দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) নেই শহীদ মিনার। শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ২৮ বছরেও শহীদ মিনার স্থাপনে এগিয়ে আসেনি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নেই জাতীয় পতাকা টাঙানোরও কোনো স্ট্যান্ড। ভাষা শহীদদের মাসে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং পতাকার স্ট্যান্ড নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে ঢাকার সাঁতারকুলে অবস্থিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। কিন্তু গত ২৮ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজন মনে করেনি কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আজও স্থাপিত হয়নি জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড।
সরকারি নির্দেশনা থাকার পরেও শহীদ মিনার না থাকায় এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শহীদ মিনার না থাকায় কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না। এই যুগে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই এটা খুবই কষ্টকর। তারা কি স্বাধীনতার চেতনার বেদিমূলকে সময়ের অতলে হারিয়ে দিতে চায় কিনা এটাই প্রশ্ন৷
আরেক শিক্ষার্থী জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৮ বছরেও একটি মানসম্মত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। আজ আমরা যে ভাষায় কথা বলি সেই মাতৃভাষাকে বাংলা করতে যারা শহীদ হয়েছিল, আজ তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মত কোন শহীদ মিনার নেই। এটি একটি লজ্জাজনক বিষয়।
তথ্য সূত্র বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি নেওয়ার শর্তেও উল্লেখ আছে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে ক্যাম্পাস ও শহীদ মিনার নির্মাণের। শর্তপূরণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিভিন্ন সময় ‘তাগাদা’ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণের শর্ত, আদেশ ও নির্দেশ সবই উপেক্ষা করছে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা উপেক্ষিত। বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব এসব প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই বেশি। তার ওপর মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ না থাকা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বায়ান্নর ঐতিহাসিক ঘটনাবলির স্মৃতি নিয়ে আবেগ ও অনুভবের অপূর্ব মিশেলে গড়া এ শহীদ মিনার। ভাষার অধিকার রক্ষার শপথ নিয়ে এ মিনার সাহস, সংগ্রাম ও প্রেরণার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো যেকোনো সঙ্কটে জাতি মিলিত হয় শহীদ মিনারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনসহ জাতির নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতিচর্চা সম্পর্কে আদৌ জানতে পারছে কি না, এ প্রশ্নও শিক্ষাবিদদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা মানতে বাধ্য করতে পারলে শহীদ মিনার নির্মাণসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সব নিয়মের বাস্তবায়ন সম্ভব হতো বলে মত দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ করতে না পারা এবং জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে অভিভাবক ও সচেতন মহলের দাবি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হোক।
এক অভিভাবক জানান, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন এদেশে তরুণ সমাজ। ভাষা আন্দোলনকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় দিবসটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। তাই শিক্ষার্থীদের ভাষা সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভাষা দিবসের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার এবং জাতীয় পতার স্ট্যান্ড নির্মাণ করা প্রয়োজন। নয়তো আগামী প্রজন্ম ভাষার মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে তেমন কোন ধারনাই নিতে পারবেনা।
এদিকে ইউজিসি বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়েও কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোঃ রফিকুল ইসলামকে ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি মিটিংয়ের কথা বলে ফোন কেটে দেন৷ এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শহীদ মিনার ও জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড স্থাপনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :