আগামীকাল পাকিস্তানের মাটিতে পর্দা উঠছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির কোন ইভেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ভারত ও শ্রীলংকার সাথে যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিলো পাকিস্তান। এরপর আইসিসির আর কোন ইভেন্ট আয়োজনের সুযোগ পায়নি দেশটি।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। করাচি জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শুরু হবে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি। জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করতে চায় পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড উভয় দলই।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে সরকার থেকে অনুমতি না পাওয়ায় পাকিস্তান সফরে যাবেনা ভারতীয় ক্রিকেট দল। তাই হাইব্রিড মডেলে অনুষ্ঠিত হবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। নিজেদের ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে খেলবে ভারত। টুর্নামেন্টের বাকী সাত দেশ পাকিস্তানের মাটিতে নিজেদের ম্যাচগুলো খেলবে। শুধুমাত্র ভারতের বিপক্ষে ম্যাচগুলো দুবাইয়ে খেলবে।
আট দলের টুর্নামেন্টে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সাথে আছে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপের দলগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান। দুই গ্রুপের সেরা চার দল সেমিফাইনাল খেলবে। ৯ মার্চ ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে এই প্রতিযোগিতার।
পাকিস্তানের তিন ভেন্যু করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোর এবং নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এবারের আসরে মোট ১৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে । সবগুলো ম্যাচই হবে দিবা-রাত্রির।
দীর্ঘদিন পর ঘরের মাঠে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করতে পারায় রোমাঞ্চিত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি মহসিন নাকভি। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইসিসি ইভেন্ট। পাকিস্তানের জন্য এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে যাচ্ছে। আতিথেয়তা ও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর এটাই সেরা সুযোগ পাকিস্তানের। এখানে খেলতে আসা দলগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহ দারুণ সময় পার করবে। এই সফর তাদের জন্য উপভোগ্য হবে।’
এছাড়াও দীর্ঘ আট বছর পর মাঠে ফিরছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিলো পাকিস্তান। ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
এবার ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শিরোপা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তান। দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর পাকিস্তানের মাটিতে কোন আইসিসির ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। এটি নিয়ে আমরা সবাই দারুন উচ্ছসিত। পাশপাশি মাঠের লড়াইয়ে নামতে আমরা মুখিয়ে আছি। নিজেদের সেরা পারফরমেন্স প্রদর্শনে আমরা প্রস্তুত। শিরোপা ধরে রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিরোপা ধরে রাখা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট হওয়ায় আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি। পরিচিত কন্ডিশনে সব দলই বাড়তি সুবিধা পায়। আমরাও ব্যতিক্রম নই। কিন্তু আসল বিষয় হলো, ব্যাট-বল হাতে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। দলের জয়ের জন্য অবদান রাখতে হবে, তাহলেই সাফল্য ধরা দিবে।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে সতর্ক রিজওয়ান। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। ভালো ছন্দে আছে। সদ্য ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছে তারা। সিরিজে আমরা দু’বার নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছি। এজন্য নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক । তারপরও জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে চাই আমরা।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানকে দু’বার হারিয়ে আত্মবিশ্বাসী নিউজিল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে আবারও পাকিস্তানকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক জয়ের স্বাদ নিতে চায় কিউইরা।
নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার বলেন, ‘শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু করবো। প্রথম ম্যাচের স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের। ম্যাচটি আমাদের জন্য সহজ হবে না। পাকিস্তান খুবই শক্তিশালী দল। তাদের দলে বিশ্ব সেরা ব্যাটার-বোলার আছে। তবে সদ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে দু’বার জিতেছি আমরা। ঐ দু’টিই জয়ই আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। আশা করি টানা তৃতীয় ম্যাচে মত পাকিস্তানকে হারাতে সক্ষম হবো আমরা।’
এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১১৮বার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড। জয়ের পাল্লা ভারী পাকিস্তানের দিকে। ৬১টি ম্যাচ জিতেছে তারা। ৫৩ ম্যাচে জয় আছে নিউজিল্যান্ডের। ১টি ম্যাচ টাই ও ৫টি পরিত্যক্ত হয়।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :