বিশ্বের ক্রীড়া ফেডারেশনের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার অধীনেই থাকে সকল দেশের ফুটবল ফেডারেশন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সবাইকে মানতে হয় নিয়ম। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি ফেডারেশনগুলোর দায়িত্বে থাকেন। মেয়াদ শেষের আগে কাউকে জোরপূর্বক পদ থেকে সরানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে হস্তক্ষেপে যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এমনকি নিষেধাজ্ঞাও জারিও করতে পারে ফিফা।
এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার।
কাজী সালাউদ্দিনের বাফুফে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের দাবিতে রোববার কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস নামের সংগঠন। এরই অংশ হিসেবে রোববার বাফুফে ভবনের গেটের বাইরে সমর্থকদের সংগঠনটি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এরপর সংগঠনটির সদস্যরা ফেডারেশন সম্পাদক তুষারের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
পরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা (আলট্রাস) আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বার্তাটা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাকে বলেছেন। আমার কাজ হবে সদস্যদের জানানো। অনেকেই বলছেন যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একটা জায়গা। আরেকটা জায়গা হচ্ছে বাফুফেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ করা যাবে না। এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এটা অনেকেই বোঝেন না। আমি এটা গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই। ফিফা কিন্তু অফিশিয়ালি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে।’
‘দেশবাসী ও ফুটবলপ্রেমী যারা রয়েছেন সবাইকেই আমি বলতে চাই, সামনে আমাদের পাঁচটা টুর্নামেন্ট রয়েছে। নারীদের সাফে খেলা রয়েছে। আমাদের দলবদলের কার্যক্রমও চলে আসে। দলবদলের সময় বাড়াতে চেষ্টা করছি । যদি কোনো কারণে নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে এই খেলোয়াড়গুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তারা একটা মৌসুম খেলতে পারবে না। আমরা চাচ্ছি, দেশের ফুটবল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবাই ফুটবলকে ভালোবাসে। আমি এইও জায়গা থেকেই বলবো, কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ যেন না আসে। বাফুফেকে তার নিজস্ব গতিতেই চলতে দেওয়া হয়।’
বাফুফের বর্তমান মেয়াদ শেষ হতে বেশিদিন বাকি নেই। আগামী অক্টোবরে হবে নির্বাচন। বিষয়টি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ফিফার গাইডলাইন অনুসরণের অনুরোধ করেন তুষার।
তার ভাষ্য, ‘সামনে অক্টোবরে বাফুফে নির্বাচন। ২৬ অক্টোবর শিডিউল আছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সব সুযোগ রয়েছে। এমন না যে প্রক্রিয়া সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কারো যদি কোনো দাবি থাকে, তারা আসুক ও নির্বাচন করুক। গণতান্ত্রিকভাবেই বাফুফের দায়িত্ব গ্রহণ করুক।’
দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নানা প্রতিষ্ঠানের বড় পদগুলোতে চলছে রদবদল। নানা মহল থেকে জোরালোভাবে উঠছে পদ না ছাড়া ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার দাবি। কাজী সালাউদ্দিনের সরে যাওয়ার দাবিটিও তাই জোরালো হয়েছে। এরই মধ্যে ফিফার নজরে বিষয়টি এসেছে বলেও জানালেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক।
‘বাংলাদেশের কী হচ্ছে তা নিয়ে ফিফার আঞ্চলিক ম্যানেজার খোঁজ-খবর রাখছেন। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, সব ঠিক আছে কিনা। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই দিয়েছি। ফুটবল যারা ভালোবাসে তারাই করেছে। চাইলে নিরাপত্তার বাড়ানোর কথা বলতে পারতাম। কিন্তু এটা চাই না। আমরা জানি তারা ফুটবল ভক্ত, উন্নয়নই চাচ্ছে।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতীয় দল ঘরের মাঠে খেলতে না পারলে ফিফা উইন্ডোতে খেলানোর কথা বাফুফে ভাবছে বলে তুষার সাংবাদিকদের বলেন। ফেডারেশন কর্তাদের অনেকেই ক্ষমতার পালাবদলের পর অফিসে না আসা প্রসঙ্গে তিনি নিরাপত্তাজনিত বিষয়টিই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে আলট্রাসের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান অভি বলেন, ‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে সমস্যা হবে না। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হলে সেটা নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার কারণ হতে পারে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও সরকারের পক্ষ থেকে চাপ আসলে তখন ফিফা সেটি হস্তক্ষেপ হিসেবে ধরতে পারবে। আমাদের এটা কখনোই ফিফা হস্তক্ষেপ হিসেবে নেবে না। আব্দুস সালাম মুর্শেদী যেভাবে পদত্যাগ করেছে সেভাবে উনি পদত্যাগ করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আগামী নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনসহ আমরা যাদের কথা বলছি, তারা যেন নির্বাচনে না আসেন। আমরা শক্তভাবে সেটা প্রতিহত করবো।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :