বাংলাদেশে এই প্রথম শব্দরোধক (শব্দদূষণ কম হবে পার্কের ভেতরে) পার্ক বানানো হয়েছে। রাজধানীর গুলশান-১, পুলিশ প্লাজার বিপরীত দিকে এই পার্কটি অবস্থিত। এর নাম শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক। এটি সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। অত্যাধুনিক ও ব্যতিক্রমী এই পার্কের চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে ১৫ ফুট উচ্চতার স্বচ্ছ কাচের দেয়াল। এর ফলে পার্কের বাহিরের প্রায় ৫০ শতাংশ শব্দ, পার্কের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। একটু সময় স্বস্তিতে কাটান পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্য উপযোগী করা হয়েছে পার্কটিকে।
পার্কটির তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। বর্তমানে পার্কের উত্তর পাশের মূল ফটকটি চালু রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই পার্কটিতে আসেন। শব্দরোধক হওয়ায়, গুলশান ছাড়াও এর আশেপাশের মানুষের একটু স্বস্তির জায়গা হয়ে উঠেছে এই স্থানটি। এখানে রয়েছে বহু প্রজাতি ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ। পাখির গুঞ্জনে, কানে আসে না কোন হর্নের শব্দ। শান্তির বাতাস সবার বুক জড়িয়ে যায়।
পার্কের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম টিলা ও এর পাশ দিয়ে বানানো হয়েছে লোহার তৈরি সাঁকো যা পার্কটিকে বহুগুণে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। পার্কে ঘুরতে আসা সকলের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা হয়েছে কাঠের বেঞ্চ ও প্রতিটি বড় গাছের চারপাশ টাইলস দিয়ে গোলাকৃতির বসার স্থান। আরামে সময় কাটাতে পারেন ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা।
জার্মানির নয়েজ ব্যারিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে এই পার্কে। এর ফলে বাইরের শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। পার্কটির এই সংস্কারকাজে ব্য়য় হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। সরজমিনে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপর ভারি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ঘুরতে আসা দর্শকরা।
পার্কটিতে আসা দর্শনার্থী তন্নি পেরেরা বলেন, ‘খুবই সুন্দর একটি পার্ক। এ ধরনের পার্ক পুরো রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হওয়া উচিত। এই তীব্র গরমে আমি যে শান্তি পাচ্ছি, তা পুরো রাজধানীবাসীর উপভোগ করা দরকার। গরমে অতিষ্ঠ আমাদের জীবন, একটু স্বস্তি পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। এ ধরনের পার্কে শিশুরা আনন্দের সাথে খেলতে পারচ্ছে। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, এই ধরনের পার্ক আরও তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক দর্শনার্থী রুমা বলেন, ‘এখানে প্রবেশ করার পর থেকে শান্তি পাচ্ছি। নেই কোনো যানবাহনের হর্নের শব্দ। শান্তির বাতাস বইছে। শরীর জুড়িয়ে গেছে, তেমন গরম লাগছে না। রাজধানীবাসীর জন্য এরকম একটি পার্ক হতে পারে স্বস্তির স্থান। ঘুরতে আসা সকলেই মুক্তি পাবেন শব্দদূষণ থেকে।’
পার্কে বিশ্রাম নেওয়া এক যুবক মোঃ রিফাত বলেন, ‘সময় পেলেই পার্কে চলে আসি। পাখির গুঞ্জন, পিওর অক্সিজেন পাই এখানে। খুব ভালো লাগে। বাহিরের এতো শব্দ, ভেতরে আসলে পাই না। আগে পার্কটিতে মাসে এক দুইবার আসতাম। কেননা পার্কটির চারপাশে ছিল লোহার তৈরি বেষ্টনী। প্রচুর শব্দ ছিল পার্কটিতে, বসা যেত না। এরকম একটি উদ্যোগ নেওয়ায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানাই।
গুলশানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পার্কটি এই এলাকার কর্মজীবীদের জন্য হয়ে উঠেছে বিশ্রামাগার। একটু সময় পেলেই চলে আসি এখানে। এসির বাতাসের চেয়ে, এই ন্যাচারাল বাতাস অনেক শান্তির। ঘুম এসে যায় চোখে। খুবই আরাম পাই। মাঝে মাঝে পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। আমার ছেলে-মেয়ে আপনমনে এখানে খেলতে পারে। তবে দুপুরে প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে পার্কটি।
পার্কের মূল ফটকের পাশে ভাসমান খাবারের দোকানদার মোঃ রাজীব হোসেন ইমন বলেন, ‘পার্কটিতে প্রায় হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসেন। সবাই প্রশংসা করে। শুনে আমাদের খুব ভালো লাগে। আগে এই প্রশংসা শুনতে পাইনি। এখানে সব ধরনের লোক আসে। কেউ হাঁটতে, কেউ খেলতে, কেউ বিশ্রাম নিতে, কেউ পড়াশোনা করতে, কেউ আড্ডা দিতে, আবার অনেকে আসেন ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘুরতে। এটি প্রশংসাযোগ্য একটি উদ্যোগ।’
বর্তমানে পার্কটির সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্বরত মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পার্কটি উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত। গুলশান সোসাইটি এখনো বুঝে পায়নি। তাই আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে গরমের জন্য দুপুরবেলায় কিছু সময় পার্কটি বন্ধ থাকে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্কটি তৈরি করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে পার্কটিকে অনেক দিন বন্ধ রাখা হয়। এখানে অবস্থানরত অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন তার জন্য দুঃখিত। এখন ভালো লাগছে। সবাই পার্কটির প্রশংসা করছে। প্রায় ৫০ শতাংশ শব্দ কম প্রবেশ করায় স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব একটি পার্কে ঘুরতে পারবেন সকলেই।
একুশে সংবাদ/বাবু/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :