শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশে রোববার থেকে খুলেছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পাঁচ পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একসঙ্গে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। পরে প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাও পদত্যাগ করেন।
এদিকে অতিদ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার দাবি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় বিভাগগুলো এখনও ক্লাস-পরীক্ষা আরম্ভ করতে পারেনি। এছাড়া বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও নিজেদেরকে গুটিয়ে নেওয়ায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে অতিদ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীবান্ধব সৎ, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষাবিদকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। যিনি কোনো দলীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় নয় বরং শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন হবেন।
আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, উপাচার্য অবশ্যই এমন একজন হবেন যিনি দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার ঊর্ধ্বে থাকবেন। এককথায় নিরপেক্ষ থাকবেন। তার মাঝে অবশ্যই বৈষম্যবিরোধী চেতনা রক্ত-মাংসে লালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি হয়েছে দুইটি বিষয়ের জন্য। একদিকে জ্ঞান চর্চা আরেকদিকে জ্ঞান সৃষ্টি। শিক্ষকতার কাজ এবং গবেষণার কাজ এই দুটিকে যিনি একসঙ্গে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন এবং একইসঙ্গে প্রশাসনিকভাবে দক্ষ, সাহসী, উদ্যোগী ও উদ্যমী একজনকে মানুষকে আমরা উপাচার্য হিসেবে চাই।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রোকসানা খাতুন ইতি বলেন, আমি এমন একজনকে উপাচার্য হিসেবে চাই যার একাডেমিক প্রোফাইল থাকবে সমৃদ্ধ। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অরাজনৈতিক ও গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য যিনি সর্বদাই বাস্তবমুখী চিন্তা করবেন। একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সব দূর্নীতি দূর করে ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলবেন।
অপর শিক্ষার্থী রনি ইসলাম বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে দরকার একজন সৎ, দক্ষ ও ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক। তাই আমি চাই এমন একজন উপাচার্য আসুক যিনি হবেন দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বাইরে একজন সৎ, দক্ষ, বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীবান্ধব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আবু সোহান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় তার অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সক্রিয় এবং স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে যখন এর প্রশাসন কোনো রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হোক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি গবেষণা ও লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা৷ আমি চাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে সর্বজন স্বীকৃত যোগ্য এবং গ্রহনযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হোক। কোন লেজুড়বৃত্তি রাজনৈতিক প্রশাসন আমরা চাই না। আমরা আগামীর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত, র্যাগিং মুক্ত এবং মুক্ত চেতনার নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে দেখতে চাই।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :