ইয়ান ভারটোনগেনের শেষ ভাগের আত্মঘাতি গোলে ফ্রান্স সোমবার বেলজিয়ামকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স।
ডাসেলডর্ফে দুই দলের মোকাবেলায় ফ্রান্সই আধিপত্য দেখিয়েছে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় ম্যাচটি প্রায় অতিরিক্ত সময়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে বেলজিয়ামের দূর্ভাগ্যে ভাগ্য খুলে যায় ফ্রান্সের। বদলী খেলোয়াড় রানডাল কোলো মুয়ানির শট বেলজিয়ামের পেনাল্টি এরিয়াতে দূর্ভাগ্যবশত: ভারটোনগেনের ডিফ্লেকটেড হয়ে গোলরক্ষক কোয়েন কাস্টিলসকে পরাস্ত করেন। এই গোলে ২০২২ বিশ^কাপের রানার্স-আপরা শেষ আটের টিকেট পায়। আগামী শুক্রবার হামবুর্গে শেষ আটের ম্যাচে ফ্রান্সের লক্ষ্য থাকবে একটাই তৃতীয়বারের মত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন হবার পথে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।
এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে পেনাল্টির বাইরে গিয়ে কোন গোল করতে পারেনি ফ্রান্স। অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেছিলেন। বাকি দুই গোল এসেছে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কল্যানে। তবে ফ্রান্স তাদের রক্ষনভাগ নিয়ে গর্ব করতেই পারে। এখনো পর্যন্ত মাত্র এক গোল হজম করেছে দিদিয়ের দেশ্যমের দল, সেটাও আবার পেনাল্টি থেকে।
কালকের ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। শক্তিশালী ফরাসি রক্ষনভাগ বেলজিয়ামের তারকা রোমেলু লুকাকুসহ সতীর্থ ফরোয়ার্ডদের পুরো ম্যাচে বাক্সবন্দী করে রেখেছিল। দারুন এক হতাশাজনক টুর্নামেন্ট শেষে বেলজিয়ামকে শেষ পর্যন্ত খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
দুই দলই একে অপরের উপর প্রতিশোধ নিতেই মাঠে নেমেছিল। ২০১৮ বিশ^কাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল বেলজিয়ামকে। ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই ফলাফল এখনো বেলজিয়ামকে পীড়া দেয়। অন্যদিকে তিন বছর আগে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম না থাকলেও শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের কাছে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে হতাশ হয়েছিল দেশ্যম বাহিনী। টানা দুই বিশ^কাপের ফাইনালে খেলা দলটির জন্য এই বিদায় ছিল দারুন হতাশার।
জার্মানিতে আসার আগে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট দল হিসেবে ফ্রান্সকে বিবেচনা করা হচ্ছিল। কিন্তু গ্রুপ পর্বে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি ফ্রান্স। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই নাক ভেঙ্গে যাওয়ায় মাস্ক পড়ে খেলতে নেমে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছেন না এমবাপ্পে। দলের অভিজ্ঞ তারকা আঁতোয়ান গ্রিজম্যানও কোনভাবেই জার্মানির মাটিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
বেলজিয়াম কোচ ডোমেনিকো টেডেসকো গ্রুপ পর্বে দলের হতাশাজনক পারফরমেন্সে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ইয়ানিক কারাসকো ও লোয়িস ওপেন্ডা ছিলেন মূল দলে, কার্যত স্ট্রাইকিং পজিশনে শক্তি বাড়ানোর জন্যই তাদের দলে রাখা হয়েছিল। লুকাকুকে সাহায্য করার জন্যই তারা মাঠে নেমেছিলেন। অধিনায়ক কেভিড ডি ব্রুইনা নিজের পজিশন ছেড়ে কিছুটা উপরে উঠে খেলেছেন। দুই দল মিলিয়ে আক্রমনভাগের এতগুলো প্রতিভা নিজ নিজ দলের হয়ে কাঙ্খিত গোল উপহার দিতে পারছিলেন না। বেলজিয়াম বরং রক্ষনাত্মক কৌশলকেই বেছে নিয়েছিল। প্রথমার্ধে তারা একবারের জন্য ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মেইগনানকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। রাইট-উইংয়ে গ্রিজম্যানের ব্যর্থতায় ফ্রান্স মাঝে মাঝেই বলে পজিশন হারিয়েছে। যদিও প্রথমার্ধে ফ্রান্স বেশ কিছু সুযোগ তৈরী করেছিল।
বিরতির পর উইলিয়াম সালিবা মধ্যমাঠে পজিশন হারালে ডি ব্রুইনা কারাসকোর দিকে বল বাড়িয়ে দেন। কারাসকোর শট দুর্দান্ত ভাবে ব্লক করেন থিও হার্নান্দেজ। ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে লুকাকুর শট রুখে দেন মেইগন্যান। এরপর ডি ব্রুইনার শটটি রুখে দিয়ে মেইগন্যান ফ্রান্সকে রক্ষা করেছেন। ৮৫ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি বেলজিয়ামের। এন’গোলো কান্তে থেকে কোলো মুয়ানি বল পেয়ে টার্গেটে শট নেন। কিন্তু ভারটনগেনের ডিফ্লেকশনে বলের গতি পরিবর্তিত হয়ে গেলে মেইগন্যানের সেই বল আটকানোর কোন সাধ্য ছিলনা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :