য অনেকদিনের অপেক্ষা ছিল।’
দুইবারের ইউরোপীয়ান কাপ বিজয়ী হেলেনিও হেরেরা, রবার্তো মানচিনি, গিওভান্নি ট্রাপাত্তোনি ও আরপাড ওয়েসিজের সাথে পাঁচ ম্যানেজারের মধ্যে একমাত্র কোচ হিসেবে ইন্টারের ডাগ আউটে ১০০ কিংবা তার বেশী ম্যাচে জয়ের কৃতিত্ব দেখালেন ইনজাগি।
যুব দলের সাথে কাজ করার পর আট বছর আগে ল্যাজিওর সিনিয়র দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ইনজাগি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রোমান ক্লাবটিকে ইউরোপে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন, জুভেন্টাসের কাছে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে হেওে যান। ইতালির বড় তিন ক্লাব জুভেন্টাস, ইন্টার ও মিলানের কাছে আর্থিক দিক থেকে তখন অন্য ক্লাবগুলো বেশ পিছিয়ে ছিল। ২০১৯ সালে জুভেন্টাসের বিপক্ষে ইতালিয়ান কাপ ও দুটি সুপার কাপ জয়ের পর ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ল্যাজিওকে জায়গা করে দেবার পর সিরি-এ শিরোপা জয়ী ইন্টার থেকে এন্টোনিও কন্টের বিদায়ে ইনজাতির দলভূক্তি নিশ্চিত হয়। তিন বছর আগে ইন্টারে যোগ দিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। রোমেলু লুকাকু ও আচরাফ হাকিমির মত বড় তারকাদের বিদায় দিতে বাধ্য হয় ইন্টার। এই দুই তারকা বিদায়ে ক্লাবের সমর্থকরা দারুনভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তাদের পরিবর্তে ইনজাগি অপেক্ষকৃত কম মূল্যের খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ান। প্রাক-মৌসুমে এটাই ছিল ইনজাগির সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ক্লাবের আর্থিক ক্ষতির দিকটি মাথায় রেখে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এমনকি ৫৭ মিলিয়ন ইউরোতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে প্রথম গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে ছেড়ে দেয় ইন্টার।
তার পরিবর্তে বায়ার্ন মিউনিখের রিজার্ভ গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে দলে ভেড়ায়। ট্রান্সফার ডেডলাইনের আগ পর্যন্ত বেঞ্জামিন পাভার্ড দলে যোগ দেননি। ফ্রি ট্রান্সফার মার্কোস থুরাম আক্রমনভাগে লটারো মার্টিনেজকে ভালই সহায়তা করেছেন। এই জুটি এডিন জেকো ও রোমেলু লুকাকুর অনুপস্থিতি বুঝতে দেয়নি।
এসবই আজ ইন্টারের শিরোপা জয়ের পথে এক একটি ইতিহাস। আর এই ইতিহাস রচনার পিছনে মূল কারিগর ইনজাগি। মাত্র আট বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে এখন যিনি ক্লাব ফুটবলের অন্যতম শীর্ষ কোচ হিসেবে নিজেকে প্রমান করেছেন।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :