প্যারা ব্যাডমিন্টনে বাংলাদেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বেশ কিছু সাফল্য বয়ে এনেছে দেশের এ প্যারা ইভেন্টটি। গত বছর নভেম্বরে ‘হিউলিক দাইহাৎসু জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট‘ থেকে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জেতে বাংলাদেশ। এসএল৪ ক্যাটাগরিতে খেলা জয়তু ধর এবং মোহাম্মদ আলী ইমামের হাত ধরে আসে সেই সাফল্য। তবে পদক জেতার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন এনায়েত উল্যা খান। যিনি ওই আসরে কোচ এবং ম্যানেজার দুই ভূমিকাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
একই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গতকাল ১৯ অক্টোবর আবারো জাপানে পা রেখেছে বাংলাদেশ। দুই শিষ্য জয়তু এবং ইমামকে নিয়ে এখন জাপানে অবস্থান করছেন এক সময়কার কোর্ট কাঁপানো তারকা শাটলার, জাতীয় দলের সাবেক কোচ এবং বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টনের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত। আগামী ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে এবারের আসর। চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। চলতি আসরে পদক ধরে রাখার প্রত্যয়ের পাশাপাশি আরো বড় সাফল্য চোখ রাখছেন এনায়েতের শিষ্যদ্বয় ইমাম এবং জয়তু। একই সুরে সুর মেলান গুরু এনায়েতও। বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র জাপান। দীর্ঘ ৫০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এই সম্পর্ক বলবৎ। দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ প্যারা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট।’ ওই আসরে বাংলাদেশের দুই প্যারা শাটলার আলী ইমাম হোসেন এবং জয়তু ধর নজর কাড়েন জাপান কর্তাদের। সেই সূত্র ধরে ইমাম এবং জয়তুর সুযোগ মেলে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘হিউলিক দাইহাৎসু জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে’ খেলার। জাপান সরকারের অর্থায়ানে আসরে অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের সার্বিক দিক সম্পর্কে জাপান থেকে মুঠোফোনে এনায়েত উল্যা খান জানান, `জাপানের সার্বিক সহযোগিতা এবং যাবতীয় খরচে টুর্নামেন্টটিতে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত। খেলোয়াড় থেকে কোচ-কর্মকর্তা হয়েছি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর একজন খেলোয়াড় নিজেকে একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। আমাদের সময় এটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক কিছুই সহজতর হয়েছে। জাপানে যে দুজন প্লেয়ার খেলতে এসেছে ইমাম এবং জয়তু- দুজনই বেশ ভালোমানের শাটলার। তাদের হাত ধরে গত বছর আমরা এই টুর্নামেন্ট থেকে পদক জিতেছি। দুজনই ব্রোঞ্জ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আশাকরি এবারোও তারা ভালো ফল করবে। তারা এসএল৪ ক্যাটাগরিতে অংশ নিবে। প্যারা ব্যাডমিন্টনের আন্তর্জাতিক আসরগুলোর মধ্যে জাপানে এই টুর্নামেন্ট প্রথম সারির আসর। বিশ্বের প্রায় ৪১টি দেশ এতে অংশ নিচ্ছে।‘ এনায়েত উল্যা খান আরো বলেন, ` জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। গত বছর আমরা যখন এই টুর্নামেন্ট থেকে পদক জিতেছিলাম। এই সাফল্যের কারণে তখন বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের রাষ্ট্রদূত আমাদেরকে তার বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ইমাম, জয়তু এবং ইয়ামিনকে (ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টনে পদকজয়ী) সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন সেখানে আমাদের জন্য ডিনার পার্টিসহ বড় ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। একমাত্র দেশ হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। একইভাবে এবারো আমাদের জন্য গ্র্যান্ড রিসিপশনে আয়োজন রেখেছে জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন।‘
জাপানে থাকা দুই প্যারা শাটলার ইমাম এবং জয়তু জানান, ‘আমরা গত বছর এই টুর্নামেন্ট থেকে পদক জিতেছি। সেবার ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। এবার আরো উঁচুতে চোখ আমাদের। জাপান প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনকে ধন্যবাদ আমাদেরকে আবারো টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এনায়েত স্যার না থাকলে আমরা এই আসরে খেলার সুযোগ পেতাম না। স্যার আমাদের জন্য অনেক কাজ করছেন। পূর্বেও করেছেন, এখনো করে যাচ্ছেন। জাপানে নিয়ে আসা থেকে আমাদের কোর্টে কিভাবে খেলতে হবে, কিভাবে খেতে হবে, কোথায় যাওয়া যাবে, কোথায় যাবে না- এসব বিষয়ে পূঙ্খানুপূঙ্খ নির্দেশনা প্রদান করছেন। জাপানে এখন পর্যন্ত আমরা সুস্থ আছি, ভালো আছি। ২২ অক্টোবর থেকে টুর্নামেন্ট শুরু হবে। আশাকরি টুর্নামেন্টে ভালো কিছুই হবে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :