জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ ও জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করার দাবিতে প্রথমবারের মতো ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলন’ আয়োজন করতে যাচ্ছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে কর্মরত পরিবেশবাদী ৩২টি সংগঠন।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) সামনে রেখে আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী রোডে স্ট্যাম্পফোর্ড ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই সম্মেলনে দেশী ও বিদেশী অংশীজনদের পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের হুমকিতে থাকা সাত শতাধিক নিবন্ধিত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ নিবেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে এটাই প্রথম উদ্যোগ। এই সম্মেলনে জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের মুখ থেকে বক্তব্য শুনবো। তিনি আরো বলেন, দেশে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের কারণেই জলবায়ু সুরক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তা নয়, জনগণেরও দায় আছে। আমাদের বন আমরাই উজার করছি, উন্নত বিশ্ব এসে বন ধ্বংস করছে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে সকলকেই ভূমিকা রাখতে হবে। নয়তো নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাবো না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া অতিথি থাকবেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি ফাতিনাজ ফিরোজ, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, ইউএনডিপি-বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক প্রমুখ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার নেত্রী শারমিন মুরশিদ বলেন, পরিবেশ জলবায়ু মানবাধিকারের জায়গা ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমানে যে পরিবর্তন ঘটছে, তাতে মানুষের নূন্যতম জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনটি স্তরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সাধারণ মানুষ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরবেন। জলবায়ু সম্মেলনে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। যা নীতি নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে উপকূলীয় মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলবায়ু সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টি করে জলবায়ুর ন্যায্যতা আদায় করতে হবে।
সাংবাদিক কাওসার রহমান বলেন, উন্নত দেশগুলোর প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে বাংলাদেশ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জলবায়ু ক্ষতিপুরণ আদায় এবং কৃষি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
সংবাদ সন্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্রগুলোর সংলগ্ন জনপদ ও জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকাগুলো থেকে স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন দাবিতে জড়ো হয়ে সম্মিলিতভাবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে ও সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জলবায়ু সংবেদনশীল এলাকায় কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের ফলে স্থানীয়দের ক্ষতির পরিমান ও ভোগান্তি অভূতপূর্বভাবে চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে স্থানীয় বহু জেলে, কৃষক এবং আদিবাসী পরিবার বাস্তহারা হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের দায় আমাদের না থাকলেও, উন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির লাগামহীন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের মত ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমুহ ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবের শিকার। তাই উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো চাপ সৃষ্টি ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানাতে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এএইচ/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :