ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে অনন্য চরিত্রগুলোর একজন দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। কেবল মাঠের জাদুতে নয়, মাঠের বাইরেও তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর—সাহসিকতায়, সংহতিতে ও সামাজিক দায়বদ্ধতায় অনন্য। নিপীড়িত মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। ফিদেল কাস্ত্রো, হুগো শ্যাভেজ কিংবা ইভো মোরালেসের মতো বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল এই কারণেই—তারা যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, ঠিক সেভাবেই ফিলিস্তিন ইস্যুতেও ম্যারাডোনা ছিলেন অকপট ও স্পষ্ট।
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে আর্জেন্টিনা যেমন শোকে মুহ্যমান হয়, তেমনি কেঁদে ওঠে ফিলিস্তিনও। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের তৎকালীন মুখপাত্র সামি আবু জুহরি টুইটারে লেখেন, “আমরা গভীরভাবে শোকাহত, কারণ ম্যারাডোনা ছিলেন সেই কণ্ঠস্বর, যিনি ফিলিস্তিনের ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন জানাতেন।”
ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী বছরের পর বছর ধরে গাজা উপত্যকায় চালিয়ে আসছে বর্বরতা। শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এমন এক সময়, যখন গাজা আবারও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে, তখনই ফিরে ফিরে মনে পড়ে যায় সেই সাহসী কণ্ঠ—দিয়েগো ম্যারাডোনা, যিনি একবার বলেছিলেন, “আমার হৃদয়ে আমি ফিলিস্তিন।”
২০১২ সালের এক সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, “আমি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় ভক্ত। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি প্রকাশ করি এবং কোনো ভয় ছাড়াই ফিলিস্তিনকে সমর্থন করি।” ২০১৪ সালে গাজায় ভয়াবহ হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন। সেই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, “ইসরায়েল যা করছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
ম্যারাডোনা শুধুই মুখের কথায় থেমে থাকেননি, তাঁর কর্মেও ছিল সেই দায়িত্ববোধের ছাপ। ২০১৫ সালে এএফসি এশিয়ান কাপ চলাকালে ফিলিস্তিনি জাতীয় দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আলোচনার খবর ছড়িয়েছিল। এমনকি ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেছিলেন, “আমার হৃদয়ে, আমি ফিলিস্তিন।” সেই মুহূর্তের ভিডিও আজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়ায়, প্রমাণ রেখে যায়—ভালোবাসা রাজনীতির সীমানা মানে না।
শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া যুদ্ধ বা ইরাক আগ্রাসনের সময়েও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। দেখা গেছে ‘অ্যান্টি-বুশ’ লেখা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ক্যামেরার সামনে—বিশ্ব তারকাদের মাঝে এক সাহসিকতার নিদর্শন হয়ে।
আজ যখন গাজা আগুনে জ্বলছে, তখন পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে এক কণ্ঠস্বর—“আমি ফিলিস্তিনি।” ম্যারাডোনা হয়তো আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর সেই সাহসী উচ্চারণ আজও গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের গান হয়ে বাজে।
সূত্র: আল-জাজিরা
একুশে সংবাদ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :