সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান, আর সেই সব দর্শনীয় স্থানের তালিকায় বেশ কিছু রোমাঞ্চকর এবং বিপদজনক জায়গাও ঠাই করে নিয়েছে। এমনকি এসব স্থানে হরহামেশাই ঘটে প্রাণহানীর মত দূর্ঘটনা। ঝুকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুত নেশায় হাজার হাজার মানুষ ছুটে যায় সেইসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে। ভ্রমণ গাইডের আজকের আয়োজনে রয়েছে তেমনি কিছু শিহরণ জাগানো রোমাঞ্চকর পৃথিবীর ভয়ংকর স্থান নিয়ে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না সুন্দর অনেক সময় কত ভয়ংকর হতে পারে। আশা করি ভ্রমণ গাইডের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন আপনার ভালো লাগবে।
ডোর টু হেল, তুর্কমেনিস্তান
প্রথমেই শুরু করা যাক তুর্কমেনিস্তানের ডোর টু হেল দিয়ে। বাংলায় বললে যার মানে দাঁড়ায়, নরকের দরজা। নাম শুনেই নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে গেছেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুর্কমেনিস্তানের ড্রাভা শহরের কারাকুম মরুভুমিতে অবস্থিত এই জ্বলন্ত গর্ত ডোর টু হেল নামে পরিচিত। ৭০ মিটার ব্যাসের ও ২০ মিটার দীর্ঘ এই গর্ত ১৯৭১ সাল থেকে দাউদাউ করে জ্বলছে। গর্তটি আগে মোটেও বর্তমান সময়ের মতো এতো বিপদজনক ছিলো না।
১৯৭১ সালে এখানে গ্যাস খনির সন্ধান মেলে। প্রাথমিকভাবে গবেষণা করে বিষাক্ত গ্যাসের ব্যাপারে গবেষকরা নিশ্চিত হন, যার পরিমাণ ছিল সীমিত। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এই গ্যাস জ্বালিয়ে শেষ করা হবে। ফলে এর বিষাক্ততা ছড়ানোর সুযোগ পাবে না। এরপর এখানে গর্ত করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গবেষকদের অবাক করে দিয়ে ৪০ বছর ধরে একাধারে জ্বলছে অথচ গবেষকরা নিশ্চিত ছিলেন যে, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এই গ্যাস শেষ হবে এবং আগুন নিভে যাবে। বর্তমানে এই জায়গাটি ভ্রমণ পাগল মানুষের জন্যে দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। রাতের বেলা এই স্থানটি খুবই সুন্দর দেখায়। তবে এখানকার উত্তাপ এত বেশি যে এই জ্বলন্ত গর্তের কাছে ৫ মিনিটের বেশি সময় এখানে থাকা যায় না।
মাউন্ট হুয়া শান, চীন
আপনি কি ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের সিড়ি বেয়ে কোন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারবেন? এই অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে চীনের মাউন্ট হুয়া শান পাহাড়ে। “হুয়াইন” শহর থেকে ১২০ কিমি পূর্বে অবস্থিত মাউন্ট হুয়া শান চায়নার পাঁচটি বৃহত্তম পাহাড়ের মধ্যে একটি। এই পাহাড়টি এ অঞ্চলে ধর্মীয়ভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে। হুয়া পাহাড়ের পশ্চিম দিকের চূড়ায় খ্রীষ্ট ধর্মের অবির্ভাব হওয়ারও প্রায় ২শত বছর আগে প্রথম একটি মন্দির স্থাপন করা হয় এবং এতে যাওয়ার জন্য প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সিড়ি রয়েছে।
মন্দির স্থাপনকারী তাওবাদি ধর্ম অনুসারিরা বিশ্বাস করেন যে এই পাহাড়ের চূড়ায় ভূ-গর্ভস্থ দেবতারা বসবাস করে। আর তৎকালীন ধর্মজাযকরা এই মন্দির গুলি ব্যাবহার করত মৃত ব্যাক্তির আত্মার সাথে কথা বলার বলার জন্য। কেননা তারা বিশ্বাস করত মানুষ মারা গেলে তার আত্মা ভূ-গর্ভে চলে যায়। হুয়া সান পাহাড় সম্পর্কে অনেকেই বিশ্বাস করেন পাহাড়ের চূড়ায় এমন কিছু গাছ জন্মে যা মানুষকে অমর প্রদান করে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এই গাছের সন্ধান পেয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এল কামিনিতো ডেল রে, স্পেন
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পথটি উত্তর স্পেনের গাইতনেজ জর্জে অবস্থিত। এল কামিনিতো ডেল রে নামে এই পথটি ‘কিংস পাথওয়ে’ নামেও বেপকভাবে পরিচিত। প্রচলিত আছে আপনি যদি দুই-একবার এভারেস্ট জয়ী না হন তাহলে এ পথ অতিক্রম করার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ একটু এদিক সেদিক হলেই আপনি পড়ে যাবেন গুয়াদালহোর্স নদীতে। যার ফলাফলে মৃত্যু অবধারিত।
২.৫ মাইল দীর্ঘ পথটি ভূমি থেকে ৩৩০ ফুট উচুতে অবস্থিত। পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে থাকা কংক্রিট দিয়ে তৈরি পথটিতে স্টিলের পাত দেয়া আছে। পথটি পেরোতে হলে আপনাকে মাঝে মধ্যে ৪৫ ডিগ্রী খাড়া পাথর বেয়েও উঠতে হবে। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে বেশ কয়েকজন অভিযাত্রীর মৃত্যুর হলে পথটি সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে পথটি সংস্কার করে ভ্রমণকারীদের জন্য পুনরায় খুলে দেয়া হয়।
Trolltunga বা দ্য ট্রোলস টাং, নরওয়ে
Trolltunga শব্দের বাংলা অর্থ হলো দানবের জিহবা। কি নাম শুনে অবাক লাগছে? প্রাচীন বিশ্বাস থেকেই এই নামের উৎপত্তি। পাথুরে, দূর্গম পাহাড়ি পথ, স্বচ্চ লেক আর বিচিত্র সুন্দরের পসরা সাজিয়ে আছে নরওয়ের ট্রোলস টাং। বলা হয়ে থাকে এই ট্রোলস টাং পৃথিবীর অসহ্য সুন্দর গুলোর একটি মধ্যে অন্যতম।
2,300 ফুট উপরে একটি পাহাড় থেকে অনুভূমিকভাবে একটি টুকরো প্রস্তরখন্ড হ্রদের উপর ঝুলে আছে। যা দেখতে পাহাড়ের গা থেকে বের হওয়া জিহবার মত মনে হয়। আর এটিই ট্রোলস টাং নামে পারিচিত। Hordaland কাউন্টি নরওয়ের Odda পৌরসভা হয়ে ওখানে যেতে হয়। শত বাঁধা থাকললেও সৌন্দর্যপিয়াসীরা আর বসে নেই। আপনি যদি এডভেঞ্চার প্রিয় হয় তবে যেতে পারেন দানবের জিহবা দেখতে।
এলিফেন্ট কিংডম ওয়াটার পার্ক, থাইল্যান্ড
শত শত ক্ষুদার্থ কুমিরের মাঝে পড়লে অবস্থা কি হবে কখনো ভেবেছেন? থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ড কিংডম তেমনি একটি কুমিরের খামার। এই খামারের মালিক পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য পানির উপর একটি ভাসমান মাচা তৈরি করেছেন। মাচাটি প্লাস্টিকের ব্যারেলের সাহায্যে পানির উপর ভেসে থাকে।
পর্যটকরা চারদিকে ঘেরা মাচায় দাঁড়িয়ে, খাবার দিতে দিতে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে কুমিরগুলোকে। ব্যাপারটা দেখতে অনেক মজার হলেও, সেখানে যেতে যথেষ্ট সাহসের দরকার হয়। কোনভাবে যদি মাচাটা ডুবে যায় বা মাচা থেকে কেউ পানিতে পরে তবে শত শত কুমিরের খাবারে পরিণত হয়ে দুনিয়া ছাড়তে হবে চোখের নিমিষে।
একুশে সংবাদ/এ
আপনার মতামত লিখুন :