ভাষার মাসের প্রথম প্রহরে আকাশ থেকে কয়েক মিনিটের ঝরা বৃষ্টি অমর একুশে বইমেলাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বটে। তবে সন্ধ্যা থেকে পড়তে থাকা বৃষ্টি যেন কিছুটা বিড়ম্বনা নিয়ে এলো।
বিভিন্ন স্টলের প্রকাশকরা বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করা লেখক ও পাঠকরা কিছুটা বিব্রত হয়েছেন। হুড়োহুড়ি করে স্টলের ভেতর আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রাণের বইমেলার প্রথম দিন হওয়ায় তেমন একটা দর্শনার্থী দেখা যায়নি। কিন্তু যারা ছিলেন, তারা বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলেন। তবে ধুলোর উড়োউড়ি বন্ধ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিও মিলেছে মেলা প্রাঙ্গণে।
সন্ধ্যার বৃষ্টি কিছুটা হতাশ করলেও শেষ শীতের আমেজ নিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা ঘুরে দেখেছেন পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার বাংলা একাডেমি ভবনে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর মেলা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখায় ১১টি শাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মোট ১৬ জন পেয়েছেন এই পুরস্কার।
তারা হলেন: শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (যৌথভাবে কথাসাহিত্যে), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
পুরস্কার তুলে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বাংলা ভাষা মধুর। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। এরপরও বই প্রকাশ হবে। তা কখনও যাবে না। বই পড়ার আনন্দ আছে। তবে এখনকার শিক্ষার্থীরা ট্যাবে ও ল্যাপটপে বই পড়ে। আমরা সেভাবে আনন্দ পাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাষার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত। তাই প্রকাশকদের বলব, এখন থেকে বই ডিজিটালি প্রকাশ করতে হবে। এতে শুধু দেশ নয়, বিদেশেও আমাদের ভাষার বই পৌঁছাতে পারব। অন্য ভাষাভাষীর লোকজনও আমাদের বই পড়ে। পাশাপাশি অডিও ভার্সনও তৈরি করতে হবে। বই প্রকাশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। বাংলা একাডেমির একটা আলাদা পোর্টাল করে সেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী সাহিত্যের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে।’
বিদেশি ভাষা অনুবাদের বিপক্ষে অনেকে দাবি তুলেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ না হলে পৃথিবীর এত ভাষা আমরা কীভাবে জানব? কোনো দেশকে জানতে হলে, তাদের সংস্কৃতিকে জানতে হলে ভাষা অনুবাদের মাধ্যমে সহজে জানা যায়।’
তরুণ সমাজের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়তে উপজেলা পর্যায়েও বইমেলার আয়োজনের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেলায় এসে মজা নেই। ডানে-বামে-সামনে-পেছনে শুধুই নিরাপত্তা। এই বেড়াজালে আটকে থাকায় মেলায় ঘোরার স্বাধীনতাই হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোটবেলায় মেলায় আসার কথাও মনে পড়ে,’ যোগ করেন তিনি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :