দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে শিক্ষার্থী নির্যাতন, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) শাখার নেতাকর্মীদের বিচারকার্য। ছাত্রদের আন্দোলনের পরও মেলেনি সেই কাঙ্খিত বিচার। তবে বিচারকার্য আটকে থাকার বিষয়ে মুখ খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলের পতন হওয়ার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে, বিগত ১৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের দ্বারা নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা ৫ আগষ্টের পর থেকেই চিহ্নিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। বিচারের দাবিতে নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফসিউল হক ইমন বলেন, ২০২২ সালের মে মাসের দিকে পাবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি আসলেও আমাদেরকে ক্যাম্পাসে তেমন কার্যক্রম করতে দেওয়া হয়নি। আমরা শহরেই কর্মসূচি পালন করতাম। মে মাসের আনুমানিক ২৫ তারিখের দিকে ক্যাম্পাসে ঢোকা মাত্রই তখনকার সময়ে বিজ্ঞান অনুষদের সভাপতি সুরুজ মিয়া আপেল আমার উপর অতর্কিত হামলা করলে ছাত্রলীগ নেতা হামিদুর রহমান শামিম, হিরা, লিংকন, বিল্লাল সহ আনুমানিক ২০-৩০ জনের মতো ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের এক পর্যায়ে আমি গুরতর আহত হলে ওরা আমাকে ক্যাম্পাসে আর ঢুকতে নিষেধ করে। আমাকে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন মাস ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ৫ আগষ্টের পরে আমাকে নির্যাতনকারী সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা বা শাস্তি দেওয়ার মতো কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখিনি। প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন থাকবে তারা যেন দেশের প্রচলিত ফৌজদারী আইন অনুসারে চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাকর্মীদের শাস্তি দিয়ে থাকে এবং তাদের ছাত্রত্ব বাতিল সহ যাদের পড়াশোনা শেষ কিন্তু সনদপত্র তুলতে পারেনি তাদের সনদপত্রও যেন বাতিল করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়ে আমি সহ তিনজন স্বাধীনতা চত্তরে বসে গল্প করছিলাম। চলে আসার কিছুক্ষণ আগে ছাত্রলীগ নেতা শেহজাদ, আপেল, প্রান্ত, অয়ন সহ ৮ থেকে ১০ জন নেতাকর্মী আমাদের এসে বলে তোরা শিবির করিস, তারপর আমাদের ধরে বঙ্গবন্ধু হলে নিয়ে গিয়ে দুই ঘণ্টার মতো অমানবিক নির্যাতন করে। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করেন এবং যাদের পড়াশোনা শেষ কিন্তু সনদপত্র তুলতে পারেনি তাদের সনদপত্র বাতিল করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম আব্দুল-আওয়াল বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নীতিমালা নেই। এটা খুবই দুঃখজনক যে বিগত ১৬ বছরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনে নীতিমালা তৈরী করা হয়নি। আমি নতুন জয়েন করার পরপরই নীতিমালা তৈরীর বিষয়ে কাজ করছি। তবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড গঠন হলেই আমরা দ্রুতই বিচারিক কাজে আগাতে পারবো। রিজেন্ট বোর্ড গঠনের বিষয়ে সবকিছু করা শেষ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেলেই আমরা আমাদের প্রশাসনিক বাকি কাজগুলো দ্রুততম সময়ে করে ফেলতে পারবো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :