AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভর্তি কার্যক্রম রেখে ঢাকায় লবিংয়ে ব্যস্ত ডিন, স্বাক্ষর দিচ্ছেন কর্মকর্তা


Ekushey Sangbad
আবির হোসেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
০৪:৩৬ পিএম, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
ভর্তি কার্যক্রম রেখে ঢাকায় লবিংয়ে ব্যস্ত ডিন, স্বাক্ষর দিচ্ছেন কর্মকর্তা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) গুচ্ছভুক্ত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। এ কার্যক্রমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তির আবেদনে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান ক্যাম্পাসে না আসায় তার স্বাক্ষরের স্থানে তার স্বাক্ষর সম্বলিত সিল ব্যবহার করে ভর্তি কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিভাগের এক কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অনুষদের ডিনরা জানিয়েছেন, ডিনের স্বাক্ষর অন্য কারো করার ক্ষমতা নেই। একটি অনুষদের ডিন হিসেবে এমন কর্মকান্ডে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে ওই ডিনের অনুপস্থিতি ও সিল দিয়ে কার্যক্রম চালানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপাচার্যও। এদিকে আইনজ্ঞরা বলছেন এভাবে স্বাক্ষরের সিল বানিয়ে ব্যবহারের নিয়ম নেই। এটি বৈধ হবে না।

সরেজমিনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ডিন অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার খাবিরুল ইসলাম ডিনের স্বাক্ষর সম্বলিত সিল ব্যবহার করে সঙ্গে শুধুমাত্র তারিখ লিখে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা সেই সিল দেওয়া ফরম নিয়েই ভর্তি কার্যক্রম শেষ করছেন। সিল দেওয়ার বিষয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বিভিন্নভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিতে গেলে তিনি রাজি হননি। স্বাক্ষর সম্বলিত ওই সিলের ছবিও তুলতে দেননি ওই কর্মকর্তা।

পরবর্তীতে কর্মকর্তা খাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিন স্যার জরুরী কাজে ছুটিতে আছেন। তিনি আমাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। এরআগেও বিভিন্ন সময় এমন কাজ হয়েছে।’

এদিকে, তিনি ছুটিতে আছেন কি না এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোঁজ নিলে জানা যায়, তিনি ছুটির জন্য কোন আবেদন করেন নি। তবে উপাচার্যের থেকে ছুটি নিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে তারা বলতে পারেন নি।

বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য অনুষদের ডিনদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ডিনের ক্ষমতা অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যায় না। এজন্য তাদেরকে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাছাড়া ডিনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়া অন্য কেউ করতে পারেন না। 

এ বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ডিন কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেন না। ডিনের কাজ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন। ডিনের সিগনেচার ডিনকে সশরীরে উপস্থিত থেকেই করা উচিত। আর যদি উনি জরুরী কোনো কারণে না থাকতে পারেন তাহলে তার অধীনস্থ কোনো বিভাগের একজন সিনিয়র অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে এরকম বিধিবদ্ধ কোনো নিয়ম নেই।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত ফরমে ডিনের সিগনেচারই লাগবে। আর ডিনের অবর্তমানে তার দায়িত্ব একমাত্র উপাচার্য পালন করতে পারেন। আর কেউ এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। হারুন-উর-রশিদ-আসকারী কলা অনুষদের ডিন থাকাকালীন থেকে স্বাক্ষরের সিল ব্যবহারের এই বাজে  প্র‍্যাকটিসটা চলছে। এটা কোনোভাবেই নিয়ম নেই। নিয়ম হচ্ছে সশরীরে সিগনেচার করা। শুধুমাত্র ভর্তি নয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে যেখানে ডিনের সরাসরি সিগনেচার করাই শ্রেয়।

অভিযোগের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মতিনুর রহমান বলেন, আমি একটি জরুরী কাজে উপাচার্যকে অবগত করেই ঢাকায় এসেছি। আর ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখার জন্য আমি আমার সিগনেচার স্ক্যান করে অফিসের কর্মকর্তাদের সিল দেওয়ার অনুমতি দিয়েছি। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এরআগেও বিভিন্নসময় ডিনরা এভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিনের দায়িত্ব অন্য কারো দেওয়ার সুযোগ নেই। আর আমি সারাদিন শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছি। কেউ কোনোধরনের বিড়ম্বনার শিকার হননি। 

জরুরি কী কাজে বাইরে আছেন এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি মতিনুর রহমান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদগুলোতে নিয়োগ পেতে ঢাকায় অবস্থান করে লবিং করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী এক শিক্ষক বলেন, মতিনুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্য আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করে তদবির করছিলেন। উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পর এখন উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ পেতে লবিংয়ের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। ভর্তি কার্যক্রমের মাঝেও ক্যাম্পাসে না থাকার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। 

স্বাক্ষর হিসেবে সিল ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা এডভোকেট সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, স্বাক্ষরের সিল বানানোর কোন সুযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। ওই দপ্তরের প্রধান এ ধরণের সিলের জন্য দায়ী হবেন। এমন করে থাকলে ওই দপ্তরের প্রধানকে চার্য করা উচিৎ। একই মত দিয়েছেন অন্য আইন উপদেষ্টা এডভোকেট রাজিব আহসান রঞ্জুও।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ভর্তি ফরমে ডিনের স্বাক্ষর আবশ্যক। আমি খবরটা শুনে অবাক হচ্ছি। সিলে তো সিগনেচার হয়না কখনো। এটা কোনো ক্লাসিফাইড সিগনেচার না। একজন ডিনের স্বাক্ষর কোনোভাবেই একজন কর্মকর্তা এভাবে দিতে পারেন না। তিনি কিভাবে এটাকে গ্রহণ করলো, এ বিষয়ে আমি তার সঙ্গে কথা বলবো।

ছুটি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে মৌখিকভাবে একবার বললেন যে ঢাকায় গিয়েছেন, দ্রুত চলে আসবেন। এখন ভর্তি কার্যক্রম চলছে, সব ডিন উপস্থিত উনি এখনো ফেরেননি। এ সময় এমন কাজ করা ঠিক না। আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবো। এ ছাড়া উপাচার্যকে মৌখিকভাবে বললেই তো ছুটি হয় না। ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মের মধ্য দিয়ে রেজিস্ট্রার অফিসে ছুটির আবেদন পাঠাতে হবে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে গতি এনে সকলের জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করা হবে।

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!