উন্নত দেশগুলোতে সড়ককে মানুষের জন্য নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দম্যয় করতে বহুমাত্রিক ব্যবহারের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশেও এ উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এর পিছনে ২১নং রাস্তাকে শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য বহুমাত্রিক ব্যবহার উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার প্রায় অর্ধেক জুড়েই ফুটপাথ সহ মানুষের জন্য বসার জায়গা। আছে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, গাছপালা সহ ল্যান্ডস্কেপ। সম্পূর্ণ রঙ্গিন এই রাস্তা বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাগমে পরিপূর্ণ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক কর্মসূচী ‘ব্লুম্বার্গ ফিলানথ্রপিস ফর গ্লোবাল রোড সেফটি’ (BIGRS) এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এ কর্মসূচির উদ্যোগে বনানী এলাকায় একমুখী সড়ক চালুকরণ সহ বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৩ সালে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এ কর্মসূচির অন্যতম অংশীদার ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউটস (ডব্লিউআরআই), যারা বসবাসযোগ্য নগরী এবং আরবান ডিজাইন এর মাধ্যমে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য কাজ করে থাকে। ডিএনসিসি ও ডব্লিউআরআই যৌথভাবে এই প্রকল্পের জন্য গবেষণা শুরু করে।
গবেষণায় দেখা যায়, বিদ্যানিকেতন স্কুলের পিছনের রাস্তাটি একমুখী চলাচলের লুপ তৈরিতে কোন ভূমিকা রাখছে না। এ রাস্তার দক্ষিণ দিকের ৪টি প্লটের গাড়ি প্রবেশের জন্য ৪০ ফিট প্রশস্ত রাস্তার প্রয়োজন নেই। স্থপতি ফারজানা ইসলাম তমা’র ভাষ্যমতে, “গবেষণার সময় দেখা যায়, রাস্তার অর্ধেকরও বেশি অবৈধ পার্কিং এর দখলে। এ অবস্থায় বাচ্চারা স্কুলের টিফিন রিবতিতে খেলছে। অভিভাবকেরা রাস্তায়ই বসছে। আশেপাশের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্কুল ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে রাস্তায় খাচ্ছে। তাহলে রাস্তার বড় অংশের ব্যবহারকারী কারা? গাড়ির জন্য বানানো ৪০ ফিট এর রাস্তার পুরোটাই কি গাড়ি চলার জন্য ব্যবহার বা প্রয়োজন হচ্ছে? এরকম অনেক প্রশ্ন থেকে পাবলিক প্লেস তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়।”
২০২৩ সালের ৬ জুলাই ডিএনসিসিতে মাননীয় মেয়র আতিকুল ইসলাম-এঁর উপস্থিতিতে বনানীকে একমুখীকরণসহ ২১নং রাস্তাকে পাবলিক স্পেস হিসাবে ট্রান্সফর্ম করার প্রস্তাবনা ডিজাইনসহ উপস্থাপন করেন ডাব্লুআরআই এবং ব্লুমবার্গ এর প্রতিনিধিরা। উপস্থাপনায় ১০ ফুট এর চওড়া ফুটপাথ, ১২ ফুট এর মানুষের জন্য বসার জায়গা সাথে বাচ্চাদের ডেডিকেটেড খেলার জায়গা, গাছ লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান, বসে খাওয়ার মত কিছু অবকাঠামো, বিদ্যানিকেতন এর স্কুল এর দেয়ালকে গ্রাফিতি করার প্রস্তাবনা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য র্যাম্প নির্মাণ, গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিং প্রতিরোধে বোলার্ড প্রতিস্থাপন ইত্যাদি প্রস্তাবনা করা হয়। মাননীয় মেয়রসহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং অতঃপর ডিএনসিসি’র তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম ডিজাইন অনুসারে রাস্তাটিকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বর্তমানে রাস্তাটি মানুষের পদধ্বনিতে মুখরিত। শিশুরা নিরাপদে খেলছে, মায়েরা শিশুদের জন্য বসে অপেক্ষা করতে পারছেন, এলাকার মানুষেরা হাঁটছেন, আশেপাশের বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। সম্প্রতি “আর্ট এন্ড সৌল” এর কর্ণধার নাবিলা রহমান এর উদ্যোগে শুরু হয়েছে স্কুল ওয়াল টিতে ম্যুরাল এর কাজ। পুরো রাস্তা টিতে যেন তৈরি হয়েছে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। ভিড় করছেন সব বয়সী এবং সব শ্রেণির মানুষ। ব্যস্ত নগরী প্রথম দেখল রাস্তাও হতে পারে এতটা উৎসব মুখর, আনন্দের খোরাক।
এ ধরণের উদ্যোগ সমগ্র ঢাকায় ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে ঢাকা শহর হয়ে উঠবে শিশুবান্ধব, যা আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :