ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে জন্মাষ্টমীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পুরাতন ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুরশাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রা রূপ নেয় মানব মিছিলে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই মন্ত্রে রেওয়াজ চালু রয়েছে। এখানে শারদীয় দুর্গোৎসব, দীপাবলী উৎসব থেকে শুরু করে ঈদ-পার্বণ সকল ক্ষেত্রে এক সার্বজনিন বার্তা বহন করে।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। হিন্দু শাস্ত্র মতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন। রোহিণী নক্ষত্রে মথুরায় মাঝরাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ।
কৃষ্ণ লীলায় মাতোয়ারা নন এমন ব্যক্তির সংখ্যা কমই। জন্মাষ্টমীর দিনে মন্দির ও ঘরে ঘরে কৃষ্ণ জন্মতিথি ও পুজোর বিশেষ আয়োজন করা হয়। সাধারণত বৈষ্ণবদের কাছে এই উৎসবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাত ১২টা নাগাদ বিধি-আচার মেনে কৃষ্ণের পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
কিন্তু মথুরা-বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিনটি জাঁকজমক করে পালন করা হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার মতে প্রতি বছর ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় জন্মাষ্টমী উৎসব। এই দিনেই শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলেই মনে করা হয়। দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হিন্দুধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথিতে আনন্দ ছিল বর্ণময়। এই আয়োজনের প্রাণের উচ্ছাসে ভেসেছে কৃষ্ণভক্তরা।
বাদ্যযন্ত্রের তালে নেচে-গেয়ে রাজপথে নান্দনিকতা ছড়িয়ে উৎসবকে আরও বর্ণময় করে তোলে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের প্রতিটি প্রান্তরে বিভিন্ন মন্দির ও ঘরে ঘরে পূজা-অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়।
ষোড়শ উপচারে পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনার আয়োজন করা হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে কৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্কে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ১০টি নির্দেশনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে।
শ্রীকৃষ্ণের রথ, রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, কংসের জেলখানা, রাম-সীতার লব-কুশ সহ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা অংশের আদলে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ভক্তরা। এর আগে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন উপলক্ষ্যে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ রাজধানীর পলাশীর মোড়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথের সভাপতিত্বে সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :