খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনে পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে “প্রজেক্ট সমৃদ্ধি”। পুরোনো কাপড় আর পাটের সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি নয়, এই উদ্যোগ নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে। পাশাপাশি, শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশ এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর কাজেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে গড়ে ওঠা এই প্রজেক্ট ব্র্যাকের “আমরা নতুন নেটওয়ার্ক” প্রোগ্রামের খুলনা কো-হর্টের অংশ, যা ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
শুরু থেকে সমৃদ্ধির যাত্রা:
২০২৪ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থী—নিশাত জাহান নাদিরা, সুমাইয়া আফরিন অর্থি, আরাফাত বিন সোহেল, মো. সৌরভ হোসেন, মশিউর রহমান, জারিন তাসনিম রিথি এবং আব্দুল খালেক সরকার মিলে শুরু করেন “প্রজেক্ট সমৃদ্ধি”। নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রজেক্ট এখন পরিচালিত হচ্ছে পণ্য বিক্রি থেকে অর্জিত লভ্যাংশের মাধ্যমে।
প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য হলো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আয়ের সুযোগ তৈরি করা। নারীদের দেওয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ, যেখানে পুরোনো কাপড় এবং পাট ব্যবহার করে বাজারের ব্যাগ, মাল্টিপল ইউজ ব্যাগ, পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং ব্যাগ, পাপস, জায়নামাজ, নকশীকাঁথা এবং ডিজাইনার টুপি তৈরির কৌশল শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তারা নিজেরা এই পণ্য তৈরি করেন, যা প্রজেক্ট সমৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়।
নারীদের বদলে যাওয়া গল্প:
“সমৃদ্ধি” প্রজেক্টের সুফল ভোগ করছেন গ্রামের অনেক নারী। তাদের মধ্যে অন্যতম শিমলা বেগম, যিনি আগে থেকেই দর্জির কাজ জানতেন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম না, পুরোনো কাপড় দিয়ে ব্যাগ বানিয়ে রোজগার করা সম্ভব। এখানে এসে নতুন কিছু শিখেছি। এখন আমার আয় বেড়েছে, যা আমার দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে কাজে লাগছে।”
শিশুদের সৃজনশীল বিকাশে উদ্যোগ:
প্রজেক্ট “সমৃদ্ধি” শুধু নারীদের স্বাবলম্বী করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এলাকার শিশুদের জন্যও কাজ করছে। পাশের বিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয়েছে ক্লাইমেট আইডল গড়ে তোলার উদ্যোগ। সৃজনশীল কার্যক্রম, গ্রুপ অনুশীলন এবং সচেতনতা সেশনের মাধ্যমে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানানো হচ্ছে এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য:
সমৃদ্ধি আরও বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, স্কুলে একটি মানসম্মত পাঠাগার স্থাপন এবং বই-খাতা ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা করছে।
কো-ফাউন্ডারদের প্রত্যাশা:
প্রজেক্টের কো-ফাউন্ডার নিশাত জাহান নাদিরা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা নয়, তাদের পরিবার এবং এলাকার শিশুদের জীবনমান উন্নত করা। আমরা চাই, এই উদ্যোগটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক, যা অন্যরাও অনুসরণ করতে পারে।”
উপসংহার, “প্রজেক্ট সমৃদ্ধি” পুরোনো কাপড় ও পাটকে নতুন রূপ দিয়ে শুধু পণ্য নয়, জীবনের গল্পও গড়ে তুলছে। এটি নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং শিশুদের বিকাশে এক অনন্য উদ্যোগ। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, এ ধরনের প্রজেক্ট সমাজে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :