ধারণা করা হচ্ছিল ইউরোর ফাইনাল অতিরিক্ত সময়েই গড়াতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে মিকেল অরিজাবাল আর সেটা হতে দিলেন না। দুর্দান্ত এক গোল করে ইংল্যান্ডের হৃদয় ভেঙে স্পেনকে শিরোপা উল্লাসে মাতান। এর মধ্যদিয়ে রেকর্ড ৪র্থ বারের মতো ইউরোর শিরোপা ঘরে তুললো স্পেন। সেই সঙ্গে ইউরো পেলো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১টায় জার্মানির বার্লিনে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
তবে ম্যাচ অতিরিক্ত সময় গড়াতে পারত যদি না স্ট্রাইকার দানি ওলমো গোলরক্ষক হয়ে ইংল্যান্ডের ডেক্লান রাইসের হেড ফিরিয়ে দিতে না পারতেন। একেবারে অন্তিম মুহূর্তে গোললাইন থেকে দারুণ এক সেইভ করেন তিনি। রাইসের হেড ফিরিয়ে দেন পাল্টা হেডে। পরমুহূর্তে তার উল্লাসই বলে দেয় এমন একটা কিছু স্পেনের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ।
এ হারের ফলে আরও একবার শিরোপা কাছে এসে কাঁদতে হলো ইংল্যান্ডকে। এর আগে গতবারও ইউরোর ফাইনাল খেলেছিল ইংলিশরা। সেবার তারা শিরোপা হারিয়েছিল ইতালির কাছে। সেই সঙ্গে ১৯৬৬ সালের পর বড় কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ আরও বড় হলো।
জার্মানির বার্লিনে ম্যাড়মেড়ে প্রথমার্ধে দু’দলই নিজেদের জাল অক্ষত রাখতে সক্ষম হয়। স্পেন আক্রমণে দাপট দেখালেও ইংলিশরা গোল হতে দেয়নি। এতে করে গোলশূন্য সমতায় বিরতিতে যায় দুই দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর অপেক্ষা করতে হয়নি।
দু’দলই সেমিফাইনালের একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে। স্পেন তাদের চিরাচরিত প্রথা বল দখলে এগিয়ে থাকে পুরো প্রথমার্ধ, কিন্তু গোলের দেখা পায়নি তারা। ম্যাচের ১২ মিনিটে ডিবক্সের সামান্য ভেতর থেকে নিকো উইলিয়ামসের গোলমুখে নেয়া শট ব্লক করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার। ১৩ মিনিটের মাথায় নরম্যান্ডের বাইসাইকেল কিক গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।
প্রথমার্ধের ৪৪তম মিনিটে হ্যারি কেইনের ডিবক্সের ভেতরে নেয়া বুলেট গতির শট ব্লক করেন স্পেনের রদ্রি। ৪৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ডেকলাইন রাইসের ক্রসে ফিল ফোডেন বা পায়ের শট নিলে ভালোভাবেই সেটিকে তালুবন্দি করেন উনাই সিমন।
প্রথমার্ধে ৭০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে নিলেও ইংলিশ দুর্গ ভাঙতে পারেনি স্পেন। এসময়ে স্প্যানিশরা ইংলিশদের গোলমুখে ৬টি শট নেয়। যাতে ১টি অন টার্গেট। অন্যদিকে স্পেনের আক্রমণ রুখতে ব্যস্ত থাকা ইংল্যান্ড শট নেয় ৪টি যার মধ্যে অন টার্গেট ১টি।
তবে বিরতি থেকে ফিরেই এগিয়ে যায় স্পেন। ৪৭ মিনিটে লামিন ইয়ামালের ক্রসে বক্সের বাঁ দিক থেকে বল জালে জড়ান নিকো উইলিয়ামস (১-০)। উল্লাসে ভাসে স্পেন। দুই মিনিট পর নিকোই আরেকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু দানি ওলমোর বাঁ পায়ের শট একটুর জন্য ডানদিকের পোস্ট মিস করে।
৬৪ মিনিটে ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহাম বক্সের কাছে স্পেনের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিলেও সেটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। তবে ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। বেলিংহাম বক্সের মধ্যে বল পেয়ে সেটি কৌশলে দিয়ে দেন বাইরে দাঁড়ানো পালমারের কাছে। বাঁ পায়ের দূরপাল্লার শটে চোখ ধাঁধানো গোল করেন চেলসির উইঙ্গার (১-১)।
তবে সেই সমতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে কুকুরেলার পাস থেকে ওয়ান টাচে গোল করেন মিকেল অরিজাবাল। সেই গোল আর শোধ দিতে পারেনি ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরে মাঠ ছাড়ে সাউথগেটের দল। এনিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালে গিয়ে হারল ইংল্যান্ড। ২০২১ সালে ইতালির কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল তারা।
এদিকে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ইউরো শিরোপা জিতেছে স্পেন। ২০১২ সালের পর আবারও এই শিরোপা জিতল লা রোজারা। এর আগে ১৯৬৪ ও ২০০৮ সালেও ইউরোর শিরোপা জিতেছিল স্পেন। ইউরোপের কোন দল চারবার এই শিরোপা জিতেনি।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :