আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থাগুলির কাজকর্মে বিরক্ত হয়ে এ বার বিদ্রোহ করলেন টেনিস খেলোয়াড়েরা। নেতৃত্বে নোভাক জোকোভিচ। তাঁর তৈরি আন্তর্জাতিক টেনিস খেলোয়াড়দের সংগঠন পিটিপিএ মামলা করল চার টেনিস সংস্থার বিরুদ্ধে। মূলত খেলোয়াড়দের প্রতি বিমাতৃসুলভ মানসিকতার প্রতিবাদ করে মামলা করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কের ইউনাইটেড স্টেটস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
১৬৩ পাতার নথিতে বলা হয়েছে, টেনিস খেলোয়াড়েরা এখন কর্তাদের কারচুপির অংশ হয়ে গিয়েছেন। নিজেদের টেনিসজীবন এবং ব্র্যান্ডের প্রতিও তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই। বিরোধিতা করা হয়েছে সূচি, র্যাঙ্কিং এবং ছবির স্বত্বের নিয়মেরও। জোকোভিচ ছাড়াও তাঁর সংস্থার ১২ জন খেলোয়াড় মিলে মামলা দায়ের করেছেন। তার মধ্যে সহ-সংগঠক ভাসেক পসপিসিল এবং নিক কিরিয়স রয়েছেন। ছেলেদের টেনিস সংস্থা (এটিপি), মেয়েদের টেনিস সংস্থা (ডব্লিউটিএ), আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা (আইটিএফ) এবং আন্তর্জাতিক টেনিস সংহতি সংস্থার (আইটিআইএ) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
২০২০ সালে গঠিত হওয়া পিটিপিএ খেলোয়াড়দের ক্ষমতাবৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের উপর সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণ কমানোর চেষ্টা করছে। যদিও এটিপি সেই দাবি খারিজ করে জানিয়েছে, ভুল তথ্য দিয়ে টেনিসবিশ্বকে বিভাজিত করতে চাইছে পিটিপিএ। তাদের দাবি, খেলোয়াড়দের স্বার্থটা বোঝে এটিপি-ই। ডব্লিউটিএ জানিয়েছে, এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দুঃখজনক। এতে সময় এবং সম্পদের অপচয় হবে বলে আক্ষেপ করেছে তারা। নিজেদের ‘টেনিসের রক্ষাকর্তা’ হিসাবে উল্লেখ করে আইটিএফ জানিয়েছে, ঠিক সময়ে তারা উত্তর দেবে। অন্য দিকে, আইটিআইএ পাল্টা আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে।
তাদের বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থাগুলি মিলিত ভাবে একটি ‘চক্র’ চালাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তি করে ইচ্ছাকৃত ভাবে পুরস্কারমূল্য বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের বাজার ধরতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
র্যাঙ্কিং পয়েন্ট প্রক্রিয়াকে ‘দৈত্যাকার’ আখ্যা দিয়ে তাদের অভিযোগ, পেশাদার খেলোয়াড় হিসাবে সম্মান এবং জনপ্রিয়তা পেতে জোর করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলতে বাধ্য করা হয় পেশাদারদের।
সূচি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। পিটিপিএ-র দাবি, বছরের ১১ মাসই তাদের খেলতে হয়। ফলে বিশ্রামের সময় পাওয়া যায় না। প্রবল গরম এবং ভোরবেলা, যে কোনও সময়ে তাদের খেলতে নামতে হয়।
অভিযোগ, গোটা মৌসুমে যে বল ব্যবহার করা হয় তার জন্য খেলোয়াড়েরা কব্জি, কনুই এবং কাঁধে গুরুতর চোট পান। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ছবির স্বত্বের ব্যাপারে বিবিধ নিয়ম করে খেলোয়াড়দের পকেট ফাঁকা করার চেষ্টা করে।
আইটিআইএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুর্নীতি বা ডোপিংয়ের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা জোর করে খেলোয়াড়দের ফোন ঘাঁটে।খেলোয়াড়েরা বার বারই অভিযোগ করেছেন, টেনিস খেলা থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, বিশেষ করে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম থেকে যে অর্থ উপার্জন হয় তার যথেষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ তাঁরা পান না। এই কারণেই জোকোভিচ পিটিপিএ তৈরি করেছিলেন।
সহ-সংগঠক পসপিসিল জানিয়েছেন, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং মানুষ হিসাবে সাধারণ সম্মান আদায় করতেই এই মামলা করা হয়েছে। পসপিসিলের কথায়, “আমি ভাগ্যবান খেলোয়াড়দের একজন। তবে কেরিয়ারের শুরুর দিকে আমাকে গাড়িতে রাত কাটাতে হয়েছে। ভাবুন একজন এনএফএল (আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল লিগ) খেলোয়াড়কে যদি বলা হয়, বাইরের শহরে ম্যাচ খেলতে গেলে গাড়িতে রাত কাটাতে হবে, তখন তার কী প্রতিক্রিয়া হবে। কোনও দিন এই জিনিস হবে না। আর কোনও খেলায় খেলোয়াড়দের সঙ্গে এই ব্যবহার করা হয় না।”
পিটিপিএ-র দাবি, ফুটবল, আমেরিকার ফুটবল, বেসবল এবং বাস্কেটবলের মতো দলগত খেলায় যে ভাবে পুরস্কারমূল্য বা লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়, টেনিসেও সেটাই করতে হবে।
পিটিপিএ জানিয়েছে, মামলা করার আগে পুরুষ এবং মহিলা মিলিয়ে ২৫০-এর বেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। দুই বিভাগেই প্রথম ২০-তে থাকা বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
পিটিপিএ-র মুখ্য কর্তা আহমেদ নাসের বলেছেন, “গ্র্যান্ড স্ল্যাম কিছু জিনিস পরিবর্তন করার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। বাইরে থেকে অর্থ নিয়ে এসে বদলের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি। তাই ভবিষ্যতের ভালর জন্য মামলা করাই ভাল হবে বলে মনে হয়েছে। খেলোয়াড়েরা চাইছে ওদের কথা শোনা হোক এবং ওদের সমস্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :