ডাকা হচ্ছে ফ্রান্সের মাইকেল ফেল্পস বলে। অলিম্পিকের চারটি ইভেন্টে নেমে চারটিতেই সোনা জিতেছেন লিয়ঁ মাখচাঁ। আবাক করে দিচ্ছেন সকলকে। অথচ এই সাঁতারু দু`বছরের জন্য সাঁতার থেকেই নাকি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। চার বছর বয়সে সাঁতার শুরু করার পর, সাত বছর বয়সেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাও অদ্ভূত এক কারণে। জানেন সেই কারণটা কী ছিল।
অন্য কিছু নয়, জল মারাত্মক ঠাণ্ডা, তাই সাঁতার ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে লিয়ঁ বলেছেন, ‘আমি তখন খুবই রোগা ছিলাম। তাই পুলে নামলে ঠান্ডা জলে খুব কষ্ট হত। তাই দু`বছর সাঁতার ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ আসলে লিয়ঁ সত্যিই মারাত্মক রোগা ছিলেন ছেলেবেলায়। সেই সঙ্গে ছোটখাটো চেহারার লিয়ঁকে নিয়ে স্কুলের বন্ধুরা হাসিঠাট্টাও করতেন। আর সেই লিয়ঁ-ই এখন অলিম্পিক্সের মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন। আর হবে নাই বা কেন! সাঁতার যে রক্তে রয়েছে।
লিয়র বাবা হাভিয়ের ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক্সে খেলেছিলেন। তিনিই ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম সাঁতারু, যিনি অলিম্পিক্সের ফাইনালে উঠেছিলেন। মা-ও সাঁতারু। স্বাভাবিক ভাবে তিনি বেশি দিন সাঁতার থেকে দূরে থাকতে পারেননি। ঠান্ডা জলের ভয় কাটিয়ে আবার সাঁতারে ফেরেন লিয়ঁ।
তবে ২০২০ সালে তার নেওয়া দু`টি সিদ্ধান্তই পুরো বদলে দেন লিয়র জীবন। তিনি মনোবিদের সাহায্য নেন। এবং নিজের কোচ বদল করেন। মনোবিদের সাহায্য নেওয়ার আসল কারণটি ছিল, মাঝেমাঝেই কিনি পুলের মধ্যে চাপে পড়ে যেতেন। লিয়ঁর দাবি, ‘আমি থমাস সামুটের কাছে যাই। উনি খুব নামকরা মনোবিদ। মাঝেমধ্যেই আমি চাপে পড়ে যেতাম। তখন সাঁতার কাটতে পারতাম না। থমাস আমাকে শেখান, কী ভাবে পুলে নেমে আনন্দে থাকব। ওর পদ্ধতি আমাকে খুব সাহায্য করেছে।’
এর পর নিজের আইডল ফেল্পসের কোচ বব বওমানের কাছে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন লিয়ঁ। বব বওমানের হাত ধরে জীবনটাই বদলে যায় তাঁর। এদিকে ববও বুঝতে পারেন, লিয়ঁর মধ্যে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, অনেক সময় ফেল্পসের থেকেই কম সময়ে সাঁতার শেষ করতেন লিয়ঁ। বব একটি সাক্ষাৎকারে বলেওছিলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যেই লিয়ঁকে চ্যালেঞ্জ করতাম। ফেল্পসের থেকে কম সময়ে সাঁতার শেষ করার চ্যালেঞ্জ দিতাম। লিয়ঁ ভয় পেত না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফেল্পসকেও টপকে যেত।’ সেই সময় ফেল্পসের সঙ্গেও দেখা হয় লিয়ঁর। জলে কী ভাবে গতি আরও বাড়ানো যায় তার কিছু পদ্ধতি লিয়ঁকে শেখান তিনি। সেই পরামর্শ কাজে লাগে ফরাসি সাঁতারুর।
গত রবিবার ২০০ মিটার মেডলিতে সোনা জিতেছিলেন লিয়ঁ। তার পরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জেতেন তিনি। শেষে ৪০০ মিটার মেডলিতে সোনা জিতে শেষ করেন লিয়ঁ। ২০০ মিটার মেডলিতে ফেল্পসের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন লিয়ঁ। লিয়ঁ ফ্রান্সের একমাত্র সাঁতারু, যিনি অলিম্পিক্সে চারটি সোনা জয়ের নজির গড়েছেন। ফেল্পস ও মার্ক স্পিৎজের পরে তিনি বিশ্বের তৃতীয় সাঁতারু যিনি এই কীর্তি করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :