গত রোববার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরে আটক হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ শিক্ষার্থী কোনো প্রকার রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন তাদের অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বুয়েট শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করেন আটককৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
তাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আটক শিক্ষার্থী আলি আম্মার মুয়াজের ভাই আলি আহসান জুনায়েদ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘গত ২৯ জুলাই আমাদের সন্তান/ স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। ভ্রমণের এক পর্যায়ে ৩০ জুলাই বিকেলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। রোববার বিকেল থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, তাই ব্যস্ত আছে হয়তো। কিন্তু, পরবর্তীতে রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ভ্রমণকারী সবাইকে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপর থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর জানার জন্য আমরা ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই, আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদের আটক করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পরশু রাতেই আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ফোন করে এনআইডির ছবি চায়। কিন্তু তখনও অভিভাবকেরা জানতেন না যে তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের দিক থেকেও আর কিছু বলতে দেওয়া হয়নি। গতকাল বিকেলে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সাথেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সাথে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মহোদয় আমাদের জানান যে, তাদেরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকেল ৪টা বা ৫টার দিকে। এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা। এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।’
শিক্ষার্থীদের আটকের বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাঈদ। এই বিজ্ঞপ্তির একটি অংশে বলা হয়েছে- ঘটনাস্থল থেকে আটককৃত ব্যক্তিদের তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৩৩টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইলফোন, ছাত্র শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত স্কিনশটের কপি, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কল্যাণ তহবিল সংক্রান্ত প্রচারপত্র, সদস্য ও সাথীদের পাঠযোগ্য কোরআন ও হাদিসের সিলেবাস, কর্মী ঘোষণা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত স্ক্রিনশটের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব মালামাল জব্দের বিষয়টি বানোয়াট দাবি করে আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, তাদের কাছে এবং সাথে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছু না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে মামলা সাজানোর জন্য।’
একুশে সংবাদ/ঢ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :