গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং ভারতীয় উগ্রবাদীদের দ্বারা মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর ১১:৩০ মিনিটে কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ইসরায়েল, আমেরিকা ও ভারতের পতাকা অঙ্কন করা হয়, যার ওপর দিয়ে হেঁটে শিক্ষার্থীরা কলেজে প্রবেশ করে।
এই প্রতিবাদের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন সায়েম, রোহান, ইভান, নিলয় ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব মিয়া।
এর আগে ‘সোহরাওয়ার্দী কলেজ পরিবার’ নামে ফেসবুক গ্রুপে পতাকা অঙ্কনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী এই উদ্যোগকে সমর্থন জানায় এবং সবাই মিলে এটি বাস্তবায়ন করে।
শিক্ষার্থীরা শুধু পতাকা আঁকেনি, বরং প্রতিটির ওপর প্রতীকী বার্তা লিখে দিয়েছে। ইসরায়েলের পতাকায় লেখা হয় ‘অবৈধ সন্তান’—কারণ, শিক্ষার্থীদের মতে, এটি অন্যায়ভাবে দখল করা একটি রাষ্ট্র।
আমেরিকার পতাকায় লেখা হয় ‘বাপ’—কারণ, তারা মনে করে আমেরিকা সবসময় ইসরায়েলের পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং যুদ্ধকে উসকে দিচ্ছে।
ভারতের পতাকায় লেখা হয় ‘দালাল’—শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, ভারত ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিরব সমর্থন দিয়ে এবং নিজ দেশেও মুসলিম নিপীড়ন চালিয়ে ইসরায়েল ও আমেরিকার দালালি করছে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম বলেন, “গাজায় যেভাবে ইসরায়েল নারী-শিশু হত্যা করছে, তা কেবল ফিলিস্তিনের নয়, গোটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমেরিকা তার অস্ত্র ও সমর্থন দিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, আর ভারত মুসলিমদের বিরুদ্ধে একই রকম সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই তিন দেশের পতাকাকে পায়ের নিচে রেখে বুঝিয়ে দিতে চাই, দখলদার ও হত্যাকারীদের প্রতি আমাদের কোনো সম্মান নেই।”
তিনি আরও বলেন, "এই পতাকাগুলো প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীর পায়ের নিচে পড়বে, এবং এভাবেই আমরা আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করব।"
প্রতিবাদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই শিক্ষার্থীদের এই সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, “এই প্রতিবাদ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাই, ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের সমর্থন অটুট।”
বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলেও দখলদার রাষ্ট্রটি বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের এই প্রতীকী প্রতিবাদ দেখিয়ে দিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য বড় মঞ্চের প্রয়োজন নেই—সচেতনতা ও দৃঢ় সংকল্পই যথেষ্ট।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :