ভোরবেলায় চারিদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহ। আলস্যের চাদর মুক্ত করে কুয়াশার ধূম্রজাল দেখতে ঠিক সাড়ে পাঁচটায় ঘুম ভাঙল আমাদের। আকাশচুম্বী পাহাড়ের গায়ে কুয়াশা যেমন ঝুলে থাকে, ঠিক তেমনি আমাদের ছনের ঘরটিও অন্যের দৃষ্টিসীমার বাইরে। ভালোই লাগছিল। কুয়াশায় ভিড়ে নদীর বুকে দু-একটা নৌকার বিচরণ। কর্ণফুলীর পাড়ে আর কেউ নেই; আমরা ক’জন, সঙ্গে নিস্তব্ধতা, গা শিউরে ওঠা বাতাসও আছে অবশ্য। এ বুঝি ছোট্ট জীবনের সেরা সকালগুলোর একটি।
যখন আরেকটু বেলা হলো, কোমল সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করছিল। গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরবে আন্দোলিত পুরো ক্যাম্প। কী স্নিগ্ধময় হেমন্তের সকাল! একজন বলল, এমন সকাল আর কখনো আসবে? হ্যাঁ কিংবা না-দুটোই হতে পারে উত্তর।
কাপ্তাইয়ের স্বচ্ছ জলে রোমাঞ্চকর কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাকি সময় মাচা, কুঁড়েঘর, দোলনা ও বাগানে ঘোরাঘুরি করে নিমিষেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। প্রশান্তি পার্ক সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছে। পাহাড়, সবুজ বৃক্ষ ও কর্ণফুলী নদীসহ বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় স্পট নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটনকেন্দ্রটি।
কাপ্তাই- চট্টগ্রাম সড়কের কোল ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রটি। ঘোরাঘুরি, আড্ডা, পিকনিক ও প্রিয়জনদের নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য উপযোগী এটি। তাঁবু ছাড়াও এখানে রয়েছে ফ্যামিলি কটেজ, জুমঘর, কাপল ও ব্যাচেলর রুম। রাতে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। পার্কটা কর্ণফুলী নদীর পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় এর আশপাশের সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবে।
যারা রাতে তাঁবুতে থাকবেন, তারাই খোঁজ পাবেন আসল সৌন্দর্যের। প্রকৃতি অপার্থিব এক সৌন্দর্যের জাল বুনে সারারাত ধরে। কুয়াশাজড়ানো মায়াময় অনাবিল সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে চারিদিকে। ভোরে স্বচ্ছ সবুজাভ জলে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ; সেই সঙ্গে আকাশে সোনালি আভা ছড়িয়ে সূর্য মামার কিরণে ঝলমলিয়ে ওঠে ধরণী। সবকিছু মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক সৌন্দর্যের মুখোমুখি হবেন, যার খুব সমান্য অংশই বর্ণনা করা যায়।
যাওয়া-থাকা
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রীবাহী বাসে চড়ে অনায়াসে কাপ্তাইয়ের প্রশান্তি পিকনিক স্পটে আসা যাবে। ঢাকা থেকে সরাসরি কাপ্তাই আসতে বিভিন্ন পরিবহন রয়েছে। এসব পরিবহন প্রতিদিন ঢাকা টু কাপ্তাই যাতায়াত করে। আর প্রশান্তি পার্কেই আছে থাকার বন্দোবস্ত। তাঁবু কিংবা কটেজে রাত কাটাতে পারেন। তাছাড়া কাপ্তাই বাজারেও বেশ কয়েকটা হোটেল রয়েছে।
একুশে সংবাদ/ডে.বা/না.স
আপনার মতামত লিখুন :