তীব্র গরমে গত কয়েক দিনে অনেক বেড়ে গেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের (এসি) বিক্রি। যদিও এটি কিনতে গিয়ে দামের আগুনে পুড়ছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রি ভালো হওয়ায় স্বস্তিতে আছেন বিক্রেতারা। তাছাড়া চাহিদার বিপরীতে বেড়ে গেছে এর দামও। আর এ দাম বাড়ার পেছনে ডিলারদের কারসাজিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
এ সবকিছুর পরও বাজারে মিলছে না পছন্দের ব্র্যান্ড ও সাইজের কাঙ্ক্ষিত এসি। অগ্রিম অর্ডার দিয়ে ফেরত যাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার মৌসুম হওয়ায় টেকনিশিয়ানরা ফিটিংয়ের জন্য চাইছেন দ্বিগুণ মজুরি। পাশাপাশি গরমে স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা ফ্যানের দামও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে ওঠেছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের বাজার।
রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এর মধ্যে অনেকেই আসছেন দাম যাচাই করতে। সচ্ছলরা নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছেন নামি-দামি এসি; আবার কেউ কিনছেন কিস্তিতে। গত দেড় বছরে ডলার-সংকট, ডলারের দরবৃদ্ধির কারণে এসির দাম বেড়েছে; প্রতিটি ১০-১৫ হাজার টাকা করে।
এদিকে তাপপ্রবাহকে পুঁজি করে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসির দাম বেড়েছে টনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর পেছনে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোর হাত নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে ডিলাররাই নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
বাজারে এসির দাম বেশি, সরবরাহও কম। দেড় টনের এসি নেই অগ্রিম অর্ডার দিয়ে নিতে হবে। এদিকে, যে গরম পড়েছে তাতে এসিটাও জরুরি। তাই তাড়াতাড়ি দুটনের একটি এসি নিয়ে নিলাম। তবে এলাকার খুচরা দোকানগুলোর চেয়ে পাইকারি দোকানে এসির দাম কিছুটা কম আছে।
বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসির চাহিদাও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর শুরু থেকেই প্রতিটি এসির দাম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে দেরি হওয়ায় পণ্য আসতে দেরি হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি তো আছেই।
‘এছাড়া গত মাসের শুরুতে যে এসির দাম ৩৫ হাজার ছিল গত ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে এখন ৩৮ হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে ক্রেতারা বেশি দামে কিনছেন। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে গিয়ে পণ্য পর্যাপ্ত থাকছে না। ফলে কিছুসংখ্যক ক্রেতা ফেরতও যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের জন্য এসি এখনও বিলাসী পণ্য, ‘আমদানিকারক পর্যাপ্ত পণ্য দিতে পারছে না। পলিসিতে যেহেতু এসি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, সেহেতু এটার এলসি করতে আমদানিকারকদের অনেক বেগ পেতে হয়। কোম্পানিগুলো চাইলেও যে লাখ লাখ ডলারের এলসি খুলবে তা পারছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এসির দাম বেড়েছে।’ চড়া দাম দিয়ে এসি কিনে তা থেকে মুনাফা করা কষ্টসাধ্য। এ দাম বাড়ানোর পেছনে ডিলারদেরও কারসাজি আছে। তারা কোটি কোটি টাকার মাল কিনে স্টক করে রেখেছেন। একটি সংকট তৈরি করে তারা আরও দাম বাড়িয়ে দেবেন।
গরমের কারণে এসির দামটা বেড়েছে। আগে এসি কম বিক্রি হতো। এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারণ, এসির চাহিদা ব্যাপকহারে বেড়েছে। এছাড়া টেকনিশিয়ানদেরও পোয়া বারো। মৌসুমের বাইরে একটা এসি ইনস্টল করতে ২ হাজার টাকা মজুরি নিতো। এখন চার সাড়ে চার হাজারেও টেকনিশিয়ান পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ এসি কিনে টেকনিশিয়ানের অভাবে লাগাতে পারছেন না।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসি বাজারের ব্যবস্থাপক গনমাধ্যমকে জানান, ‘যাদের কাছে এসি আছে তারা সেল করে কূল পাচ্ছে না। আমাদের কাছে এসি শেষ। কবে আসবে সেটাও বলতে পারছি না। তবে এটা বলতে পারি যে, অনেকেই এলসি করতে পারছে না। ব্যাংক লোনও পাচ্ছে না। পণ্য সংকটের সুযোগ হয়ত ডিলাররা নিচ্ছে।’
এদিকে গরমের উত্তাপ ছড়িয়েছে ফ্যানের বাজারেও। বেড়েছে এয়ারকুলারের দামও। এক বিক্রয়কর্মী জানান, যাদের টাকা আছে তারা এসি কিনছেন। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষরা ফ্যান কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন। যে বাজেট নিয়ে ফ্যান কিনতে আসছেন, এসে দেখেন দাম বেশি। বাজেটে না মেলায় ফেরত যাচ্ছেন অনেকে।
তিনি বলেন, ‘শনিবার যে ফ্যান ৩২০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, আজ সেটা কিনে আনছি ৩৬০০ টাকায়। ডিলাররা দাম বাড়ালে আমরা কী করবো? ৭০০ পিস ফ্যান অর্ডার করলে দিচ্ছে ১০০ পিস। ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা চাহিদা মতো ইম্পোর্ট করতে পারছে না। ফলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই ফ্যানের বাজার চড়া।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :