ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা এক নিঃস্বার্থ দায়িত্ব ও সম্ভাবনার ক্ষেত্র। আর রমজান মাস এলেই বদলে যায় দৈনন্দিন রুটিন। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্টের পাশাপাশি যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করেন, তাদের জন্য সময়টা হয়ে ওঠে আরও চ্যালেঞ্জিং। সংবাদ সংগ্রহ, রিপোর্ট লেখা, লাইভ কাভারেজ—সব মিলিয়ে রোজার সময়ও থেমে থাকে না ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ব্যস্ততা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সেসব ব্যস্ততা, বিভিন্ন চ্যালেন্জ, অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন একুশে সংবাদের ডিআইইউ প্রতিবেদক - নুর ইসলাম

সেহরি ইফতার সবই হচ্ছে কিন্তু পরিবারের স্পর্শ টা নেই:
রমজান মাসটা সিয়াম সাধনার মাস, রহমতের মাস। প্রতিবছর এই একটি মাত্র মাস মুসলিম উম্মাহা পায় যখন গুনাহগার বান্দা একনিষ্ঠ ইবাদত ও সিয়াম রাখার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি করতে পারে। রমজানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকলেও পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান আছে। এজন্য ক্লাস বন্ধ থাকলেও পেশাদারিত্বের খাতিরে বাসায় যেতে পারছি না। ভেবেছিলাম যে ক্লাস বন্ধ থাকলে হয়তো কাজের চাপ একটু কমবে, রমজানে তৃপ্তি করে ইবাদত বন্দেগী করতে পারবো কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস যেন একটু অস্থির। কখনো কখনো সকাল ১০/১১ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত নিউজ কাভারেজে থাকতে হয়। ক্লান্ত শরীরে রুমে ফিরতে নিলেও `ইফতার কোথায় করবো, কী দিয়ে করবো` এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। সেহরি ইফতার সব ই হচ্ছে কিন্তু পরিবারের স্পর্শ টা নেই। এটা অবশ্যই বেদনাদায়ক। দীর্ঘদিনের জমে থাকা পড়ার চাপ, নিয়মিত ঘটনাবলী এবং মিডিয়া হাউজের চাহিদামতো স্পেশাল স্টোরি`র কাজ করতে করতে রমজান এবছর কেমন যেন কেবলই মাত্র আনুষ্ঠানিকতায় এসে ঠেকেছে। তবে রমজানে ক্যাম্পাসকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ হচ্ছে। রুমমেট, বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র জুনিয়র সবাই একসাথে ইফতার করা, সালাত আদায়, চায়ের আড্ডা গুলো কিছুটা হলেও পরিবারের অভাববোধ টা কাটিয়ে দিচ্ছে। সেন্ট্রাল ফিল্ডে সবাই মিলে একসাথে ইফতার করার অনুভূতিও সত্যিই আনন্দের। সবমিলিয়ে এবারের রমজান মোটামুটি ভালোই কাটছে।
ওয়াসিফ আল আবরার,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি,
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস ও দৈনিক আজকের দর্পন।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা ক্যাম্পাসের অতন্দ্র প্রহরী:
সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে সংবাদ যতক্ষণ আছে কাজ ততক্ষণ। সেদিক থেকে সাংবাদিকতা এ রমজানে বাকি ১১টি মাসের তুলনায় একটু বেশিই ব্যস্ততায় সময় যাচ্ছে। এবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) অনলাইন ক্লাসে গেছে। কিন্তু এই অনলাইন ক্লাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হলেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় কিছুটা বাধা সৃষ্টি করেছে। ক্লাস শেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের আধেয় সংগ্রহ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেননা দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সকল দপ্তর বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা বাকি শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভিন্ন। অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে ফিরেছে। শুধু তারাই এখনও আছে। পরিবার থেকে দূরে, রমজানে বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতার চাদর থেকে দূরে; দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে। হয়তো তারাও ঘরে ফিরতে সূর্যাস্তের পূর্বেই, গোধূলি বেলায়। এদিক থেকে ক্যাম্পাসের অতন্দ্র প্রহরী ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। এছাড়া এই রমজানে অতি দুঃখজনক কয়েকটি ঘটনা শুধু ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নয় পুরো মিডিয়া জগৎ-কে নাড়া দিয়েছে। যার মধ্যে একটি শিশু আছিয়ার বোনের শ্বশুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া এবং পরবর্তীতে মৃত্যু। এ ঘটনায় বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে ক্যাম্পাসসহ সকল সাংবাদিকদের মিডিয়া কাভারেজের দায়বোধ থেকে সেখানে ছুটতে হয়েছে।
জান্নাতুন নাইম
জবি প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর।

সংযমের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা:
রমজান মানেই সিয়াম, সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস। তবে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য এটি শুধুই ইবাদতের সময় নয় বরং দায়িত্বশীলতার নতুন এক মাত্রা যোগ হয়। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, রিপোর্টিং আর সংবাদের পিছনে ছুটতে ছুটতেই কাটছে আমাদের দিন। ইফতারের আগে ফিচার লিখতে লিখতে সময় কখন গড়িয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। রমজানে ক্যাম্পাসের নানা আয়োজন, শিক্ষার্থীদের অনুভূতি আর ইফতার মাহফিলের খবর সংগ্রহ করতে করতে আমাদের কলমও যেন নতুন মাত্রা পায়। ক্ষুধা-তৃষ্ণার ধৈর্য ধরে কাজ করেও সংবাদ পরিবেশনের পেশাদারিত্বে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া চলে না। আর এই চ্যালেঞ্জের মাঝেই রমজানের এক অনন্য সৌন্দর্য খুঁজে পাই আমরা—সংযমের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। রমজানের এই ব্যস্ততা যেমন আমাদের ক্লান্ত করে তেমনই সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসাকেও আরও গভীর করে তোলে।
রাকিবুল ইসলাম
ডিআইইউ প্রতিনিধি,
দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ, সময়ের কন্ঠস্বর

রমজান আসলে ব্যস্ততা কিছুটা হলেও বেড়ে যায় :
ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে প্রায় প্রতিটা দিনই নানারকম ব্যস্ততায় কেটে যায়। রমজান আসলে যেনো সেই ব্যস্ততা কিছুটা হলেও বেড়ে যায়। রমজানে ক্যাম্পাসে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সংগঠনের ননারকম আয়োজন থাকে। ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই সেসব আয়োজনে উপস্থিত থাকতে হয়। তবে এবার রমজান অনেকটাই ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে আগেভাগেই। বলতে গেলে এবারের রমজানের প্রায় পুরোটাই ছুটি পাচ্ছি। তবে এর মাঝেও নানারকম কাজ করতে হচ্ছে। এবারের ছুটিতে বেশকিছু স্পেশাল ফিচার লেখার পাশাপাশি আগামীতে ক্যাম্পাস খুললে কিরকম কাজ করবো তার পরিকল্পনা করছি। এর বাইরেও এই কয়দিনের ছুটিতে বেশ কয়েকটি বই পড়ার ইচ্ছা আছে। ছুটির ফাঁকে কিছু মানুষের সাথে কমিউনিকেশন বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে যা আগামীতে কর্মক্ষেত্রে আরও সহায়ক হবে বলে আশা করছি। ক্যাম্পাস খুললেই আবার ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা তাই এই ছুটি সবকিছু বাদ দিয়ে অনেকটা নির্ভার হয়েই কাটাচ্ছি।
তালহা হাসান
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি, দৈনিক কালবেলা।

রমজান মাসে বাড়িতে থাকার স্বস্তি তীব্রভাবে অনুভব হয় :
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা শুধুই খবর সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অনেকটা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিরও একটি সুযোগ। রমজান মাসে সেটার অনুভূতি আরও গভীর ভাবে প্রকাশিত হয়ে ওঠে।
সাংবাদিকতার সুবাদে বিভিন্ন সংগঠন, ক্লাব ও শিক্ষকদের কাছ থেকে দাওয়াত থাকে, যেখানে নানা ধরনের মানুষ একসঙ্গে বসে ইফতার করার আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়। কখনো বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ইফতার করি, কখনো কোনো সংগঠনের আয়োজনে অংশ নিই। ক্যাম্পাসের এই বৈচিত্র্যময় ইফতার মুহূর্তগুলো সত্যিই মনে দাগ কাটে।
তবে সেহরির অভিজ্ঞতা একদমই ভিন্ন। রাত যত বাড়ে, মাঝেমধ্যে খাবারের সংকটও তত বাড়ে। অনেক সময় ভালো খাবার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়, আবার একটু দেড়িতে সেহেরি জাগলে না খাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।তখন বাড়ির সেহেরির কথা খুব মনে পড়ে—মায়ের হাতের রান্না, পরিবারের সবার একসঙ্গে খাওয়া, সেই আরামদায়ক পরিবেশ। রমজান মাসে বাড়িতে থাকার স্বস্তি তখন আরও তীব্রভাবে অনুভব হয়।
তবে এটাই ক্যাম্পাস জীবনের বাস্তবতা। এখানে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। তবে এই অভিজ্ঞতাগুলোই ভবিষ্যতে স্মৃতির পাতা জুড়ে থাকবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :