অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশের সেরা দুই খেলা ক্রিকেট ও ফুটবলের পরিবর্তন চাইছেন অনেকে। সেই পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সুজন ভূঁইয়া বলেন, দেশে একনায়কতন্ত্র চর্চার সুযোগ থাকবে না। একই সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গন থেকে দুর্নীতি ও রাজনীতি দূর করার ঘোষণা দেন তিনি।
রোববার (১৮ আগস্ট) সকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মলেনে নিয়মিতভাবে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় ধন্যবাদ দিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা এরই মধ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও অন্যায়ের অভিযোগগুলো রয়েছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি। আপনারা সেগুলো খুঁজে বের করে মিডিয়ায় প্রকাশ করছেন। আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়গুলোতে আমরা তদন্ত করব এবং যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, এজন্য আমি এরই মধ্যে বিসিবির সংশ্লিষ্ট এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের প্রত্যেক ফেডারেশনের যে গঠনতন্ত্র আছে, সেগুলো (গঠনতন্ত্র) যেন গণতান্ত্রিক হয়, একনায়কতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ না থাকে, সেগুলোও প্রভাবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
ক্রিকেট ছাড়াও দেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত করার কথা জানান তিনি, ‘খেলাধুলাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার একটা এজেন্ডা আমাদের আছে। সেজন্য আমরা একটা সার্চ কমিটি গঠন করে দেব যারা প্রত্যেকটা ফেডারেশনের বর্তমান অবস্থা দেখবে। যারা কাজ করছেন, যারা দায়িত্বশীল আছেন, তারা আছেন কিনা (দায়িত্বে) এবং তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, কিসের ওপর ভিত্তি করে সেখানে আছেন, সেগুলো নিয়ে তারা (সার্চ কমিটি) প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। যে খেলার সঙ্গে যিনি সংযুক্ত এবং কাজ করে আসছেন, তাদের দিয়েই ফেডারেশনগুলো ঢেলে সাজাব। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সর্বোচ্চ কমিয়ে আনার চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যে পাওয়ার লক্ষ্যে স্পোর্টস ইন্সটিটিউট তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
খেলোয়াড়দের বিজ্ঞান সম্মত সুযোগ সুবিধা, ক্রীড়া সামগ্রিক সফলতা অর্জন, ক্রীড়াবিদদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া কৌশল ও নেতৃত্ব গুনের উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ইন্সটিটিউটের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
খেলাধুলায় বিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে যেসব দেশ সাফল্য পাচ্ছে তাদের মত সাফল্যের আশা করা হচ্ছে। এ নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেছেন,`বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ক্রীড়াবিদ তৈরি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঁচু মানের ফলাফলের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খ্যাতনামা স্পোর্টস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া বিশেষায়িত স্পোর্টস সেবা এবং অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে। যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ফ্রান্সের মতো দেশগুলো স্পোর্টস সাইন্সের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যে ফলাফল পেয়েছে সেটা নিশ্চিকরণের জন্য এই ইন্সটিটিউট তৈরি করা হবে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) স্পোর্টস সাইন্স ইন্সটিটিউট রয়েছে। সেটার মানোন্নয়ন না করে একদম নতুন একটি ইন্সটিটিউট কেনো? প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন,`আমি যতদুর জানি, বিকেএসপিতে যেটা আছে সেটা তেমন সক্রিয় না। সেটা সক্রিয় করা হবে এবং এর বাইরে আরো কি কি সংযোজন করা যায় সেসব নিয়েই নতুন ইন্সটিটিউট হবে।` বিকেএসপিতে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।
এরপর আর কোনো খেলোয়াড় সেখানে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের সুযোগ পায় না। কিন্তু একজন খেলোয়াড় যখন পারফরম্যান্সের চুড়ান্ত পর্যায়ে থাকে তখনো যেনো প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেই ভাবনা থেকেই এই ইন্সটিটিউট।
আসিফ মাহমুদ আরো বলেছেন,`বিকেএসপিতে তো এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে। সেখানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়। কিন্তু পারফরম্যান্সের চূড়ান্ত পর্যায়ের জায়গায় আমাদের দুর্বলতা আছে। যার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান নেই। যেকারনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন আমাদের ক্রীড়াবিদরা যান তখন অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনা। ব্যর্থ হই। সেসময় ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য স্পোর্টস ইন্সটিটিউটের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একই সাথে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিকল্প কর্মসংস্থান, সেগুলোর জন্য প্রশিক্ষণের জন্য এই প্রকল্প।`
এই ইন্সটিটিউটে প্রশিক্ষণে কারা বা কতজন সুযোগ পাবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়। শিগগিরই একটি কমিটি গড়ে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে জানালেন উপদেষ্টা,`প্রাথমিক ঘোষণা আজ দিলাম। আমরা একটা কমিটি গড়ব। কার্যক্ষেত্র এখানে কি হবে এবং কারা এখানে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে সেটা তারা ঠিক করবে।` কারা প্রশিক্ষণ দেবেন এখানে? উপদেষ্টা জানালেন,`আমরা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। দেশে সেরকম কাউকে না পেলে বিদেশ থেকে আমরা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়ে আসব।`
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :