চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে বায়ার্নকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করে কাতালানদের জয়ের নায়ক ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনিয়া।বাভারিয়ানদের বিপক্ষে তাদের আগের জয়টি এসেছিল ২০১৫ সালের মে মাসে। সেবার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ক্যাম্প ন্যুতে ৩-০ গোলে জিতেছিল স্প্যানিশ দলটি।
বায়ার্নের কাছে টানা ছয় হার দেখেছে বার্সেলোনা, এই সময়ে গোল খেয়েছে ২২টি, করেছে মাত্র চারটি। এর মধ্যে চার বছর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলে হারের লজ্জাও পেতে হয়েছিল। বার্সা এবার প্রতিশোধ নিলো দারুণ আক্রমণাত্মক পারফরম্যান্স দেখিয়ে।
২০১৯-২০ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মান ক্লাবটির কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল বার্সেলোনা। তখন বায়ার্নের কোচের দায়িত্বে থাকা হান্সি ফ্লিক এখন আছেন বার্সার ডাগআউটে। তার অধীনেই বায়ার্নের বিপক্ষে ভুলে যাওয়া জয়ের স্বাদ মিলল স্বাগতিকদের।
গত ৩১ অগাস্ট লা লিগায় রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে পেশাদার ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছিলেন রাফিনিয়া। দুই মাস না যেতেই আরও একটি হ্যাটট্রিক হয়ে গেল তার। তিনি গোলের সূচনা করার পর ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন সমতা টানেন লড়াইয়ে। এরপর পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ত লেভানদোভস্কি ফের এগিয়ে দেন বার্সাকে। প্রথমার্ধে ব্যবধান আরও বাড়ানো রাফিনিয়া দ্বিতীয়ার্ধে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক।
মাত্র ৩৯ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা বার্সেলোনা পাল্টা আক্রমণনির্ভর কৌশলে খেলে। তারা গোলমুখে ১২টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে চারটি। সবকটিই সফল হয়। বিপরীতে, ভিনসেন্ট কোম্পানির শিষ্যদের ১১টি শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে। হাই লাইন ডিফেন্স বেছে নেওয়ার মাশুল দিতে হয় তাদের। রক্ষণের পেছনে অনেক জায়গা পেয়ে সুযোগ কাজে লাগায় বার্সেলোনা।
প্রথম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় স্বাগতিকরা। মাঝমাঠ থেকে ফারমিন লোপেজের থ্রু বল ইয়োশুয়া কিমিখ ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলেও পারেননি। কিমিখের পা ছুঁয়ে যাওয়া বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাফিনিয়া। এরপর নিজের ছায়া হয়ে থাকা গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যারকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের গড়ানো কোণাকুণি শটে খুঁজে নেন জাল।
গোল হজমের পর বায়ার্ন তা শোধ করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। দশম মিনিটে গোলরক্ষক ইনাকি পেনিয়াকে ফাঁকি দিয়ে কেইন গোল করলেও তা বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। তবে আট মিনিট পর সেই ক্ষতে প্রলেপ পড়ে। উইঙ্গার সার্জ গ্যানাব্রির ক্রসে চমৎকার ভলিতে ম্যাচের স্কোরলাইন ১-১ করেন কেইন। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিন ম্যাচে এটি তার পঞ্চম গোল। গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি।
দমে না যাওয়া বার্সা বারবার হানা দিতে থাকে প্রতিপক্ষের রক্ষণে। ২৫তম মিনিটে লেভানদোভস্কির দূর থেকে নেওয়া শট পোস্ট ঘেঁষে যায়। পরের মিনিট নয়্যারের ভুলে অল্পের জন্য গোল পাননি সুযোগসন্ধানী লামিন ইয়ামাল। জমে ওঠে লড়াই।
৩৬তম মিনিটে আবার লিড নেয় বার্সেলোনা। ডিফেন্ডার কিম মিন-জে ঠিকঠাক হেড করতে পারেননি ইয়ামালের ক্রসে। কিমের পেছনে থাকা মিডফিল্ডার ফারমিন ডি-বক্সে ঢোকার পর নয়্যারকে এগিয়ে আসতে দেখে ফ্লিক করেন। সৌভাগ্যক্রমে বল চলে যায় বাঁদিকে ফাঁকায় থাকা লেভানদোভস্কির কাছে। লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল করেননি তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে তেজ দেখায় বায়ার্ন। ৫০তম মিনিটে ফরোয়ার্ড মাইকেল ওলিসের প্রচেষ্টা রক্ষণভাগে প্রতিহত হওয়ার পর জোয়াও পালিনিয়ার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে টেকেনি তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত। ছয় মিনিট পরই আবার গোলের উল্লাসে মাতে বার্সেলোনা। ইয়ামালের থ্রু বল ধরে দ্রুতগতিতে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রাফিনিয়া। কোণাকুণি শটে ঝাঁপিয়ে পড়া নয়্যারকে পরাস্ত করে স্বাদ নেন হ্যাটট্রিকের।
বাকি সময়ে কোনো দলই গোলরক্ষকদের তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্সার মুখোমুখি হলেই যেভাবে জ্বলে উঠত বায়ার্ন, সেটার ধারেকাছেও যেতে পারেনি তারা। জামাল মুসিয়ালা-কিংসলে কোমান-লেরয় সানেরা বদলি হিসেবে নামলেও কাজ হয়নি।
তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আসরের লিগ পর্বের পয়েন্ট তালিকার ১০ নম্বরে উঠেছে বার্সেলোনা। মোনাকোর কাছে হার দিয়ে শুরুর পর গত ম্যাচে তারা ইয়ং বয়েজকে উড়িয়ে দেয় ৫-০ গোলে। অন্যদিকে, সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ২৩ নম্বরে নেমে গেছে বায়ার্ন। প্রথম ম্যাচে দিনামো জাগরেবকে ৯-২ গোলে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আগের ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলার কাছে হেরে যায় তারা।
লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হওয়ার আগে এমন জয় নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে বার্সাকে। আগামী শনিবার রাতে এবারের মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে নামবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। রিয়ালের মাঠে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হবে ম্যাচটি। লিগে ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সা। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে রিয়াল।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :