ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। একপক্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা ফিরে পেতে আন্দোলনে নেমেছেন। অপরপক্ষের শিক্ষার্থীরা আইন অনুষদের অন্য দুই বিভাগের ন্যায় আল-ফিকহ্ বিভাগে ভর্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ভর্তি হতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হওয়া শর্ত ছিল। এছাড়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজির সঙ্গে ফিকহ্ বিষয়ের উত্তর করতে হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা হয়। সেসময় ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০টি আসন এবং অন্যান্যদের জন্য ৪০টি আসন বরাদ্দ করে প্রশাসন। কিন্তু ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এ শর্ত থাকলেও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ শর্তও ভেঙে দেওয়া হয়। বিভাগটিতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা পুরোপুরি জেনারালাইজ হয়ে যায়। যার ফলে বিভাগটি তার সম্পূর্ণ স্বকীয়তা হারায়।
এদিকে বিভাগটির পূর্বের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে বিভাগটির একপক্ষের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিভাগটি আইন অনুষদের অন্যান্য বিভাগের ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে মিল রেখে আল-ফিকহ্ বিভাগে ভর্তি নেওয়ার দাবিতে একইস্থানে মুখোমুখী অবস্থানে মানববন্ধন করে আরেকপক্ষের শিক্ষার্থীরা।
একপক্ষের দাবি, আল-ফিকহ্ বিভাগ ‘শরীয়া আইন ও আধুনিক আইন’ সমন্বিতভাবে পড়ানোর একটি বিশেষায়িত বিভাগ। বিভাগের নীতি অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চললেও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রশাসন তা গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসলে বিভাগের স্বকীয়তা ক্ষুণ্ন হয়। পুরনো ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া বিভাগের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল। আল-ফিকহ্ বিভাগে পড়ার জন্য আরবি ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতা থাকা জরুরি। বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেই দক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্কুল, মাদ্রাসা বা অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরাও প্রয়োজনীয় আরবি দক্ষতা রাখলে তারা এই বিভাগে ভর্তি হতে পারবে।
আরেকপক্ষের দাবি, আল-ফিকহ্ আইন অনুষদের অধীনে হওয়ায় এই বিভাগের ভর্তি প্রক্রিয়া আইন অনুষদের অন্যান্য বিভাগের মতোই হতে হবে। আইন বিভাগ ও ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে পদ্ধতিতে ভর্তি হয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পান, আমরাও সেই একই প্রক্রিয়া চাই। কোনোভাবেই ধর্মতত্ত্ব (থিওলজি) অনুষদের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া আমরা মেনে নেব না। আইন পড়তে হলে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এটি শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগের অধিকারে বাঁধা সৃষ্টি করে।
এবিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন বলেন, শর্ত পূরণ করার স্বার্থে ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারমানে এই নয় যে, আমরা ধর্মতত্ত্ব অনুষদে চলে যাচ্ছি। মানবিক অনুষদের একটি বিভাগও এই অনুষদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তবে অনেকেই বুঝতে না পেরে বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেটা কাম্য নয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মাদ নসরুল্লাহ বলেন, আলোচনার মাধ্যমে আমরা স্টান্ডার্ড বজায় রেখে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :