“জীবনে মনে হয় কোনো বড় পাপ করেছি, না হলে আমার নিষ্পাপ ছেলে কেন এত কষ্ট পেয়ে মারা গেল” এভাবেই ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলছিল ফরিদপুরের আবদুল হক। সৈয়দপুরের আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় বর্ষে পড়া ছেলে আবু তালহার কথা মনে করে বার বার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। তখনও তিনি তার স্ত্রীকে জানাননি যে, তার ছেলে মারা গেছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় যে চারজন মারা গেছেন, তাদের একজন আবদুল হকের ২৪ বছর বয়সী ছেলে আবু তালহা। আবদুল হকের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আবু তালহা।
ছেলের ছোটকালের গল্প, তার পছন্দের খাবার, বাবা-মা’র সাথে খুনসুটির কথা বলতে বলতে কখনো মুখে স্মিত হাসি চলে আসছিল, আবার পর মুহুর্তেই ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ফরিদপুর থেকে ঢাকায় চলে এসেছে তার পুরো পরিবার।
এখনো আবু তালহাসহ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা মারা গেছেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত না। তাদের মরদেহও পাওয়া যায়নি, পরিবারও তাদের সাথে গতকাল রাতের পর থেকে যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে আবু তালহা’র বাবা আবদুল হক বলছেন, ‘আমি অন্তর থেকে বুঝতে পারছি যে, আমার ছেলে জান্নাতের পাখি হয়ে গেছে।’
ঢাকা মেডিকেলের কাছে একটি হোটেলে ছোট ছেলের সাথে স্ত্রীকে রেখে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অপেক্ষা করছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার জন্য। আনুষ্ঠানিক খবরের অপেক্ষা করা ছাড়া আসলে উপায়ও ছিল না। আগুনে পুড়ে যাওয়া যে চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের পরিচয় ডিএনএ টেস্ট না করে খালি চোখে নিশ্চিত করা আসলে অসম্ভব। সবকটি মরদেহই ‘পুড়ে কয়লা’ হয়ে গিয়েছে বলে বলছিলেন মর্গের কর্মীরা।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :