ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ে ইতিহাস গড়েই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি শুরু করলো অস্ট্রেলিয়া। জস ইংলিশের অপরাজিত ১২০ রানের ওপর ভর করে ১৫ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অজিরা।নিজের মাতৃভূমির বিপক্ষেই এমন একটি ইনিংস খেললেন তিনি! ঘরের শত্রুই যখন বিভিষণ, তখন অস্ট্রেলিয়ার জয় আর ঠেকায় কে? গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বেন ডাকেটের রেকর্ডগড়া ইনিংসে ৩৫১ রানের রেকর্ড সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। সেই রান তাড়া করতে নেমে নিজের মাতৃভূমির বিপক্ষেই হার না মানা এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন জস ইংলিশ।
১৯৯৫ সালের ৪ মার্চ ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্ম জশ ইংলিশের। তার ক্রিকেটের হাতেখড়ি জন্মভূমি ইংল্যান্ডেই। ইয়র্কশায়ার একাডেমিতেও তিনি ক্রিকেট খেলেছেন। সেই ইংলিশের সেঞ্চুরিতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ১?? রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তিনি।
টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে এদিন রেকর্ডবুকে নাম লেখান ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট। ১৪৩ বলে খেলেন ১৬৫ রানের ইনিংস, যা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। শুধু তাই নয়, নিজের ওডিআই ক্যারিয়ারেও এটি তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। রেকর্ড এখানেই শেষ নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও করে ইংল্যান্ড। তবে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করে অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশদের ৩৫১ রান চেজ করে জয় তুলে নেয় অজিরা।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটারকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ৫ বলে ৬ রান করা ট্রাভিস হেডকে সাজঘরে ফেতর পাঠান জফরা আর্চার। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে শিকার করেন মার্ক উড। ৬ বলে ৫ রান করে ডাকেটের হাতে ক্যাচ দেন এই ব্যাটার। স্কোরবোর্ডে ২৭ রান তুলতেই এই দুই ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে অজিরা।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে শর্ট এবং লাবুশেনের ব্যাটে চাপ সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। ৪৫ বলে ৪৭ রান করে লাবুশেন আউট হলে ভাঙে তাদের ৯৫ রানের জুটি। আদিল রশিদের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। এরপর ম্যাথিউ শর্টও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬৬ বলে ৬৩ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরান লিভিংস্টোন।
১৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন খাদের কিনারায় অস্ট্রেলিয়া। জশ ইংলিশ এবং অ্যালেক্স ক্যারি সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। দুজনের জুটি থেকে আসে ১৪৬ রান। কার্সের বলে মিড অফে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে অ্যালেক্স ক্যারি ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশদের শুরুটাও খুব একটা ভালো হয়নি। স্কোরবোর্ডে ১৩ রান যোগ হতেই ফিলিপ সল্টের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। বেন দ্বারশুইশের বলে অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে অজি বোলারদের একাই শাসন করতে থাকেন বেন ডাকেট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান এখন তার দখলে। এর আগে ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অ্যাস্টলে। ২০০২ সালে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন ১৪৫ রান। এতদিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে যৌথভাবে তাদের দুজনের ১৪৫ রানের ইনিংসটাই ছিল সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত।
এদিন বেন ডাকেট এবং জো রুট ছাড়া আর কোনও ব্যাটার নিজেকে তেমনভাবে মেলে ধরতে পারেননি। ৭৮ বলে ৬৮ রান করে আউট হয়েছেন রুট। অ্যডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ-এর শিকার হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।
তিন নম্বরে নামা জেমি স্মিথ আউট হয়েছেন ১৩ বলে ১৫ রান করে। হ্যারি ব্রুকও ব্যর্থ হয়েছেন এদিন। ৬ বলে ৩ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যারির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।
জস বাটলার উইকেটে থিতু হয়েও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২১ বল খেলে ২৩ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান ম্যাক্সওয়েল। লিয়াম লিভিংস্টোন ফিরেছেন ১৪ রান করেই। দ্বারশুইসের বলে নাথান এলিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। শেষ দিকে জফরা আর্চারের ১০ বলে ২১ রানের ক্যামিওতে বড় সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৫১ রান সংগ্রহ করে তারা।
অজিদের হয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন বেন দ্বারশুইস। এছাড়া জাম্পা পেয়েছেন ২ উইকেট এবং ম্যাক্সওয়েল নিয়েছেন ১টি উইকেট।
একুশে সংবাদ// এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :