পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) পরিবহন শাখার ড্রাইভার মো. বেলাল হোসেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং বেপরোয়া বাস চালনার অভিযোগে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় ড্রাইভার বেলাল দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের প্রতি দম্ভ ও কর্তৃত্বমূলক আচরণ করে আসছেন বলে অভিযোগ অনেকের। অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে তার আচরণ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সর্বশেষ ঘটনা ঘটে ১২ এপ্রিল (শনিবার) কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার দিন। বরিশাল ক্যাম্পাস থেকে মূল ক্যাম্পাসে বিশেষ বাস সার্ভিসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাসে ওঠার পরই তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেন, “স্টাফদের বাসে শিক্ষার্থীরা থাকলে আমি বাস চালাব না।” পরে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে তিনি বাস চালাতে রাজি হন, তবে শিক্ষার্থীদের বসতে দেননি। এমনকি ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সঙ্গেও হেলপার ও চালকের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
এক শিক্ষার্থী জানান, “একজন জুনিয়র শিক্ষার্থী স্টলের ব্যানার হাতে বাসে উঠতে গেলে হঠাৎ বাস চালু করে দেন বেলাল, ফলে সে পড়ে গিয়ে বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে যাচ্ছিল।” প্রতিবাদ জানালে ড্রাইভার বেলাল গালিগালাজ করেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে হুমকিও দেন।
এছাড়া, যাত্রাপথে একাধিক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীকে বাসে তুলতে শিক্ষার্থীরা অনুরোধ জানালেও তিনি বাস থামাননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
ভাড়া নিয়ে অনিয়ম:
ডিভিএম ডিসিপ্লিনের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম মোর্শেদ দিপু জানান, “হেলপার ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন, অথচ কোনো টিকিট দেননি।” পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও এমন কোনো আদেশের কথা অস্বীকার করেছেন।
এছাড়াও, বেলালের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসের গেটে রেখেই বাস চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থী আহত হন। তার অভিভাবক উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ করলে, তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন ড্রাইভার বেলাল ও হেলপার।
বেলাল হোসেন বলেন, “আমি পরিবহন কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী গাড়ি চালিয়েছি। উল্টো শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, তখনই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। এজন্য বলেছিলাম, গাড়ি চালাব না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি একজন সিনিয়র ড্রাইভার, সবাই আমাকে সম্মান করে। তবে মাথা গরম করে যা করেছি, সেটা আমার ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন হবে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বেলালের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ শুনেছি। আমি পরিবহন শাখার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো। শিক্ষার্থীরা যেন লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেয়। এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিক্ষার্থীরা দ্রুত পদক্ষেপ, জবাবদিহিতা এবং নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবহন সেবার দাবি জানিয়েছেন।
একুশে সংবাদ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :