দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুখবর নেই। যদিও শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক উন্নয়ন দৃশ্যমান। তারপরও বড় ধরণের যে কাজটি বাকী রয়ে গেছে, তা হলো পানীয়জলের চরম সংকট! লবনাক্ত পানির কারণে অনেক নারী অল্পবয়সে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। জীবন রক্ষায় কেউ কেউ জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। এমন গা হিমকরা বক্তব্য কাঁপা গলায় তুলে ধরে উন্নয়ন সংস্থার লিডার্সের প্রধান মোহন কুমার মণ্ডল।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় উপকূল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচনী ইশতেহারে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দ্দিষ্ট অঙ্গীকার তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ।
উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স’ এবং পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক (প্রান) আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সংলাপে অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির সদস্য শেখর দত্ত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য মানবেন্দ্র দেব, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন ও সাব্বাহ আলী খান কলিন্স।
সংলাপে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল। সংলাপে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। ওই জনপদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে প্রতি অর্থ-বছরে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। নিরাপদ খাবার পানির স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আদলে ‘একটি বাড়ি একটি শেল্টার হোম’, কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করতে হবে।
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার একটা রাজনৈতিক দলের লিখিত দলিল। এবারে ইশতেহার জলবায়ু ইস্যু লিপিবদ্ধ করলে এটা বড় অর্জন হবে। যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কতটুকু ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে তাও দেখা যাবে। বিরোধী দলগুলো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারকে ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
সংলাপে উত্থাপিত দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখর দত্ত বলেন, সারাদেশের সুষম উন্নয়নই বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দীর্ঘ দিন পুরো উপকূলীয় অঞ্চল অবহেলিত ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ, সুপেয় পানি ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ইশতেহারে উপকূলের জন্য পৃথক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুশীল শুভ রায় বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে শুধুমাত্র তাদের ইশতেহার বাস্তবয়ন হয়। বিরোধী দলগুলোর ইশেতার গুরুত্ব দেওয়া না। তাই জনগণের স্বার্থে সরকারকে বিরোধীদের প্রস্তাবনাগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অঞ্চলভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে কিশোরীদের জন্ম প্রজনন স্বাস্থ্য যেভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। পরিবেশ ও প্রাকৃতিতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে। আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত মানুষ রক্ষা করতে হবে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, যে দেশে নির্বাচন হয় না, সেই দেশে ইশতেহার দিয়ে কি হবে? বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমরা জলবায়ু তহবিল আনছি।
সংলাপে মূল প্রবন্ধে মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা খুবই সীমিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের মানুষ। ভৌগোলিক অবস্থা, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দীর্ঘমেয়াদী লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থান সংকটে রয়েছে সমগ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ। জীবনের তাগিদে মানুষ তাই উপকূল ত্যাগ করছে।
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :