AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
ইবির জিওগ্রাফি বিভাগ

শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা


Ekushey Sangbad
আবির হোসেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
০৪:৫০ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা

# ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দিতে কৌশলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলনের অভিযোগ
# স্বাভাবিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করা হচ্ছে— সাবেক সভাপতি
# শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই— বর্তমান সভাপতি
# এক্সপার্ট কমিটি করে বিষয়টির সমাধান করা হবে— উপাচার্য


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিওগ্রাফী অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। বিভাগের নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে দুভাগে বিভক্ত চলমান সাতটি ব্যাচের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগের বর্তমান নাম অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ বিভাগের বর্তমান নাম থেকে ‘জিওগ্রাফী’ বাদ দিয়ে নতুন করে ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ করার দাবি জানিয়েছেন। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে বিগত পাঁচ মাস ধরে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ সহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি করে আসলেও উদ্ভূত সমস্যার সুরাহা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে নিজের ‘জিওগ্রাফী’ ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় এবং ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দিতে নতুন করে বিভাগের নাম পরিবর্তনে বর্তমান সভাপতির ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করা ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিওগ্রাফী’ বিভাগে ২০১৮ সালে চারজন শিক্ষক নিয়োগ হয়। এরপর ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘জিওগ্রাফী অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ করতে বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা মোট ১২৯ শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র দেয়। পরে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় চারজন শিক্ষকের মধ্যে ‘জিওগ্রাফী’ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা তিন শিক্ষক (ইনজামুল হক, ইফফাত আরা ও আনিসুল কবির) বিভাগের নাম পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মত দিলেও ‘জিওগ্রাফী’ ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা বিপুল রায় বিপক্ষে মত দেন। এরপর থেকে বিভাগের চার শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর ২৫৬তম সিন্ডিকেটে বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘জিওগ্রাফী অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ করে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করতে বলা হয়।

এরপর প্রায় দুই বছর পর আওয়ামী সরকারের পতন হলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে পরবর্তী তিন ব্যাচের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের একাংশ দ্বিতীয় দফায় বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় ঐক্যমতে থাকা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ এনে দ্বিতীয় দফায় নাম পরিবর্তনের দাবি ক্যাম্পাসে সমালোচনা তৈরি করেছে। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগ এনে বিভাগের সাবেক সভাপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র চারদিন আগে তাকে অপদস্থ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এর একটি ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নাম পরিবর্তনের দাবিতে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ, বিভিন্ন সময় মানববন্ধন ও প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়া গত বছরের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর আবদুর রহমান শোভন ও আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী সিসিটিভি ক্যামেরা ঢেকে দিয়ে বিভাগের নামফলক ভাঙচুর করে। এর দুইটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এ ঘটনায় প্রায় তিনমাস আগে গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

সর্বশেষ বিভাগটির শিক্ষার্থীরা নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে মুখোমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি বিভাগের সভাপতি বিপুল রায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসন বরাবর অসদাচারণের অভিযোগ দেয় বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ইফফাত আরা। অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসলে ২৫ জানুয়ারি ইফফাত আরা ও ইনজামুল হকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কোন শিক্ষকের ইন্ধনে তাদেরকে হেনস্তা করতে উদ্ধেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ অভিযোগ করা হয়েছে দাবি করে দুই শিক্ষকই অভিযোগ খন্ডন করে প্রশাসন বরাবর পাল্টা লিখিতও দিয়েছেন।
এছাড়া এ ঘটনার পর থেকে বিভাগের শিক্ষকরা একসঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত আছেন।

বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছিল সিনিয়র দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ওই দুই শিক্ষকের (ইনজামুল হক ও ইফফাত আরা) বিরুদ্ধে ক্লাস না নেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছুটি ভোগ, ফিল্ডওয়ার্কে অংশগ্রহণ না করা, সিনিয়র শিক্ষার্থী দ্বারা খাতা মূল্যায়ন, ভাইভাতে হয়রানি ও পরীক্ষার হলে দুর্ব্যবহার সহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন তারা। এছাড়া তারা কোনো শিক্ষকের ইন্ধন ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজেদের প্রয়োজনে বিভাগের নাম পরিবর্তনের আন্দোলন করছেন বলে জানান।

এদিকে বিভাগের বর্তমান নাম অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে থাকা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সজ্ঞানেই তাদের স্বাক্ষর দিয়েছিল। এছাড়া নাম পরিবর্তনের পর সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু দুই বছর পর তারা বিভাগের অপর এক শিক্ষকের ইন্ধনে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই সরাসরি দুই শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে বিভিন্ন ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বর্তমান সভাপতি বিপুল রায় ইবির এই বিভাগের নাম নিজের সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে পেছন থেকে শিক্ষার্থীদেরকে আন্দোলনে নামিয়েছেন। একমাত্র যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোথাও সেই নামে বিভাগ নেই। সামনে আমাদের বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তার ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে কৌশলে তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন।  

সাবেক সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হক বলেন, বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুযোগ সুবিধার দিক বিবেচনায় বিভাগের বর্তমান নামই যুগোপযোগী। দেশের প্রথম সারির সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই ‘জিওগ্রাফী’ বিষয় রয়েছে। একমাত্র যবিপ্রবিতেই শিক্ষার্থীদের একাংশের চাওয়া ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’ নাম রয়েছে। বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে একটিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন,  শিক্ষার্থীদের নাম পরিবর্তনের আন্দোলনে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। শিক্ষার্থীরা কেন আবারও নাম পরিবর্তন চায় তা আমি জানিনা।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। একটি এক্সপার্ট কমিটি করে দ্রুত বিষয়টির সমাধান করা হবে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!