হেমন্তের বিদায়ের পর শীত তার আগমনী দিয়ে যায় শির শির অনুভূতি জাগিয়ে। দিন যত যায় আস্তে আস্তে তার পূর্ণতা পায়।আর এই তীব্র শীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এক অনন্য সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।
কুয়াশার আভাস ছাড়িয়ে ভোরের রক্তিম সূর্য যখন পুর্ব আকাশে উঁকি দেয়, ঠিক তখনই সোনালি রোদের আলোয় শিশির চুম্বিত ঘাসগুলো মুক্তোর দানার মতো ঝলমল করে।
প্রধান ফটক দিয়ে পা রাখতে না রাখতেই দেখা মিলবে বাহারি রঙের ফুল।সারি সারি ফুলের রাস্তা ধরে কিছুদুর সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে কুয়াশার চাদরে মুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার,অদম্য বাংলা। কুয়াশার ফাকে উঁচু উঁচু ভবন গুলো দাড়িয়ে আছে স্বগৌরবে।শীতের সকালে ক্যাম্পাসে খোলা মাঠের উপর শিশিরে সিক্ত ঘাসগুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য, শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবিকেও হার মানাবে।শীতের সূর্যের মৃদু স্পর্শ আর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শীতল ক্যাম্পাস যেন সজীবতা ফিরে পায়।
প্রকৃতির বিস্তৃত সৌন্দর্যের রূপ নিয়ে আসে শীত।শিক্ষার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়েই উপভোগ করেন প্রকৃতির এই শীতল অনুভূতি।এদিকে সন্ধ্যা হলেই বাহারি পিঠার স্বাদ পেতে শিক্ষার্থীদের দেখা মেলে হল রোডে(ইসলাম নগর)। কুয়াশার মাঝে কিছু দুর পর পর ছোট ছোট চুলার আগুনের ঝলকানি হল রোডের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।
শীত এলেই ক্যাম্পাসে চলতে থাকে ভ্রমণের নানা পরিকল্পনা,বারবিকিউ, ক্যাফেটেরিয়ার ছাউনিবেষ্টিত দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক, কখনো বা দুর থেকে ভেসে আসা গিটারের আওয়াজ,ভুলভাল গানের লিরিক্স আর হাসি-ঠাট্টা,আলোচনা-সমালোচনার দিগন্তে ছুটে গিয়ে হঠাৎ ভিন্ন প্রসঙ্গে মোড় ঘুরা ইত্যাদি নানান চিত্র।শিক্ষার্থীদের এমন মিলন মেলায় ক্যাম্পাসই যেন হয়ে উঠেছে একটা পরিবার।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মুন্নীর ইসলামের সাথে চায়ে চুমুক দিতে দিতে শুনলাম তার অনুভূতি।তিনি বলেন, "এই ক্যাম্পাস আমার গর্ব,যখন আমি ক্যাম্পাসে থাকি কখনো মনে হয় না দুরে কোথাও আছি। শীতের চাদরে আবৃত এই ক্যম্পাস আমাকে বিমোহিত করে বার বার। একদিন হয়তো ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু এই মায়ের স্পর্শের মতো ক্যাম্পাস এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য স্মৃতিপটে থেকে যাবে আজীবন।"
শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী রিসা বলেন,"তীব্র শীতে মায়ের আচলের মতো উষ্ণতা ছড়ায় আমার খুবি।চাদরে মুড়িয়ে যখন এই ক্যাম্পাসে হাটি মনে হয় যেন এই মাটি আমার নিজের গ্রাম,আমার অস্তিত্ব।"
শিক্ষার্থীরা কোন এক শীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করে, আবার কোনো এক শীতে পড়াশোনা শেষে ফিরে যায় পরবর্তী গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর শীত আসবে,কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যাম্পাসে কাটানো শীতের মুহুর্ত একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর ছোঁয়া যাবে না।শুধু স্মৃতিগুলোই থেকে যাবে আমৃত্যু।
একুশে সংবাদ////র.ন
আপনার মতামত লিখুন :