সম্প্রতি সারা দেশে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। রাজধানী ঢাকাতেও তীব্র শীতের প্রকোপ বিরাজমান। রাত যত গভীর হয়, শীত তত বাড়ে। শীতের রাতে রাজধানীবাসী যখন বাসা বাড়িতে যেতে ব্যস্ত, তখন পথশিশু ও ছিন্নমূল মানুষ রাত্রি যাপনে ফুটপাথ খুঁজে বেড়ায়। এক গলি থেকে আরেক গলিতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় শীত থেকে বাঁচতে একটু নিরাপদ আশ্রয়।
রাজধানীর বেশির ভাগ ফুটপাতেই রাত্রি যাপন করে অসহায়, ছিন্নমূল পথশিশুরা। গ্রীষ্মকালে ফুটপাথে ঘুমানো তাদের জন্য কিছুটা সহজ হলেও শীতের সময় বেশ কষ্টকর। রোগ-বালইয়ের ভয়তো আছেই। সামান্য রাত বাড়তেই রাজধানীর মৎস্যভবন থেকে কাকরাইল তাবলীগ জামাতের মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত, পল্টন এলাকার বিভিন্ন অলিগলি সড়কের পাশে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের চারপাশে তারা রাত্রিযাপনের প্রস্তুতি নেয়। এমনই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএফ)। শুক্রবার সকালে ঢাকার কেরানিগঞ্জে অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দেখা যায়, সংগঠনটির নেতারা মৎস্য ভবন এলাকায় ঘুমিয়ে থাকা অসহায় পথ শিশু ও দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করছেন। ছিন্নমূল অসহায় এসব মানুষেরা একটি করে কম্বল পেয়েই যেন খুশিতে আত্মহারা। একেকজনের চোখে মুখে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হলো। কথা হয় পথশিশু সাজ্জাতের সঙ্গে। তিনি বলেন, দিনের বেলা এহানে-ওহানে ঘুইরা বেড়াই। রাইত হলেই চিন্তা হয়। কোনায় থাকবো, কোনায় ঘুমাবো, তার কোনো ঠিক নেই। শীতে আরও বেশি ঝামেলা অয়। যেখানে মন চায় সেইখানে ঘুমানো যায় না। এই বছর ঠাণ্ডা বেশি লাগে। তাই ঝামেলা আরও বেশি। এহন পর্যন্ত কেউ আমারে একটি কম্বল দেয় নাই। আজ এই প্ররথম স্যারেরা আমারে একটি কম্বল দিলো। আইজ খুব ভালো গুম অইবো।
সাজ্জাতের পাশেই ষাটোর্ধ এক মহিলাকে দেখা যায় প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে গায়ে কাপড় পেঁচিয়ে বসে আছেন। প্রচণ্ড শীত, তার মধ্যে আবার হালকা বাতাস। শীতে থর থর করে কাঁপছিলেন তিনি। এসএসটিএফ’র নেতারা তাকেও একটি কম্বল উপহার দেন। কম্বলটি পাওয়া মাত্র দ্রুত গায়ে জড়িয়ে নেন। রহিমা বেগম নামের এ বৃদ্ধা বলেন, আমগো নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নাই। আগে ধনীরা শীত অইলে কম্বল-টোম্বল নিয়ে আমগো কাছে আইতো। ক্ষোভের সঙ্গে রহিমা বেগম বলেন, এখন কেউ আহে না। বড়লোকরা মনে করে এখন যারা রাস্তাঘাটে থাকে, তাগো বহু মাইনসে শীতের কাপড়-চোপড় দেয়, এইটা মনে করে এখন আর কেউ আমগো কম্বল দেয় না। সরকার ভাবে দ্যাশে কোনো গরিব মানুষ নাই। তারা বড়লোকগো কথা ভাবে, আমগো কথা কি ভাবে?
শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে কথা হয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম একটি বজ্রপাত সচেতনতামূলক সংগঠন। আমাদের এই সংগঠন কৃষকের জীবন রক্ষায় কাজ করে। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই শীতের সময় সদস্যদের চাঁদায় অসহায়, পথশিশুদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও আমরা রাজধানীর পথশিশু ও অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করলাম। আমরা মধ্যরাতে যাদের কম্বল প্রয়োজন তাদেরকেই কম্বলটি দিয়েছি। কিন্তু যত মানুষের কম্বল দরকার তাদের সবাইকে আমরা দিতে পারি না। এজন্য তারা হয়তো অনেকে আমাদের ওপর অভিমান করেন। আমাদের সাধ্যতো সীমিত। আমাদেরও মন খারাপ হয় তাদেরকে কম্বল দিতে না পেরে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের বিত্তবানদের আহ্বান জানাইÑ তারা যেন সাধ্যমতো অসহায় মানুষদেরকে শীতবস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন।
সংগঠনটির এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেনÑ কার্যনির্বাহী সদস্য সাংবাদিক মোহাম্মদ আক্তার হোসেন, নূরে আলম জিকু, হোসাইন মো. সজিবুর রহমানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :