ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি, বাংলাদেশ) উদ্যোগে দুদিন ব্যাপী আয়োজিত ‘প্যারা টেবিল টেনিস প্রশিক্ষণ ও টুর্নামেন্ট’ আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) সমাপ্ত হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ উডেন ফ্লোর জিমনেশিয়ামে এবার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে দেশের ১৪টি জেলা থেকে আগত ৩৬ জন (নারী-পুরুষ) প্রতিযোগী অংশ নেন।
হুইল চেয়ার পুরুষ একক, স্ট্যান্ডিং পুরুষ ও নারী একক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পুরুষ এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী একক প্রতিযোগিতা এবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরি থেকে সেরা দুই প্রতিযোগী অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপকে পুরস্কৃত করা হয়। হুইল চেয়ার এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখান মো. রবিউল হোসেন এবং রানার আপ নূর নাহিয়ান। স্ট্যান্ডিং পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন সৌমিক মন্ডল এবং রানার আপ হন সিয়াম। স্ট্যান্ডিং নারী এককে রমা দেবনাথ প্রথম এবং রানার আপ হন মৌয়াজ্জিমা খাতুন। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পুরুষ এককে দিপু চ্যাম্পিয়ন এবং রানার আপ নির্ণয়।
সবশেষ ক্যাটাগরি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী এককে চ্যাম্পিয়ন নিপা এবং রানার আপে পুরস্কার জেতেন ফুল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু এবং ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটির সদস্য ও সাবেক তারকা শাটলার এনায়েত উল্লাহ খান ছিলেন। এছাড়া পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে সহযোগী অধ্যাপক ডা. অজন্তা সাহা এবং গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মো. রাজু আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের জন্য বিভিন্ন সময় সাফল্য, সম্মান-পদক বয়ে এনেছেন প্যারা অ্যাথলেটরা। জাতীয় পর্যায়েই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তারা সাফল্যের স্মারক এঁকেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্টে অলিম্পিকেও ইতিহাস রচনা করেছেন বাংলাদেশের প্যারা অ্যাথলেটরা। চলতি বছর আগস্টে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে স্পেশাল অলিম্পিক ২০২৪। সেখানে ওয়াইল্ড কার্ডের করুনাতে নয়; সরাসরি যোগ্যতা দিয়ে খেলার টিকিট পেয়েছেন বাংলাদেশের প্যারা আরচার ঝুমা আক্তার। এত বড় সাফল্যের পরও প্যারা অ্যাথলেটদের জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট আবাসন, নেই অনুশীলন গ্রাউন্ডও। এই আক্ষেপ তাদের দীর্ঘদিনের।
এ ব্যাপারে এনপিসির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্রীড়াবান্ধব সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কল্যাণে সব সময় নিবেদিত প্রাণ। আজকে আমরা যে প্যারা টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছি সেটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণেই। ওনি প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের উন্নয়নে আমাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন। সেটা দিয়েই আমরা এ কার্যক্রম করছি। আমাদের ক্রীড়ামন্ত্রী মহোদয় নাজমুল হাসানও বিশেষ খেলোয়াড়দের প্রতি অত্যন্ত সদয়, তাদের বিষয়ে অবগত। এটা ঠিক যে আমাদের নিজস্ব কোনো ভেন্যু নেই। আমাদের কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হলে, বিদেশি কোচ আনতে হলে তাদের রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়াগ নেই। তবে সরকার আন্তরিক। আমাদের জন্য কাজ করছেন তারা। আশাকরছি শিগগিরই আমরা নিজস্ব ভেন্যু পাব।’
এবারের আসরে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় বিভিন্ন জেলা থেকে টুর্নামেন্টে অংশ নেন। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ এনপিসির মহাসচিব মাকসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দেখেছি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ১৬ বছর বয়সী একজন প্রতিযোগী সৌমিক সে খুবই চমৎকার খেলেছে। স্ট্যান্ডিং একক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সৌমিকের মধ্যে ভবিষ্যত তারকা হওয়ার অনেক গুণ দেখছি। সৌমিক ছাড়াও সিয়াম, নাহিয়ান, রমাদের মতো ট্যালেন্ট খেলোয়াড়রা এবার অংশ নিয়েছে। তাদের নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তারা আমাদের ট্যালেন্টহান্ট প্রতিযোগিতার অংশ। ভবিষ্যতে তাদেরকে আমরা দেশে এবং দেশের বাইরে উচ্চতর ট্রেনিং দিয়ে আরো উন্নততর হিসেবে গড়ে তুলব।’
প্যারা টেবিল টেনিস খেলোয়াড়রা এবার শুধু টুর্নামেন্টেই অংশ নিচ্ছেন না; তাদের থাকা-খাওয়া থেকে আবাসন এমনকি অনেকের যাতায়াতেও ভূমিকা রাখছে আয়োজকরা। টেবিল টেনিসের অভিজ্ঞ কোচ গোবিন্দ দাসের অধীনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন নাহিয়ান, সৌমিকরা। এ ব্যাপারে হুইল চেয়ার প্যারা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় নূর নাহিয়ান জানান, ‘দুই বছর আগে এই আসরে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। সেবার প্রতিযোগী কম ছিল। কিন্তু এবার অনেক প্রতিযোগী এসেছে। কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ ভালো হচ্ছে। আগামীকাল আমাদের টুর্নামেন্ট শুরু হবে। এবার অনেক ভালো একটা টুর্নামেন্ট হবে, প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :