ক্যাম্পাসের ভাড়া বাস চাপায় নিহত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটুর পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরির আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহুল আলোচিত এই ঘটনার ১০ বছর পেরোলেও বিভিন্ন সময় প্রশাসনের দারস্থ হয়েও কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্ণারে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পরিবারের সদস্যরা। এসময় তার বাবা, চাচা, ছোট ভাই ও দুই বোন উপস্থিত ছিলেন। নিহত টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টায় টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবাহী ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে উঠতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান টিটু। এসময় পেছন থেকে আসা অপর একটি বাসের নিচে চাপা পড়লে তার গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এ ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সহ ভাড়া করা অন্তত ৩০ টি বাসে আগুন দেয় ও ক্যাম্পাসের সব ভবনে ব্যাপক ভাংচুর করেন। ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে প্রায় চারমাস বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান, এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যে যখন দায়িত্বে এসেছে তারা তাদেরই দারস্থ হয়েছে। কিন্তু সবাই ক্ষতিপূরনের আশ্বাস দিলেও কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দেয়নি। সেসময় শুধুমাত্র তার ছোট বোনকে প্রক্টর অফিসে মাসিক ৪ হাজার টাকা মজুরির চুক্তিতে কাজ করার সুযোগ দেয়। তবে তার চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তার ছোট বোন রত্না আজিজ বলেন, ওই সময় আমার ভাই মারা গেলেও এর পুরো ফায়দা লুটেছে বাস মালিক সমিতি। তখন আন্দোলনের ফলে তাদের পুরাতন বাসগুলো পুড়ে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে সবাই আশ্বাস দিয়েই ১০ বছর পার করে দিয়েছে। আমার অন্য ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ চালানোর মতোও কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা আমরা পাইনি।
তার পিতা আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা আজও সেই ঘটনাার কোনো বিচার কিংবা কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। আমরা পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে বিগত ১০ বছর ধরে আমাদের পরিবার খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তাদের পেশকৃত তিন দফা দাবি হলো- তার বোনের চাকরি স্থায়ীকরন, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও টিটুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নামকরণ।
এ বিষয়ে সেসময় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ওই সময় সংশ্লিষ্টরা আমাকে কোনো ধরনের সাহায্য করেনি। এজন্য আমি পদত্যাগ করেছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে তা জানিনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে বসবো এবং বিবেচনাপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :